December 26, 2024, 9:56 am

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
ইসলামি বিপ্লব ক্ষমতা দখল নয় – নুরুল ইসলাম বুলবুল ভালুকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিকে সকলের সহযোগিতা চাইলেন ইউএনও উৎপাদন মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবিতে সুজানগরে কৃষকদের মানববন্ধন সুজানগরের শীতার্তরা পেল ইসলামী ছাত্র শিবিরের শীতবস্ত্র  তারেক রহমান নির্দেশে মিরপুরে শীত বস্ত্র বিতরণ- সাজ্জাদুল মিরাজ কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জনগণকে হেনস্থা সময় ক্ষেপন ঘুষ-দুর্নীতির সাথে জড়িত হলেই ব্যবস্থা-আসিফ মাহমুদ নড়াইলে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ একজন গ্রেফতার পুঠিয়া-দূর্গাপুরের সাবেক সাংসদ ডা. মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা আজ খ্রীস্টধর্মালম্বীদের মহা উৎসব শুভ বড়দিন পালন ঝালকাঠিতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মা ছেলেকে কু-পিয়ে গুরুতর জ-খম
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মাতৃভাষার বিকৃতি

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মাতৃভাষার বিকৃতি

লেখক – মোঃ হায়দার আলীঃ মাদকের কারণে যুবসমাজ ধ্বাংশের পথে নিয়ে লিখার জন্য ডায়রি, কলম তথ্য, কম্পিউটার নিয়ে বসলাম এমন সময় আমার এক সুপরিচিত একটি কামিল মাদ্রসার আরবি বিভাগের অধ্যাপক মাওলানা মোঃ দুরুল হোদা ফোন করে বললেন স্যার আমাদের বাংলা ভাষার বারোটা বাজাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারকারীরা, ভাষা শহীদদের গুরুত্ব কতটা তারা কী ভাষা শহীদদের কথা ভুলে গেছেন, এব্যপারে কিছু লিখুন স্যার। এর পর বাসার জরুরী প্রয়োজনীয় কিছু কেনার জন্য বাজারে গেলাম,b বাজারে বিভন্ন পুন্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধিতে ক্রেতা সাধারণ দেশেহারা, কোন প্রকারে সংক্ষিপ্ত কেনাকাটা করে বাজার থেকে বাড়ী ফেরার পথে আমার কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে দেখা, সালাম বিনিময় হলো তারাও ফেসবুকে ভাষা বিকৃতির ব্যপারে লেখার জন্য অনুরোধ করলো, তাই বাড়ীতে এসে লিখার থিম পরিবর্তন করে ফেসবুকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার বিকৃতি সম্পর্কে মহান আল্লাহর নাম নিয়ে লিখা শুরু করলাম যা পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরার চেষ্টা মাত্র।

কিছুদিন আগে দেশে বিদেশে আমরা আন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস গর্বের সাথে পালন করি, আমরা কোটি কোটি বাংলাদেশী মানুষ বাংলা ভাষাকে নিয়ে নিঃসন্ধেহে গর্বববোধ করি । এইগর্বের অংশীদারও আছে। বলছি ভারতে যারা বাংলা ভাষায় কথা বলে। এপার বাংলা ওপার বাংলা বলে একটি কথা আছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এপার ওপার থাকেনা। তার অন্যতম একটি উদাহরন হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এবং একুশে ফেব্রুয়ারি পালন।

ইংরেজী সনে ১৯৫২ সালের পূর্বে কত একুশ ফেব্রুয়ারি নীরবে চলে গেছে। কিন্তু এই নীরবতা ভেঙ্গে দিয়ে ১৯৫২ সালে রচিত হলো এক কালজয়ী ইতিহাস। সেই সব দামাল ছেলেদের যৌক্তিক প্রানত্যাগে আজ আমরা পেয়েছি একটি গৌরবের ইতিহাস।

বর্তমান পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ৭৫০ কোটির উপরে । এই ৭৫০ কোটি মানুষের মধ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলে এমন মানুষের সংখ্যা ৩০ কোটির উপরে। সংখ্যার বিচারে যদি কম মনে হয় তবে এই ৩০ কোটি মানুষের মুখের ভাষার যে ঐতিহাসিক গর্ব রয়েছে নিঃসন্ধেহে তা অন্যদের পিছনে ফেলে দেবে। আমরা বর্তমানে এমন অবস্থানে রয়েছি যে, ভাষা আন্দোলনের নীতিগত বিচারে সবাই অপরাধী। তবে এই অপরাধ শুধু মূল্যবোধের।

মোদের গরব মোদের আশা/আ মরি বাংলা ভাষা! তোমার কোলে তোমার বোলে /কতই শান্তি ভালবাসা! কি যাদু বাংলা গানে! গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে/গেয়ে গান নাচে বাউল/ গান গেয়ে ধান কাটে চাষা। অতুল প্রসাদ সেন, তিনি ভাষা আন্দোলন দেখে যেতে পারেন নি। তিনি যদি কোনো ভাবে ভাষা আন্দোলনের কথা জানতে পারেন তবে নিশ্চই গর্ববোধ করবেন। ভাষার প্রতি কি রকমের ভালোবাসা থাকলে এই রকম একটি কবিতা লিখা সম্ভব!

আমরা এতো আধুনিক হয়েছি যে, বাংলা ইংরেজী একত্রে ভর্তা বানিয়ে কথা বলতে পারলে তৃপ্তি পাই এবং নিজেক আধুনিক মনে করি। বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে স্টাইল করে জগাখিচুড়ি মার্কা কথা বলতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে হয়। এতে শুধু ভাষার সৌন্দর্যই নষ্ট হয় না, বরং ভাষাকে অসম্মান করা হয়। কিছু আধুনিক বাংলা নাটকে দেখা যায় কিভাবে ভাষার বিকৃতি করে নতুন স্টাইলের প্রচার করা হচ্ছে। অনেকেই এই বিষয়টি উপস্থাপন করতে বলেন বাংলিশ ভাষা। এই বাংলিশ ভাষার প্রভাব দর্শকের উপর বিরাজমান।ভাষার বিকৃতি ব্যাপারে কোনো যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছা উচিত।

আগামী পঞ্চাশ বছর পর বাংলা ভাষার কি অবস্থা হবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা উচিত।
বর্তমানে ভাষার যে অবস্থা যদি, রফিক শফিক জব্বার সালাম বরকত সহ যারা শহীদ হয়েছেন তারা যদি জানতে পারেন তাহলে অবশ্যই আফসোস করবেন। প্রযুক্তিগত অবদানে ভাষা এবং গানের সীমারেখা পাল্টে গেছে। হিন্দি-ইংরেজী-বাংলা গান সব এখন সবার মুখে মুখে।

আমার চোখে বর্তমান সময়ের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে – একটানা বাংলা ভাষায় কথা বলতে না পারা। যদি বলা হয় – আপনি পাঁচ মিনিট বাংলা ভাষায় কথা বলুন, শর্ত একটি ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করা যাবেনা। আপনি কতটুকু পারবেন? একটু কঠিন মনে হবে না’কি অনেক কঠিন মনে হবে। আমার কাছে তা অনেক কঠিন। তবে যদি গরুর রচনা বলি তবে তা অন্য কথা।

বর্তমান আধুনিক সভ্যতায় আমরা স্বাধীনভাবে
ভাষাজ্ঞান অর্জন করবো। বাংলা-ইংরেজী-হিন্দি- তুর্কি-স্প্যানিশ কোনো সমস্যা নেই। আমরা গান গাইবো গান শুনবো কোনো সমস্যা নেই।

কিন্তু একটি কথা সর্বদা মাথায় রাখা উচিত কোনো ভাবে যেন আমরা আমাদের ইতিহাসকে অসম্মান না করি। আমাদের কৃতকার্য যেন কোনো ভাবেই অমর্যাদাবান না হয়। ইদানীং নতুন এক বাংলা ভাষার খোঁজ মিলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বদৌলতে। সেই ভাষা সম্পর্কে আসছি একটু পরে। তারুণ্য মানেই মনের মাঝে বইবে একরাশ উচ্ছাস-উদ্দীপনা। তাদের স্বভাবসুলভ আচরণে থাকবে নতুন কোনো সৃষ্টির নেশা। গঠনমূলক কোনো কাজের বাসনা নেই যে তরুণের মনে তাকে এক প্রকার মানসিক প্রতিবন্ধী বললে খুব বেশি অত্যুক্তি হবে না। তারুণ্য মানেই সমাজের প্রাণ। সৃজনশীল কাজের জন্য তারাই একদিন দেশের জন্য বয়ে আনে সম্মান।
এই তরুণরাই যদি আবার তাদের মেধা ভিন্ন খাতে প্রয়োগ করেন তা যেমন হয় নিজের জন্য আত্মঘাতী তেমনি সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য হবে মহাব্যাধি।

আজকের তারুণ্য আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক। এই ভাবী রাষ্ট্র নায়কদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রতিনিয়ত যদি ভাষার বিকৃতি ঘটে তাহলে সমাজ সংসারের জন্য তা হবে মহামারী। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনকারী বা দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করা তরুণ সমাজ আজকাল আনাড়ি ফেসবুক ব্যবহারকারী বা মূর্খ-অর্ধ শিক্ষিতদের ব্যঙ্গ করতে গিয়ে এখন তারা নিজেরাই উপহাসের পাত্রে পরিণত হতে চলেছে। তারা বেশ আনন্দ চিত্তে মজা করেই লিখে থাকে ফডু, খিচ্চা, মঞ্চায়, গিবনে, হপে, খোচায়, খিচাইছে এমন সব উদ্ভট শব্দ স্ট্যাটাস-কমেন্টে থাকে প্রায় নিয়মিত, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধরেই নেবে এটাও ভাষা বাংলা।

আজকের উচ্ছাসিত তারুণ্য বুঝতেই পারছে না যে, এটা কতটা ভয়াবহ কুৎসিত রূপ ধারণ করবে। বড়দের হাতে ক্যামেরা দেখে যদি শিশুরা বলে ওঠে মামা মামা দু-চারটা ফডু খিচ্চা দাও বা চাচ্চু চুইংগাম হপে তখন শুনতে কেমন লাগবে? তাই এখনি প্রয়োজন সবার সচেতনতা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তারা নিশ্চয়ই এরকম জঘন্যভাবে ভাষার বিকৃতি ঘটুক তা চাননি। পৃথিবীর বুকে একমাত্র বাংলাদেশের মানুষই তার মায়ের ভাষা বাংলার জন্য দিয়েছেন প্রাণ। ঝরিয়ে রক্ত সুতরাং ভাষার ইতিহাস আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আমরা যেখানেই লিখি বা বলি না কেন, অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ভাষার যেন বিকৃতি না ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী অনেক শিক্ষার্থী বসে চায়ের দোকানে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী চায়ের দোকানে চলে তাদের আড্ডা। এমন সময় রাইহান তার আরেক বন্ধুকে ডাকলো- ‘কি মাম্মা কই যাও, ভালাচ্ছ তুমি! আইজকাল তো দেহি কোনো খুঁজ টুঁজ নাও না’। এর পাশেই বসা ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক।
শিক্ষক কথাগুলো শুনলেন। কাছে ডাকলেন রাইহানসহ সবাইকে। ভাষা আন্দোলনে তাদের মতো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অবদানের কথা বললেন। শিক্ষকের ভাষায়,’আজ যেখানে তোমরা মানুষকে বিকৃত ভাষা ব্যবহার থেকে বিরত রাখবে সেখানে তোমরাই এমন ভাষা ব্যবহার করছো! এটা উচিৎ নয়।’
শুধু রাইহানরা নয়। বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অধিক ব্যবহারের ফলে বাংলা ভাষাকে বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, হালের ফ্যাশন হিসেবে ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করতে গিয়ে প্রমিত বাংলাকে বিকৃত করা হচ্ছে।

ভিনদেশি শব্দের একটু একটু আগ্রাসনে ব্যবহারিক ভাষা থেকে প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে অনেক বাংলা শব্দ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলা ভাষায় অদ্ভুত সব শব্দ ঢুকছে। ফেসবুক ও ব্লগে মজার ছলে কথিত নতুন শব্দের ব্যবহারে দূষণ ঘটছে বাংলা ভাষায়।
ফেসবুকে এমন বিকৃত বাংলা শব্দ আর বাক্যের ব্যবহার হচ্ছে হরহামেশাই। বন্ধুরা হয়েছে ফ্রান্স, খারাপ হয়েছে খ্রাপ, হবের বদলে হপ্পে। আর মন চায়কে লেখা হচ্ছে মুঞ্চায়! রোজ ফেসবুকে লেখা হচ্ছে এমন অদ্ভূতসব শব্দ। মজার ছলে এসব নয়া শব্দের ব্যবহার করা হলেও, একরকম অভ্যাসে পরিনত হয়েছে অনেকেরই। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মাঝে। ফলে ভাষার এমন যাচ্ছেতাই চর্চা দূষণ ঘটাচ্ছে মূল বাংলা ভাষার।

তরুণেরা এখন যে শব্দ ব্যবহার করছে ব্লগে বা ফেসবুক, টুইটারে তা অনেক সময় মূল শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। এটা দেখা যায় বিভিন্ন পোস্ট লেখা, ইনবক্সের বার্তা আদান-প্রদান, মন্তব্য করা বা ছবির শিরোনাম দেওয়ার সময় এবং অবশ্যই ইংরেজি বর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এখানে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। মূল শব্দ Love কে Luv, Come কে Cum, Take care কে TC, Why কে Y, Thanks কে Tnx, You কে U, O my god কে OMG ইত্যাদি লেখা হয়। এটি শুধু বাংলাদেশি তরুণেরা করে তা নয়, বিশ্বব্যাপী সব দেশের তরুণদের মধ্যে এই প্রবণতা রয়েছে।
এ তো গেলো ইংরেজি ভাষা ব্যবহার। বাংলার কী অবস্থা? বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় এখন বাংলা ভাষার একচ্ছত্র আধিপত্য। এদিক থেকে তরুণ প্রজন্ম সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এছাড়া ভার্চুয়াল জগত্ থেকে যেন ‘ছ’ নামের বর্ণটি হারাতে বসেছে। বলছে হচ্ছে ‘বলসে’, খাইতেছেকে—খাইতাসে, আইছেকে আইসে, যাইতেছে—যাইতাসে। এরপর রয়েছে শব্দের সংক্ষিপ্তকরণ করতে গিয়ে বিকৃতি। ‘মন চায়’ লেখা হয় ‘মুঞ্চায়’, আমারে কে লেখা হয় ‘আম্রে’। এছাড়া পোস্ট করা বা লেখাকে পোস্টানো, ব্লগ লেখাকে ব্লগানো, প্লাসকে পিলাস ইত্যাদি তো আছেই। আর ব্লগে বাংলাভাষায় গালিগালাজের বন্যা বয়ে যায় যেটা আসলে খুবই হতাশাজনক।

ভাষা বিকৃতির সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে ফেসবুক। এখানে ভাষার বিকৃতি ছাড়াও রয়েছে নানা শব্দের অপপ্রয়োগ। ফেসবুকের বাংলা লেখা থেকে যেন চন্দ্রবিন্দু উঠেই যাচ্ছে। বাংলাদেশে সোস্যাল মিডিয়ায় আরেক ধরনের ভাষা ব্যবহার করা হয়। এটি হচ্ছে ইংরেজি বর্ণে বাংলা লেখা। যেটা নতুন প্রজন্মের কাছে ‘বাংলিশ’ নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে বিকৃত ও হাস্যকর করা হচ্ছে।
কেন এসব শব্দের ব্যবহার? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষজ্ঞ একজন অধ্যাপক বলছেন, অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বাংলা ভাষার আলাদা বৈশিষ্ট্য ও নিজস্বতা থাকার কারণে সামাজিক মাধ্যমে মানুষ যে যার মতো বাংলা ভাষাকে উপস্থাপন করে।

তরুণদের নিয়ে কাজ করা সংগঠকদের মতে, কথিত ফ্যাশন হিসেবে বানানগুলো বিকৃত না করে সচেতনভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলা ভাষার ব্যবহার সম্ভব।
তারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলার মর্যাদা রক্ষায় যেমন তরুণদের সচেতন থাকতে হবে, তেমনি তাদের সচেতন করতে উদ্যোগ নিতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকেও।

বিশ্লেষকরা বলছেন- ভাষার মর্যাদার প্রতি ঔদাসিন্য আর ভিনদেশী শব্দের একটু-একটু আগ্রাসনে, মুখ থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে আপন বর্ণমালা। যা এরইমধ্যে এদেশের মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে ভাষা-সংস্কৃতির রক্ষার দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের যুক্তি হলো, ভাষায় আরোপিত উপাদানগুলো দিনশেষে ঝরে পড়বে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শহীদদের ঋণ শোধ করতে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার না হওয়ায় হতাশ ভাষাসংগ্রামীরাও। বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়াতে সরকারের নীতিমালা প্রয়োজন।
বিশ্বে প্রতিটি মানুষেরই মাতৃভাষার প্রতি বিশেষ প্রীতি আছে। তবে ভাষার মর্যাদা রক্ষায় জীবন দিয়েছে বাঙালিরাই।
৫২’র ভাষা আন্দোলনই স্বাধীনতা আন্দোলনসহ এর আগ পর্যন্ত বাঙালির সকল আন্দোলনে প্রেরণা জুগিয়েছে। তবে যে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বাঙালি রক্ত দিয়েছে, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সবক্ষেত্রে সে ভাষার ব্যবহার এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বাংলার ব্যবহার থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়, ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরগুলোতে বাংলা ভাষার ব্যবহার একেবারেই কম। বেশিরভাগ বই ইংরেজিতে হওয়ায় বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরাও ইংরেজিতে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন। উচ্চশিক্ষাসহ জীবনের সকল স্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন না হলে জাতির সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া বাধাগ্রস্থ হবে বলে মনে করেন ভাষাসংগ্রামীরা।
তারুণ্যের উদ্দীপনায় সোস্যাল মিডিয়ায় যে নতুন সমাজের জন্ম হয়েছে সেটিকে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেন নিজের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ভাষা, সামাজিক শৃঙ্খলা এবং দেশের বৃহত্তর কল্যাণকে বিকৃত বা ক্ষতিগ্রস্ত না করতে পারে লক্ষ রাখতে হবে সেদিকে। আধুনিক সভ্যতার পথ ধরে আমরা যত দূর চলে যাইনা কেন, আমাদের ঐতিহাসিক তৃপ্তি যেন বুকে লালন করি।
মনে রাখা উচিত-
আমাদের আছে গর্বের ইতিহাস
আমরা বাংলাভাষী।
আর একটি কথা
আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালবাসি।

লেখক : মোঃ হায়দার আলী
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD