Category: কৃষি

  • ভেজাল বীজে ক্ষতিগ্রস্ত শৈলকুপার পেঁয়াজ চাষিদের বিক্ষোভ

    ভেজাল বীজে ক্ষতিগ্রস্ত শৈলকুপার পেঁয়াজ চাষিদের বিক্ষোভ

    ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
    ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ভেজাল পেঁয়াজ বীজ কিনে ক্ষতিগ্রস্ত পেঁয়াজ চাষিরা প্রতারক বীজ ব্যবসায়ীদের শাস্তি ও ক্ষতিপুরনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। রোববার দুপুরে শৈলকুপা থানা ও উপজেলা কৃষি অফিসের সামনে ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক চাষি বিক্ষোভ করে। তাদের অভিযোগ অসাধু বীজ ব্যবসায়ীরা উচ্চফলনশীল বলে ভেজাল পেঁয়াজ বীজ বিক্রি করেছেন। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বীজ চার হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা দরে তারা কিনেছেন। এই ভেজাল ও নি¤œমানের বীজ কিনে কৃষকরা চারা তৈরি করে ক্ষেতে লাগানোর পর চারা মরে গেছে। এতে চাষিদের বিঘা প্রতি ২০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা করে ক্ষতি হয়েছে। শৈলকুপা উপজেলার মহিষাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক বিজন বিশ^াস বলেন, আমি ৭ হাজার টাকা কেজি করে ১২ কেজি বীজ কিনেছি। আমাকে বলা হয়েছে ভারতীয় লালতীর জাতের পেয়াজ। কিন্তু পেঁয়াজ লাগানোর পর গাছ মরে গেছে। আমরা খুব ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। ধাওড়া গ্রামের মোকাদ্দেস আলী বলেন, আমি ৩ কেজি বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছে। শৈলকুপা উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের আশরাফ মাস্টার, জাহাঙ্গীর হোসেন, রাজু আহম্মেদসহ বেশ কয়েকজন কৃষকদের সাথে এই প্রতারণা করেছে। আমরা এই প্রতারকদের শাস্তি ও আমাদের ক্ষতিপুরণ দাবী করছি। মোকাদ্দেস আরও বলেন, চাষের সময় পার হয়ে গেছে। এখন নতুন করে চারা তৈরি করে চাষ সম্ভব নয়। প্রতারক বীজ ব্যসায়ীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান খান বলেন, কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতারণার বিষয় সঠিক হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    ঝিনাইদহ
    আতিকুর রহমান।।

  • সরিষা চাষে বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে-কৃষিমন্ত্রী

    সরিষা চাষে বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে-কৃষিমন্ত্রী

    হাফিজুর রহমান.টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি::
    কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ভোজ্যতেলের চাহিদার শতকরা ৯০ ভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এতে বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। এ অবস্থায়, দেশে ৫০ ভাগ তেল উৎপাদনের মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমাতে তিন বছর মেয়াদি রোডম্যাপ আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। প্রথম বছরেই এবার সারা দেশে দ্বিগুণ পরিমাণ সরিষা চাষ হয়েছে। সরিষা চাষে বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে এবং আগামী তিন বছরের মধ্যেই আমরা বছরে ভোজ্যতেল আমদানিতে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারব।

    রবিবার (১৫ জানুয়ারী২৩)ইং সকালে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দিতে উন্নত জাতের বারি সরিষা ১৮ জাতের মাঠ পরিদর্শনকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

    মন্ত্রী বলেন, শুধু সরিষার আবাদ বৃদ্ধিই নয়, এর সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে মৌচাষ ও মধুর উৎপাদন। অন্যদিকে, আমন ও বোরোর মধ্যবর্তী সময়ে পতিত জমিতে সরিষার আবাদ হওয়ায় ধানের উৎপাদন কমছে না, একইসঙ্গে কৃষকেরা অতিরিক্ত ফসল হিসেবে এই সরিষা পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। সরিষা চাষীরা যাতে সরিষার ভালো দাম পান, এ বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।

    এসময় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমিনা খাতুন, টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহসানুল বাশার, অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মাহমুদুল হাসান, ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাকিয়া ও সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কৃষিকর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন,উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ, জাহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক আনছার আলী, হাফিজুর রহমান, কৃষক মিজানুর রহমান ও ছোহরাব আলীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

  • নাচোলে মাঠ ভরা সরিষার  সমারহো কৃষকের মুখে হাসি

    নাচোলে মাঠ ভরা সরিষার সমারহো কৃষকের মুখে হাসি

    মোঃ মনিরুল ইসলাম,নাচোল,
    চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
    চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠ ভরা সরিষার সমারোহ, কৃষককে মুখে হাসি। মাঠে সবুজের মাঝে ফুটে আছে হলুদ সরিষার ফুল। শীতের হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে সুবাস। মধু আহরণে ফুলে ফুলে বসছে মৌমাছি সহ বিভিন্ন জাতীর প্রজাপতিরা।

    দেখা যাচ্ছে মাঝেমধ্যে কোমলমতি শিশু সহ বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষরাও হলুদ ফুলের মধ্যে দাঁড়িয়ে, বসে আনন্দের সাথে মনোমুগ্ধকর হয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকছেন।

    উপজেলার কামার জগদইল গ্রামের শ্রী ভজেন বর্মনের ছেলে শ্রী বিশ্বনাথ বর্মন জানান এবছর ৪বিঘা জমিতে সরিষা চাষাবাদ করেছি।
    তার মধ্যে এক বিঘি জমিতে কৃষি অফিস থেকে প্রদর্শনী দিয়েছে। ফুলগুলো বড় আকারের হয়েছে। প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমাণে ফুল ধরেছে আছে। ফলন ভালো হবে আশা করছি। সরিষা তুলে ইরি ধান লাগানো।

    কৃষ্ণপুর গ্রামের নজরুলের ছেলে আব্দুল কাদের জানান আমি ৫বিঘা জমিতে সরিষা বুনেছি, তবে মাঠের মধ্যে ভিন্ন ধরনের, সাদা ফুলের সরিষা।

    যত্ন ভালো নিয়েছি ফলনো ভালো হবে ইনশাআল্লাহ।
    এবং সময়মত সরিষা তুলে বিক্রি করে যদি ভালো দাম পাই, সেই টাকা দিয়ে ওই জমিতে আবারো ইরি, বোরো ধান চাষাবাদ করতে পারব। এবং সংসারের তেলের ঘাটতি মেটাতেও আগ্রহ করে সরিষা আবাদ করেছি।
    সরেজমিনে গিয়ে যতদুর চোখ যায় শুধু হলুদে সমারোহ, বাতাসে দোল খাচ্ছে ফুল। দেখে যেন প্রাণটা জুড়িয়ে যাচ্ছে।
    আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে
    ফলন ভালো হবে এবং বাজারে দামও ভালো আছ এ আশায় বুক বাঁধছেন কৃষকরা।

    চলতি মৌসুমে নাচোল উপজেলায রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষাবাদ দেখা গেছে এবং কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।

    উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আব্দুন নূর জানান চলতি মৌসুমে লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৮-হাজার১শত হেক্টর। কিন্তু লক্ষ্য মাত্রা ছড়িয়ে ২হাজার ৭শত ৬৫ হেক্টর জমিতে বেশি চাষাবাদ হয়েছে।
    বাংলাদেশ সরকার কৃষক বান্ধব সরকার।
    এবছর নাচোল উপজেলায় ৫হাজার ৭শত ৫০জন কৃষককে প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে।

    তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওয়াতায় ৪০জন ও রাজস্ব আওয়াতায় ১২০জন এবং ৮শত ২৩জন কৃষককে ফালোআপ প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে।
    এবছর বিঘাপ্রাতি সাড়ে ৪-থেকে ৫ মণ ফলণ হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।

  • নড়াইলে শখের বশে কুল চাষ করে ভাগ্যবদল

    নড়াইলে শখের বশে কুল চাষ করে ভাগ্যবদল

    উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:

    নড়াইলে কুল চাষে ভাগ্যবদল মো. রাকিবুল ইসলাম শখের বশে করেছেন কুলের বাগান। লিজ নেওয়া প্রায় পাঁচ একর জমিতে রোপণ করেছেন ১৫ শতাধিক কুলের চারা। কাশ্মীরি, থাই, বলসুন্দরী ও সিডলেস কুলের এ বাগান দেখতে প্রায় নিয়মিত লোকজন ভীড় করছেন। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, আলোচিত এ কুলের বাগানটি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামে।
    কৃষক মো. জহর শেখের বাড়ি লোহাগড়া উপজেলার এড়েন্দা এলাকায়। তার ছেলে মো. রাকিবুল ইসলাম (২৫) সম্প্রতি যশোর ক্যান্টলমেন্ট কলেজ থেকে স্নাত্তক শেষ করেছেন। তিনি গত বছর শখের বশে কাশ্মীরি কুল, থাই, সিডলেস ও বলসুন্দরী জাতের পাঁচ শতাধিক চারা মেহেরপুর থেকে এনে রোপণ করেন। ফলন ও লাভ ভালো হওয়ায় এ বছরও চাষ করেন কুলের।
    মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, গতবছর আমি যশোর আত্নীয় বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কুল বাগান দেখি। তখনই কুল চাষে আমার আগ্রহ বাড়ে। প্রথমে আমি তিন বিঘা জমিতে পাঁচশতাধিক বলসুন্দরী, কাশ্মীরি, থাই ও সিডলেস জাতের কুলের চারা রোপণ করি, ভয়ে ছিলাম কী হয়। তবে ভালো ফলন হওয়ায় এ বছর ১৫ শতাধিক চারা লাগিয়েছি। আমার খরচ হয়েছে ১২ লাখ টাকা। আশা করছি খরচ বাদে প্রায় ৭/৮ লাখ টাকা লাভ হবে।
    কুল বাগানে কাজ করে খেয়ে-পরে ভালো আছেন কয়েকটি পরিবার। উপজেলার অন্য বেকার যুবকরা এ ধরনের কুল বাগান করে নিজেদের ভাগ্য বদলাবেন এমনটি প্রত্যাশা রাকিবুলের। বলসুন্দরী কাশ্মিরী, থাই, নারিকেল জাতের কুল ছাড়াও বাগানে সিডলেস কুলসহ ৫ প্রকার কুল চাষ করেছেন। এসব কুল খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল হওয়ায় বাজারে চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। তার এ সাফল্যে ইতোমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এলাকার অনেক যুবক কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
    স্থানীয়দের কয়েকজন ঢাকা মেইলকে জানান, এই বাগান দেখে তারা অভিভূত। তাদের জমিতেও এই ধরনের কুল বাগান করবেন বলে জানান। এই কুল বাগানের কথা শুনে দেখতে এসেছেন তারা। আগামী বছর তারাও এখান থেকে কুলের চারা ও পরামর্শ নিয়ে কুলের চাষ করবেন বলে জানান।
    লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা আক্তার জানান, লোহাগড়া উপজেলায় কাশ্মীরি কুলসহ বিভিন্ন জাতের কুলের আবাদ হচ্ছে। আকারে বড় ও সুস্বাদু কাশ্মীরি কুলের বেশ চাহিদা রয়েছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই কুল রোপণ ও চাষের জন্য উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে।

  • নড়াইলের চারদিকে তাকালে যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার সরিষা ফুলের মৌ-মৌ সুঘ্রাণ

    নড়াইলের চারদিকে তাকালে যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার সরিষা ফুলের মৌ-মৌ সুঘ্রাণ

    উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:

    নড়াইলের চারদিকে তাকালে যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার সরিষা ফুলের মৌ-মৌ সুঘ্রাণ। নড়াইলে সরিষার ফুলে ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন
    সরিষা ফুলে ফুলে ভরে গেছে ফসলের মাঠ। চারদিকে তাকালে যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার। কখনও কখনও সরিষার খেতে বসছে পোকাখাদক বুলবুলি, ফিঙে আর শালিকের ঝাঁক। কিছুটা প্রতিকূল আবহাওয়া সত্বেও সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা এবার ছাড়িয়ে গেছে। এ বছর প্রায় নয় হাজার ২শ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে নয় হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে।
    কম সময় ও স্বল্প খরচের বিপরীতে লাভ বেশি হওয়ায় পতিত জমিতে সরিষা উৎপাদনে ঝুঁকেছেন নড়াইলের কৃষকরা। এতে কৃষকদের লাভের পাশাপাশি দেশে ভোজ্যতেলের ঘাটতি মিটবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নড়াইলের বিল অঞ্চলে চলছে সরিষা চাষের বিপ্লব। জেলার সর্বত্র মাঠে মাঠে চোখ জুড়ানো থোকা থোকা হলুদ ফুলের সমারোহ। মাঠগুলো যেন হলুদ চাদরে মোড়া। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে প্রকৃতির রূপ। পৌষের বিন্দু বিন্দু শিশির ভেজা মাঠভরা সরিষা ফুলের মৌ-মৌ সুঘ্রাণ ও সৌরভ চারদিকে। সবুজ গাছের হলুদ ফুল শিশির ভেজা শীতের সোনাঝরা রোদে ঝিকমিক করছে। যেন প্রকৃতি সেজেছে হলুদবরণ সাজে। হলুদ রঙের আভার সাথে বাতাসে ভাসছে মৌ মৌ গন্ধ। সরিষা ফুলে মৌমাছিরা গুন গুনিয়ে মধু আহরণ করছে।
    নড়াইলের যেকোনো এলাকায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সোনাঝরা ফুলের সীমাহীন মাঠ। আঁকাবাঁকা মেঠো পথ কিংবা ছোট-বড় সড়কের দুপাশে দিগন্ত হারানো হলুদের সমারোহ। হলুদে হলুদে সজ্জিত সরিষার প্রতিটি ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। এমন চোখ জুড়ানো দৃশ্য দেখতে প্রকৃতিপ্রেমীরা ভিড় করছেন, ছবি তুলছেন,ভিডিও ধারণ করে আপলোড করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এছাড়া সরিষা খেতে মধু চাষ করে বাড়তি আয়ও করছেন কৃষক। ফলে সরিষার ব্যাপক ফলনে গ্রামীণ অর্থনীতিতে দিচ্ছে সম্ভাবনার অমীয় হাতছানি।
    জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে। মৌসুমের শুরুতে নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ায় সরিষা আবাদে লক্ষমাত্রা অর্জনে ঝুঁকি দেখা দেয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠকর্মীদের তৎপরতা ও পরামর্শে কৃষকরা আবাদের লক্ষমাত্রার চেয়ে ১৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সূত্রমতে,গত বছর সরিষার বাজারমূল্য আশানুরূপ হওয়া, কৃষি প্রণোদনার আওতায় জেলার কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদাণ এবং কৃষি বিভাগের তৎপরতার কারণে কৃষকরা বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করায় লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে।
    কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-১৪ ও বারি-১৫ এবং স্থানীয় জাতের সরিষা জেলায় বেশি আবাদ হয়ে থাকে। সরিষা চাষে প্রতি বিঘা জমিতে ব্যয় হয় ৫-৬ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘা জমিতে ১২-১৫ হাজার টাকা লাভ করা যায়। সরিষা খেতে ‘জাত’ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। সরিষা খেতে মৌমাছি ও প্রজাপতির আনাগোনা বেশি হলে সহজে পরাগায়ণ হয়। এতে ফলন অনেকাংশে ভালো হয়। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘা জমিতে ৬-৭ মণ সরিষা পাওয়া যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার বাম্পার ফলনের মাধ্যমে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
    নড়াইল সদরের কাড়ার বিলের সরিষা চাষী আনজুম ইসলাম, রবীন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও শরিফুল আলম জানান,‘সাধারণত প্রতিবছর আমন ও ইরি এই দুই ফসলই আমরা কৃষকরা আবাদ করতাম। বাকি বেশিরভাগ সময় জমি পতিত পড়ে থাকত। এবার সেই পতিত জমিতে আমরা কৃষকরা সরিষার আবাদ করেছি। জমিতে সরিষা রোপণ করা থেকে শুরু করে পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত সময় লাগে দেড় থেকে দুই মাস। এছাড়া সরিষা চাষে রোপণ থেকে শুরু করে পরবর্তীতে বাড়তি তেমন কোনও খরচ নেই। শুধুমাত্র জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। এতে বাড়তি কোনও সেচ দিতে হয় না, যার ফলে সরিষা চাষে আমরা কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছি। এবছর সরিষার গাছ ভালো হয়েছে। ভালো ফুল ফুটেছে বলে ভালো ফলনও আশা করা যায়।
    নড়াইল জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, জেলার তিনটি উপজেলায় এবার ৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। ভোজ্যতেলের আমদানি কমানোর লক্ষে পরিকল্পিতভাবেই দেশে সরিষার আবাদ বাড়ানো হচ্ছে তেলের ক্ষেত্রে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার অংশ হিসেবেই সরিষার চাষ বাড়ানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরিষা চাষ করে মানুষ শুধু তেল-ই তৈরি করে না। এই সরিষা ভাঙ্গিয়ে খৈল ও গাছ থেকে ভূষি তৈরি হয় যা গরুর ভালো খাদ্য এবং ভালো জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তার মতে, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবার বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি আশা করছেন। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে।

  • পাইকগাছায় বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ শুরু

    পাইকগাছায় বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ শুরু

    ইমদাদুল হক,পাইকগাছা,খুলনা।।
    পাইকগাছায় বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ শুরু হয়েছে। আর কুল চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছে গদাইপুরের রজনীগন্ধা নার্সারীর মালিক সুকনাথ পাল।
    বাগানে সারি সারি কুলগাছ। আকারে ছোট। বড়জোর চার থেকে পাঁচ ফুট। কুলের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছগুলো। বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। এক একটি গাছ ৫ থেকে ৬ হাত লম্বা। গাছের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত থোকায় থোকায় ঝুলছে শুধু বল সুন্দরী কুল। থাই আপেল কুলের ওপরের অংশে হালকা সিঁদুর রং রয়েছে। ফলটি আকারে বড়, দেখতে ঠিক আপেলের মতো, খেতেও ঠিক আপেলের মতো সুস্বাদু। এদিকে এই ফলটি খেতে সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বেশ পরিচিতি লাভ করায় ক্রেতাদের চাহিদাও দিন দিন বেড়েছে।
    কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১০/১২টি কুলের বাগান, ক্ষেতের আইলে, বাড়ীতে, ছড়ানো ঠিটানো প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে কুল বাগান রয়েছে। জানা গেছে, সুকনাথ পাল দেড় বছর আগে উপজেলার বাঁকায় লীজ নিয়ে ৩ বিঘা জমিতে প্রায় ৩ শতাধিক বল সুন্দরী, থাই আপেল ও কাশ্মীরি কুলের গাছের চারা লাগান। কুল গাছের চারা রোপনসহ তার দেড় লাখ টাকা ব্যয় হয়। চারা রোপণ করার ৭ মাসের মাথায় চারাগুলো পরিপক্কতা পেয়েছে।বাগানের বয়স প্রায় দেড় বছর। প্রথম কুল বাগান থেকে এক লাখ দশ হাজার টাকার কুল বিক্রি হয়। দ্বিতীয় বছরে গাছে প্রচুর ফল ধরেছে। প্রতি গাছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কেজি করে বল সুন্দরী, থাই আপেল কুল ধরেছে। ইতোমধ্যে বাগান থেকে কুল বিক্রি শুরু হয়েছে। শ্রমিকরা বাগানে কুল তোলা ও বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার মতো ফল বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানায়। শুরুতে প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় পাইকারী দরে বিক্রি করেছে। তবে শেষের দিকে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে কুল বিক্রি হবে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এই বাগান থেকে ৪ লাখ টাকার বেশী কুল বিক্রি করতে পারবে তিনি আশা প্রকাশ করছেন।
    সরেজমিনে কুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ পাতার ফাঁকে লুকিয়ে রয়েছে বল সুন্দরী ও থাই আপেল কুল। যে দিকে দৃষ্টি যায় শুধু ফল আর ফল চোখে পড়ছে। বাহারী রঙের দৃষ্টি নন্দন কুল দেখলে মন কাড়ে। দেখতে অনেকটা মাঝারি সাইজের আপেলের মতো। রঙ আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। খেতে অনেক সুস্বাধু ও মিষ্টি। বল সুন্দরী ফল চাষ করে ইতিমধ্যে তিনি এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন। দূর দূরান্ত থেকে অনেক বেকার লোকজন এসে দেখছেন এবং বিষয়ে নানা পরামর্শ তার কাছ থেকে নিচ্ছেন।
    পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ উপজেলায় কিছু কিছু নার্সারীতে বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছেন। এরমধ্যে সুকনাথ পাল একজন সফল কৃষক। নতুন জাতের এই কুলের চাষ করে তিনি এলাকায় চমক কৃষ্টি করেছেন। তিনি কুল চাষে আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

    ইমদাদুল হক,
    পাইকগাছা ( খুলনা ) প্রতিনিধি।।

  • গোদাগাড়ীসহ উত্তরাঞ্চলে  মৌ চাষীরা বিশেষ কায়দায় মধু সংগ্রহ করছেন

    গোদাগাড়ীসহ উত্তরাঞ্চলে মৌ চাষীরা বিশেষ কায়দায় মধু সংগ্রহ করছেন

    মোঃ হায়দার আলী, রাজশাহীঃ হলুদের চাদরে ঢাকা রাজশাহীর গোদাগাড়ীসহ উত্তরাঞ্চলের ফসলের মাঠগুলো। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু সরিষা ফুলের হলুদ আর হলুদ। সরিষা ক্ষেতের পাশে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মৌচাষিরা। এক হাত বৌল্লা বার হাত শিং উড়ে যায় বৌল্লা ধা তিং তিং। সে বৌল্লা দিয়ে সুস্বাদু মধু সংগ্রহে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌ চাষীরা।

    এ মধু চাষ লাভজনক হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় চাষিদের। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও স্থানীয় মৌ চাষীদের পাশাপাশি পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে মৌ-খামারি গোদাগাড়ীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরিষা ফুল থেকে বিশেষ কায়দায় মধু সংগ্রহ করছে। তাদের সংগৃহীত এই রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া পাবনা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছেন।

    পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় মোট আবাদ প্রায় ২ হাজার ১শ হেক্টর। অনেক মৌচাষি মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এ বছর তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় প্রচুর পরিমাণে সরিষা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আগামী বছর বিদেশ থেকে তেল বিশেষ করে সয়াবিন তেলের আমদানি কমবে বলে আশাবাদী। সেই সাথে এইসব সরিষার জমি থেকে মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং পরাগায়নে সহায়তা হবে সরিষার ফলন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।
    উপজেলার এক জায়গাতেই প্রায় ২০০ মৌলবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এখান থেকে প্রতি সপ্তাহে ১২ মন মধু পাওয়া যায়

    গোদাগাড়ী উপজেলার একটি সূত্র জানায়, এবছর ৭ হাজর ২শ ১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। বারিত
    সরিষা-১৪ জাত ২ হাজার ৮শ ৪৫ হেক্টর, বারি সরিষা-১৫ জাত ২ হাজার ৬শ ৯০ হেক্টর, বারি সরিষা-১৭ জাত ২শ ৩৫ হেক্টর, এছাড়া বিনা সরিষা সহ স্থানীয় কিছু জাত চাষ হয়েছে। এছাড়া প্রতি সরিষা জমি থেকে বাড়তি আয় করতে অনেক বেকার যুবক এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকগণ মৌবাক্স স্থাপন করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গোদাগাড়ী সকল ধরনের কারিগরী সহযোগিতা করছে এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন। তিনি আরও বলেন, ২০ জনের মত গোদাগাড়ী উপজেলার মৌ চাষী কিছু বাহিরে থেকেও আসে। সারা বছর সরিষা আম, লিচু সরিষা থেকে প্রায় ৪/৫ টন মধু উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। এই মধু সংগ্রহ চলবে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত।

    খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে সরিষার ভালো আবাদ হয়েছে। মধু সংগ্রহের জন্য ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে কয়েকশ মৌবাক্স। সকালে মধু সংগ্রহের জন্য খোলে দেয়া হয় মৌবাক্সগুলো। মৌমাছিরা ফুলে ফুলে বসে মধু সংগ্রহ করে বাক্সের চাকে জমা করে। আর প্রতি সপ্তাহে একবার মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করেন মৌয়ালীরা। মেশিনের মাধ্যমে মধু সংরক্ষণ করে বাজারজাতের ব্যবস্থা করেন।

    সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মৌ-খামারের মালিক মো. জামাল শেখ বলেন, ২০০৩ সালে আমি বাক্স নিয়ে মৌখামার শুরু করি। বর্তমানে আমি এ কাজে ভালই লাভবান হচ্ছি। হুজরাপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার বলেন, মৌচাষী সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ ব্যবসাটি বেশ লাভ জনক। সপ্তাহের একদিন মৌ চাষিরা বিশেষ কায়দায় মধু সংগ্রহ করেন। এখানে খাঁটি মধু পাওয়া যায়। গুনগত মান ভালো হওয়ায় ৫শ’ টাকা থেকে ৬শ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আমি ৫০০ টাকা দিয়ে ১ কেজি ক্রয় করছি।

    উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতুনু সরকার বলেন, মধু সংগ্রহ লাভজনক হওয়ায় দিনে দিনে বেকার যুবকদের আগ্রহ বাড়ছে। মৌমাছি শুধু মধুই সংগ্রহ করে না, ফসলের জন্য ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের সহায়তা করে থাকে।

    মোঃ হায়দার আলী
    রাজশাহী।

  • বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ, রসের মূল্য বৃদ্ধিতেও দুঃখ কাটছে না গাছির

    বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ, রসের মূল্য বৃদ্ধিতেও দুঃখ কাটছে না গাছির

    আব্দুল আউয়াল
    বানারীপাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধি:
    নদী নালা খাল বিল সবুজের সমারোহ নিয়ে ছয় ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। প্রত্যেক ঋতুর মতো শীতও একটি বৈশিষ্ট্যমন্ডিত এদেশে একটি ঋতু। হেমন্তের প্রস্থানে শীত তার আগমনী বার্তা দেয় । কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় প্রকৃতি। কুয়াশার ফাঁকে সকাল বেলা মিষ্টি রোদের ঝলকানি দেয়। শীতের আগমনীতে টাটকা খেজুরের রসে জমে ওঠে শীতের আমেজ।অতীতে শীতকাল পড়ার সাথে সাথে প্রতি বছর খেজুরের গাছ থেকে রস কাটার ধুম পড়ে যেত গাছিদের মাঝে।প্রত্যেক বাড়িতে সকাল বেলা এক গ্লাস টাটকা খেজুরের রস খাওয়ার জন্য সবাই আগ্রহে থাকত । খেজুরের রস চুলায় জালিয়ে গুড় বানানোর গন্ধে চারদিকে মৌ মৌ করত। গৃহিণীরা খেজুরের রস দিয়ে পায়েস ,পিঠা পুলি বানানোর কাজে ব্যাস্ত সময় কাটাতেন। খেজুরের রস ডোঙায় জাল দিয়ে গুড় বানিয়ে মুড়ির মোয়া তৈরি করে খেত ছোট থেকে বয়স্করা। তবে বর্তমানে এদৃশ্য এখন আর সচরাচর কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। বরিশালের বানারীপাড়ায় সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের পূর্ব সলিয়াবাকপুর গ্রামের পথিমধ্যে দেখা যায় এক গাছে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করার জন্য গাছ কাটছেন। কথা হয় গাছি আব্দুল হাকিম শিকদারের সাথে তিনি বলেন, ৪০ বছর থেকেই আমি এই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ কাজ করার কাজে যুক্ত। এক সময় এই অঞ্চলে কয়েক হাজার গাছ ছিল কিন্তু এখন এই ওয়ার্ডে অল্প কিছু গাছ রয়েছে। আমার সাথে অনেক গাছিরা গাছ কাটত।যা থেকে শত শত হাঁড়ি রস পাওয়া যেত।ঐ সময় রস ছিল খুবই সুস্বাদু।প্রত্যেক বছরের ন্যায় এ বছর ২০টি গাছ কাটছি এখন পর্যন্ত। অনেক গাছ মরে গেছে এখন বিক্রি হচ্ছে ইট ভাটায় ও জ্বালানি কাজে। এখন খেজুর গাছ বেশি একটা নাই বললেই চলে। তিনি আরো বলেন, ৪০বছর পূর্বে হাঁড়ি প্রতি রস আট আনা থেকে দশ আনায় বিক্রি করেছি। এখন ৩০০ টাকায় হাঁড়ি বিক্রি করেও পরিবারের দুঃখ ঘোচছেনা।কারণ বর্তমানে অনেক গুলো গাছ কেটে ও রস হয় তিন থেকে চার হাড়ি ।তা থেকে মালিক পক্ষকে অর্ধেক দিয়ে তেমন কোন লাভ হয়না। আজকাল জিনিস পত্রের যে দাম তাতে আমাদের মত গরীব মানুষের কিছু হয়না । কোন মতে বেঁচে থাকা।এ ব্যাপারে বানারীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মাহফুজুল রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা হয় তিনি বলেন, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি তে আমরা খেজুর গাছ ও তালগাছকেও প্রাধান্য দিয়েছি ।করোনা থাকার কারণে এ দু বছর কাজ একটু থেমে ছিল। তবে এ বিষয়ে আমরা সব সময়েই অবগত আছি। গ্রাম বাংলার খেজুর গাছ রোপণে রাস্তার পাশে ফাঁকা জায়গায় যদি কেউ গাছ লাগাতে চায় তাহলে আমরা সহযোগিতা করব।

    আব্দুল আউয়াল
    বানারীপাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধি:

  • নড়াইলের উৎপাদিত শসা এখন  দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ

    নড়াইলের উৎপাদিত শসা এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ

    উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:

    নড়াইলের উৎপাদিত শসা এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ।
    নড়াইল সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের শসা বাজার থেকে প্রতিদিন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শসা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। এটি দেশের অন্যতম বড় শসার বাজার হিসেবে ইতোমধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছে। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে খুব ভোর থেকেই সরগরম হয়ে ওঠে এই বাজার। সদর উপজেলার প্রায় ৩০ গ্রামের কৃষক এই বাজারে শসা নিয়ে আসেন। প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার শসা বেচাকেনা হয় বলে জানিয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।
    নড়াইল ছাড়াও ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা শসা সংগ্রহ করেন। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বাজার পুরোদমে শুরু হয়ে চলে তিন থেকে চার ঘণ্টা। প্রায় তিন বছর আগে রমরমা এ শসা বাজার শুরু হয়।
    ভোরের আলো ফোটার আগেই এ বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি হয় প্রায় কোটি টাকার শসা। দরদাম করে কৃষকের কাছ থেকে শসা কিনেন পাইকাররা। এরপর তা চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে। সারা বছরই এই এলাকার অসংখ্য মৎস্য ঘেরের পাড়ে চাষ হয় শসা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ১৭৫ হেক্টর জমিতে শসা ও ক্ষীরা চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ২৫ হেক্টর বেশি। জুলাই থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত শসা লাগানোর উপযুক্ত সময়। আড়াই মাসে শসা তোলা যায়। এ শসা চলবে পুরো ডিসেম্বর মাস।
    সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে সবুজের সমারোহ। রাস্তার পাশে বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে শুধুই শসা খেত। শসা চাষ পালটে দিয়েছে সদর উপজেলার ৩০ গ্রামের চিত্র।
    মির্জাপুর গ্রামের কৃষক আদিত্য বিশ্বাস বলেন, দুই বিঘা জমিতে শসা চাষ করে তার খরচ হয় ২০ হাজার টাকা। তিন মাসে শসা বিক্রি করেছেন লক্ষাধিক টাকা। শসা চাষ করে তিন গুণ লাভ পেয়েছেন।
    শুধু আদিত্য বিশ্বাস নন, শসা চাষ করে হাজার হাজার কৃষক লাভবান হয়েছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের নড়াইলের উপপরিচালক দীপক রায় বলেন, ‘এ জেলার মাটি কৃষির জন্য খুবই উপযোগী। অন্য ফসলের তুলনায় মাছের ঘেরের পাড়ে শসা চাষ লাভজনক হওয়ায় এ জেলায় দিন দিন শসা চাষ বাড়ছে।’
    বিছালী ইউনিয়নে গড়ে ওঠা শসা বাজারের সভাপতি অ্যাড. অচীন চক্রবতী বলেন, বাজারে প্রতিদিন কোটি টাকার বেচাকেনা হয়।
    উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে।

  • পেয়ারা বাগানের পতিত জমিতে সবজি উৎপাদনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

    পেয়ারা বাগানের পতিত জমিতে সবজি উৎপাদনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

    মোঃ হায়দার আলী রাজশাহী থেকে ।। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম ফুলবাড়ি। এ গ্রামের কৃষি অনেক উন্নত, আধুনিক এবং প্রযুক্তি নির্ভর। কৃষক মো.আল্লাম হোসেন এর লাউ বাগান দেখে মন জুড়িয়ে যায়। তিনি ২ বিঘা ১০ কাঠা জমিতে পেয়ারা বাগানের পতিত জমিতে মাচা করে পটল, লাউ ও মাটিতে বাধাঁকপি চাষ শুরু করেন।

    কৃষক মোঃ আল্লাম হোসেন দীর্ঘ দিন ধরে কৃষি কাজ করেন, এবারই প্রথম উপসহকারী কৃষি অফিসার অতনু সরকার এর পরামর্শে পেয়ারা বাগানের পতিত জমির ফাঁকা যাওগায় একই জমিতে মাটিতে বাধাঁকপি, মাচায় পটল, লাউ চাষ শুরু করেন। এতে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন অনেক লোক তার এই পেয়ারা বাগানের পতিত জমিতে এতগুলো ফসল চাষ করা যায় তা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এতে করে নিরাপদ ও পুষ্টিকর টাটকা ফলমূল ও সবজির নিশ্চয়তা হয়। তিনি পেয়ারা বাগানের পতিত জমিতে বিভিন্ন ধরনের নিরাপদ সবজি চাষ শুরু করেন। তার চাষকৃত সবজিগুলোর মধ্যে বেগুন, ওল, মরিচ, লাউ উল্লেখযোগ্য।

    একদিকে যেমন তার পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরন হয় আবার প্রতিবেশিদের পুষ্টির চাহিদা তিনি পূরনে সহযোগিতা করেন । অতিরিক্ত শাক সবজি বাজারে বিক্রি করে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হন। চাষি মোঃ আল্লাম হোসেন এর ২.৫ বিঘা মাচায় উৎপাদিত লাউ,পটল,বাধাঁকপি ইতিমধ্যে ট্রাকে করে রাজধানী ঢাকার কাওরন বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। তার দেখাদেখি অন্য সব চাষিরাও আম বাগানের পতিত জমিতে লাউ,বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, পটল, পেঁয়াজ সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ শুরু করেছেন।ফলে তাদের নিজের ও পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হচ্ছে। উপজেলার পালপুর ধামিলার কৃষক মোঃ মনিরুল ইসলামের ও পালপুরের মোঃ সাহাবুদ্দিন আম বাগানের পতিত জমিতে সবজি চাষ করেছেন। কৃষি বিভাগ তাদের সব ধরণের সহযৌগিতা করছেন।
    শুধু উৎপাদন করেই শেষ নয়, নিরাপদ সবজি উৎপাদন, পতিত জমির সর্বোত্তম ব্যবহার পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সুষম সার ব্যবহার,জৈব সার, ছাই, জৈব বালাই নাশক, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ ফাঁদ ও রাসায়নিক সারের সীমিত ব্যবহারের মাধ্যমে এখানকার কৃষি এগিয়ে চলেছেন দূর্বার গতিতে।

    মোঃ হায়দার আলী
    রাজশাহী।