January 5, 2025, 5:44 am
আব্দুল আউয়াল
বানারীপাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধি:
বরিশালের বানারীপাড়ায় সূর্য পূজাকে কেন্দ্র করে ২২৮ তম ঐতিহ্যবাহী সূর্য মনি মেলা জমে উঠেছে। গত ২৮ জানুয়ারি শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে সূর্য দেবের পূজার মধ্য দিয়ে বেশ জমকালো ভাবে মেলা উদ্বোধনী শুরু হয়েছে। ইতিহাসটা বেশ পুরোনো। বর্তমান সূর্যমনি মেলার কোল ঘেঁষে যাওয়া ছোট্ট খালটি এক সময় ছিলো বেশ বড় । খালে চলাচল করত বড় বড় নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত বোট। তার কোল ঘেঁষেই অবস্থিত সূর্যমনি মেলা।
মেলা প্রাঙ্গণ সেখানে গঙ্গু সরকারের চাষিরা চাষ করতে গেলে লাঙলের মাথায় উঠে আসে সূর্য দেবের এক বিশাল আকারের প্রতিমা যার উচ্চতা ছিলো চার ফুট ও পাশে ছিলো প্রায় দুই ফুট ,ওজনে প্রায় চার মনের মত যেটি ছিলো মুল্যবান কষ্টিপাথরের প্রতিমা। লাঙলের মাথায় বেধেঁ ওঠায় প্রতিমাটির এক কর্নারে কিছু যায়গা ভাঙে যায়। কিছুদিন পরে গঙ্গু সরকারের মা স্বপ্ন দেখেন প্রতিমাটি দিয়ে সূর্য পুজো দেয়ার, সেই থেকে মাগি সপ্তমীতে শুরু হয় সূর্য দেবের পুজো যা আজ ঐতিহ্যবাহী সূর্যমনির মেলা। প্রথমে সূর্য পুজো উপলক্ষে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসত ছোট আকারে একটি মেলা। তখনকার সময়ে কোন রকমের ছাপড়াঘরে পুজো হত যা আজ বেশ বড় মন্দিরে রূপান্তরিত হয়েছে। তখনকার সময়ে গঙ্গু সরকার ও তার পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক ছিলো। মৃত চেরাগআলী মোল্লার আর চেরাগআলী মোল্লা ছিলো মৃত খবির উদ্দিন মোল্লার পিতা। দেশ ভাগের সময়ে গঙ্গু সরকারের পরিবার চেরাগআলী মোল্লার সাথে সুসম্পর্ক থাকায় চেরাগআলী মোল্লাকে গঙ্গু সরকারের পরিবার তাদের স্থাবর অস্থাবর সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে তারা ভারতে চলে যান। সেই থেকে এই সূর্য পুজার দ্বায়িত্ব পরে চেরাগআলী মোল্লার কাছে। মৃত চেরাগআলী মোল্লা সূর্য প্রতিমাটি রাখার জন্য বর্তমান হাতি রাখার জায়গায় ভিন্ন একটি ছাপড়াঘর তৈরী করেন এবং পুজো শেষ হলে সেখানেই প্রতিমাটি রাখতেন এবং পুজো শুরু হওয়ার পূর্বে বর্তমান যেখানে মন্দির স্থাপন করা হয়েছে সেখানে নিয়ে রাখতেন যদিও তখন ওখানে কোন মন্দির তৈরি হয়ে ওঠেনি। সেই থেকে আজও মোল্লাদের যায়গায় উৎসাহ উদ্দিপনায় মেলাটি গর্বের সহিত চলতেছে। মূলত চেরাগআলী মোল্লার পুত্র খবির উদ্দিন মোল্লা যে সময় থেকে এই পুজোটির দ্বায়ভার গ্রহন করে সেই থেকে মেলাটি বিস্তৃত হতে শুরু করে। প্রথমে একদিন মেলাটি হলেও পরে খবির উদ্দিন মোল্লা মেলাটিকে তিনদিন এবং সাতদিনে থেকে এক মাসে রুপান্তরিত করে রেখে যায়। স্বাধীনতার পরে ও পূর্বে মেলাটির উপর বিভিন্ন বাধা সৃষ্টি করে কিন্তু সব বাধা মোল্লারা শক্ত হাতে দমন করে এগিয়ে নেয় ঐতিহ্যবাহী এই সূর্য পুজোটি। উল্লেখ্য যে মোল্লা বংশোদ্ভূত কেহই কোনদিন মেলা কমিটিতে সম্পৃক্ত ছিলোনা। স্বাধীনতার পর পর সময়ে সূর্য দেবের প্রতিমাটি চুরি হয়ে যায় যদিও তারপরে মৃত খবির উদ্দিন মোল্লা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও প্রতিমাটির কোন হদিস করতে পারেননি পরে জানা যায় যে এই সূর্য পুজো বিরোধী লোকজনরা প্রতিমাটি চুরি করে নিয়ে যান যাতে ওখানে আর কোনদিন পুজো দিতে না পারে। কিন্ত সেই থেকে ঘট দিয়ে সূর্য পুজো হত তবে এখন সূর্য দেবের সাদৃশ্য একটি প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে গড়ে উঠেছে বেশ বড় একটি মন্দির যেখানে গত ২৮ জানুয়ারি শুরু হয়েছে সূর্য দেবের পুজো বা সূর্য মনির মেলা। তবে মেলা কমিটির সভাপতি বাদাল কৃষ্ণ সাহা ও সাধারণ সম্পাদক ধ্রুব লাল সাহা জানান প্রতি বছরের ন্যায় এবার ও পুজারী কৃষ্ণ কান্ত ভট্টাচার্য ২৮ জানুয়ারি শনিবার সকালে সূর্য পুজো দিয়ে মাসব্যাপী মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে তবে ভক্তগনরা মেলা চলাকালীন যে কোন সময়ে তারা পুজো দিতে পারবেন। মেলা ঘুরে দেখা যায় মেলায় প্রায় তিন শতাধিক দোকান রয়েছে যারা প্রতিবছরের নেয় পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী লক্ষন দাস সার্কাস,পুতুল নাচ পার্টি,যাত্রাপালা, নাগর দোলা, কসমেটিকস, বাশ, বেত, লোহা,মাটি ও কাঠের আসবাবপত্রের দোকান এছাড়াও রয়েছে লোভনীয় সব খাবারের দোকান যেমন মিষ্টি ,চটপটি, চানাচুর, ফুসকা, মনখুশি,ঘুঘনি ও গরম গরম জিলেপী ও রয়েছে এক কেজি ওজনের একটি মিষ্টি এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রেষ্টুরেন্ট, ফল ও ফুলের দোকান। তবে এবারের মেলা খুবই সুশৃঙ্খল পরিবেশ বহন করছে। ঐতিহ্যবাহী সূূূূর্যমনি মেলা ঘিরে বানাড়ীপাড়া, উজিরপুর, সরুপকাঠী,বাবুগঞ্জ, ঝালকাঠির মানুষের মধ্যে দেখা গেছে ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও মেলা ঘিরে তৈরি হয়েছে উৎসব মুখর পরিবেশ। এই মেলার দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা ও কঠোর নিরাপত্তা।
বি:দ্র: এছাড়াও রয়েছে প্রতি বছরের চমক র্যাফেল ড্র। এযাবৎ পর্যন্ত চার থেকে পাঁচটি মটর সাইকেল,গরু,স্বর্নের চেইন,কানের দুল ও পারিবারিক কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র প্রায় চারশ দর্শনার্থীরা জিতে গেছেন সূর্যমনির মেলা প্রঙ্গন দিয়ে। তাই আর বাসায় বসে থাকবেন না অতিসত্বর ঘুরে যান মেলা প্রাঙ্গনে।