১৭ বছর পর রংপুরে রাজনৈতিক ময়দানে ফিরলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

খলিলুর রহমান খলিল, নিজস্ব প্রতিনিধি :
১৭ বছর পর রংপুরে বড় পরিসরে রাজনৈতিক ময়দানে ফিরলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আজ শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুর থেকে রংপুর জেলা স্কুল মাঠে ঢল নামে হাজারো মানুষের। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে গোটা মাঠ। নানা বয়সী নারী-পুরুষ, ছাত্র, শ্রমজীবী, পেশাজীবী মানুষের পদচারণায় জমে ওঠে জনসমাবেশ। তাদের কণ্ঠে ছিল পরিবর্তনের প্রত্যাশা, হাতের প্ল্যাকার্ডে ছিল দাবি ও প্রতিবাদের ভাষা।

চার দফা দাবি সামনে রেখে আয়োজিত এ বিভাগীয় জনসভাকে কেন্দ্র করে রংপুর নগরীসহ আশপাশের জেলায় সৃষ্টি হয়েছে নতুন রাজনৈতিক উত্তাপ ও আলোচনা।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদসহ নিহত ব্যক্তিদের হত্যার বিচার, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ও রাজনৈতিক সংস্কার, উত্তরাঞ্চলের বহুদিনের দাবি ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকার।

জনসভা ঘিরে সকাল থেকেই রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে মিনিবাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, রিকশা, অটোরিকশা, কাভার্ডভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাস, ট্রাকগুলো রংপুর মেডিকেল মাঠ, সিও বাজার, মর্ডান মোড়, মাহিগঞ্জ, কামাল কাছনায় রেখে পায়ে হেটে জিলা স্কুল মাঠে যাচ্ছেন মানুষেরা। এতে শহরে যানচলাচলে বিঘ্নঘটে।

বিকেল সাড়ে ৩টায় জনসভার মূল কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। প্রধান বক্তা সদ্য কারামুক্ত কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত আছেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ।

মহানগর ও জেলা জামায়াতের যৌথ আয়োজনে জনসভাস্থলে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা জায়গা ও পর্দার ব্যবস্থা। মাঠে প্রবেশের জন্য খোলা হয়েছে নতুন দুটি পথ। জনসভাকে কেন্দ্র করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন এবং বড় বড় বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। চলছে মাইকিং ও প্রচারণা। এছাড়া বিভাগজুড়ে গণসংযোগ, পোস্টারিং এবং বিশাল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাও করেছে দলটি।

আয়োজকরা জানান, জনসভা সফল করতে গঠন করা হয়েছে ১৩টি উপ-কমিটি, রয়েছে মেডিকেল ইউনিট ও ভলান্টিয়ার টিম। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম আশা প্রকাশ করে বলেন, রংপুরে এই জনসভায় দুই লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি হবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনের মাঠে দল নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে বলে তার প্রত্যাশা।

সকাল থেকেই জনসভাস্থলে ব্যানার, ফেস্টুন হাতে জমায়েত হতে দেখা যায় নানা বয়সী মানুষকে। তাদের দাবি—দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে দেশে চলছে দমন-পীড়ন, গুম ও খুনের রাজনীতি। সেই বাস্তবতা তুলে ধরে তারা বলছেন, ‘জুলাই গণআন্দোলনের’ চেতনায় দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক ধারার সূচনা করতে চায় জামায়াত।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরের ৩৩টি আসনে বিজয়ের লক্ষ্যে এই জনসভাকে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছে দলটি। একইসঙ্গে রংপুরবাসীর কাছে জামায়াতের রাজনৈতিক রূপরেখা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বার্তাও পৌঁছে দিতে চায় তারা।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *