December 6, 2024, 10:32 pm
আরিফ রববানী ময়মনসিংহ।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে দুর্ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেট ফেঁটে রাস্তায় জন্ম নেওয়া শিশুটির দায়িত্ব নিয়েছেন জেলা প্রশাসক এনামুল হক।
শনিবার (১৬ জুলাই) ময়মনসিংহের ত্রিশালে কোর্ট ভবন এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের পেটে ট্রাকের চাপে শিশুটি প্রসব হলে প্রথমে তাকে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ময়মনসিংহ নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন শিশুর মা-বাবা ও ৬ বছর বয়সী বোন। এতে একই পরিবারের তিন জন নিহত হয়েছেন, নিহতরা স্বামী স্ত্রী এবং তাদের ছয় বছরের এক কন্যা। এদিকে, দুর্ঘটনায় নিহত নারী ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, পরে দু্র্ঘটনার সময় পেটে মারাত্মক চাপ পড়লে সেই নারী মারা গেলেও তার শিশু প্রসব হয়ে যায়, এই নবজাতক শিশুটিও আহত হয়েছে, তার হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ডান হাতের হাড় ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তার হাতে প্লাস্টার করা হয়েছে। শনিবার ওই দুর্ঘটনায় মা-বাবা ও বোনকে হারিয়েছে শিশুটি। স্বজনদের ভাষ্য, চিকিৎসার প্রয়োজন ও চিকিৎসকদের পরামর্শে তারা বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন।
নবজাতকের বাবার বন্ধু মো. শাহজাহান জানান, বিকেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে ভিড় দেখে তারা নবজাতককে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে কমিউনিটি বেজড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে হাতের প্লাস্টার করানোর জন্য নগরের বেসরকারি লাবিব প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে আবার কমিউনিটি বেজড হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এরপর হাতে প্লাস্টার করিয়ে আবার তাকে লাবিব প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।
কমিউনিটি বেজড হাসপাতালের চিকিৎসক জান্নাতুল শিলা সাংবাদিকদেরকে বলেন, শিশুটির ডান হাতের হাড় ভেঙে গেছে, সেখানে প্লাস্টার করা হয়েছে। তাছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই।
সুত্র মতে জানা গেছে- ত্রিশাল উপজেলার রায়মনি গ্রামের ফকির বাড়ির মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০), তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্না আক্তার (৩০) ও মেয়ে সানজিদা আক্তার (৬)। রত্না আক্তারের গর্ভে ছিল কন্যা শিশুটি।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকেই ট্রাকের চালক পলাতক, তবে ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
শনিবার দুপুরে ত্রিশালে সড়ক দূর্ঘটনায় বাবা বোন ও গর্ভবর্তী মা নিহতের পর নবজাতকের জন্ম নেয়া শিশু অলৌকিক ভাবে বেঁচে যায় যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সন্ধ্যায় নগরীর চরপাড়া লাবীব হাসপাতালে কন্যাশিশুটিকে দেখতে যান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক। সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবা বোনকে হারিয়ে অসহায় হয়ে যাওয়া শিশুটির চিকিৎসা সহ বড় হওয়া পর্যন্ত সার্বিক দায়িত্ব নিয়ে জনতার প্রশংসায় ভাসছেন জেলা প্রশাসক এনামুল হক।
রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নবজাতক শিশুট আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সিবিএমবির সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।