February 15, 2025, 5:35 pm
মোংলা প্রতিনিধি।
শুরু হচ্ছে দুবলার চরের শুটকি মৌসুম। তাই জাল, দড়ি, নৌকা-ট্রলারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে সাগরে যেতে শুরু করেছেন উপকূলের জেলেরা। গত দুই তিনদিন ধরে উপকূলের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জেলেরা জড়ো হচ্ছেন মোংলার পশুর নদী ও বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘাষিয়াখালী আন্তর্জাতিক চ্যানেলে। এখান থেকেই বনবিভাগের পাস নিয়েই দল বেঁধে তারা রওনা হচ্ছেন সাগর পাড়ের দুবলার চরে। সাগরে এখন আর দস্যুদের উৎপাত না থাকলেও ঝড়-জলোচ্ছাসের প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি মাথায় নিয়েই শনিবার থেকেই দুবলায় যাত্রা শুরু করছেন হাজার হাজার জেলে। আর সেখানে ১লা নভেম্বর থেকে শুরু হবে শুটকির মৌসুম। বনবিভাগ জানায়, ১লা নভেম্বর থেকে বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চারটি চরে শুরু হচ্ছে শুটকি মৌসুম। চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। টানা ৫ মাস সেখানে থাকতে হবে জেলেদের। সাগর পাড়ে গড়তে হবে জেলেদের অস্থায়ী থাকার ঘর, মাছ শুকানো চাতাল ও মাঁচা। সেসব তৈরিতে ব্যবহার করা যাবেনা সুন্দরবনের কোন গাছপালা। তাই বনবিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী চরের উদ্দেশ্যে যাত্রার প্রস্তুতি নেয়া সকল জেলেদেরকে সঙ্গে নিয়েই যেতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী। আর এ সকল প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মোংলা ও রামপালসহ সংলগ্ন উপকূলের কয়েক জেলার জেলে-মহাজনেরা। জেলে-মহাজনদের ট্রলার তৈরি, মেরামত ও জাল প্রস্তুতে ব্যস্ত বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কাঠ মিস্ত্রীরাও। দুবলার এ মৌসুমকে ঘিরে কয়েক মাস আগেই বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মিস্ত্রীরা চুক্তি ভিত্তিক ট্রলার তৈরি, মেরামত ও জাল সেলাইয়ে এসেছেন উপকূলের গ্রামে গ্রামে। সকল প্রস্তুতি শেষে বনবিভাগের কাছ থেকে পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে জেলেদের নিজ নিজ এলাকা থেকে রওনা হয়ে সরাসরি যেতে হবে দুবলার চরে। যাওয়ার পথে সুন্দরবনের কোন নদী-খালে প্রবেশ ও অবস্থান করা যাবেনা। এছাড়া দুবলার চরে অবস্থানকালে সাগর ছাড়া সুন্দরবনের খালে প্রবেশ ও সেখানে মাছ ধরতে পারবেন না এ জেলেরা। মোংলা নদী ও পশুর নদীতে এসে জড়ো হওয়া পাইকগাছার জেলে বসন্ত কুমার মন্ডল ও রামপালের জেলে মিকাইল শেখ বলেন, জাল, নৌকা, খাবারদাবারসহ ঘর বাঁধার সকল সরঞ্জামাদী নিয়ে মোংলায় দুইদিন ধরে অবস্থান করছি। বনবিভাগের কাছ থেকে পাস নিয়ে দুবলায় রওনা হবো। সেখানে ৫ মাস থেকে মাছ ধরে শুটকি তৈরি করবো। তারা বলেন, কেউ শুক্রবার রাত ১২টার পর যাবেন, আবার কেউ শনিবার সকাল ও বিকেলে যাবেন। এভাবে দলে দলে জেলেরা ছুটবেন সাগরে। সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, শুটকি মৌসুমকে ঘিরে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার ১০ সহস্রাধিক জেলে সমবেত হবেন দুবলার চরে। দুবলার আলোরকোল, মাঝেরচর, শ্যালার চর ও নারকেলবাড়ীয় চরে ওই সকল জেলেরা প্রায় দুই হাজার ট্রলার নিয়ে মাছ ধরবেন গভীর সাগরে। সাগর থেকে আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাছাই করে শুটকি করবেন তারা। এ বছরও চরে জেলেদের থাকা ও শুটকি সংরক্ষণের জন্য ১ হাজার ৩০টি জেলে ঘর, ৬৩টি ডিপো ও ৯৬টি দোকানঘর স্থাপনের অনুমতি দিচ্ছেন বনবিভাগ। বনের কোন গাছপালা জেলেরা ব্যবহার করতে পারবেন না। গত শুটকির মৌসুমে দুবলার চর থেকে বনবিভাগের রাজস্ব আদায় হয়েছিল সাড়ে ৪ কোটি টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার ৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা। সাগর-সুন্দরবনে ঝড়-জলোচ্ছাসের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয় থাকলেও জেলেদের মাঝে এখন আর নেই ডাকাতের ভয়ভীতি। তাই অনেকটা স্বস্তি নিয়েই সাগরে যাচ্ছেন জেলেরা। আবহাওয়া ভাল থাকলে লাভের পাল্লা ভারী করেই মৌসুম শেষে বাড়ীতে ফিরবেন সমুদ্রজীয় এ সকল জেলে-মহাজনেরা।