May 12, 2025, 2:06 pm
এম এ আলিম রিপন, সুজানগর ঃ পাবনার সুজানগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিস্তীর্ণ গাজনার বিলে কৃষকের তৃষ্ণা নিবারণের ছিলনা কোন ব্যবস্থা। নলকূপ স্থাপন করে সেই কষ্ট দূর করলেন জেলা প্রশাসক। বছরের বেশিরভাগ সময় এই গাজনার বিলে পেঁয়াজ,ধানসহ অন্যান্য ফসল আবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন কৃষকেরা। আর এ কারণেই দিনের শুরু থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কৃষকেরা থাকেন বিলের মাঠে। অনেকে সারা দিনে একবারও বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পান না। সে জন্য খাওয়া-দাওয়াও সারতে হয় বিলেই। বিলে তেমন গাছ না থাকায় প্রখর রোদে বিশ্রাম নেবার তেমন সুযোগ পাননা ক্লান্ত কৃষকেরা। আর খাওয়া শেষে নিরাপদ পানি পান করার সুবিধাও ছিলনা কোথাও।
এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে পাবনার সুজানগর উপজেলার বিস্তীর্ণ গাজনার বিলে নলকূপ স্থাপন করে দিলেন জেলা প্রশাসক। আর এ কাজটি করে কৃষকদের কাছে প্রশংসার পাত্র হয়েছেন তিনি। স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে বিলে কাজ করতে আসা শ্রমিকেরা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসককে। এ নলকূপ স্থাপনের মধ্য দিয়ে বিলের জমিতে হাড়ভাংগা খাটুনি খেটে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত ও তৃষ্নার জ্বালায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া কৃষকদের সুপেয় পানির জন্য দীর্ঘদিনের হাহাকারের অবসান হলো পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলামের মহতী এ উদ্যোগে। ১৫০ ফুট গভীর নলকুপ স্থাপনের মাধ্যমে মানবতার এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন তিনি। তপ্ত দুপুরে জৈষ্ঠ্যমাসের খররৌদ্রে খোলা আকাশের নীচে বিলে কাজ করা তৃষ্নার্ত ও ক্লান্ত কৃষকেরা ভূগর্ভস্থ ১৫০ ফুট গভীরের ঠান্ডা সুপেয় পানি পান করবেন এখন থেকে। শুক্রবার পাবনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম উপস্থিত হয়ে এ নলকূপটি চালু করেন। এ সময় সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামীম হোসেনসহ স্থানীয় কৃষকেরা উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুল মালেক নামে এক কৃষক জানান, সকালে ও দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর পানি আনতে কলস দিয়ে একজন মাল্লাকে (শ্রমিক) গ্রামে পাঠাতে হতো। গ্রাম থেকে কলসে করে পানি আনতে লেগে যেত এক থেকে দেড় ঘণ্টা। কিন্তু এবার বিলের মধ্যেই নলকূপ থাকায় একজন শ্রমিকের সে সময়টা আর নষ্ট হবে না।
আব্দুল মান্নান নামে অপর কৃষক জানান, কাজ করা কৃষকদের খাবারের পানি বোতলে কিংবা কলসে করে নিয়ে আসতে হতো বাড়ি থেকে। তাছাড়া কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু গাজনার বিলে নলকূপ স্থাপন হওয়ায় এখন নিরাপদ ও সুপেয় পানি পান করতে পারবেন তারা। এখন বাড়ি থেকে কলস বা বোতল ভরে পানিও আনতে হবেনা।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, ” গত মাসে পেঁয়াজ তোলার মৌসুমে কৃষকদের সুখ-দুঃখের অনুভূতি জানার জন্য ও কোন সমস্যা থাকলে তা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার জন্য তাদের নিয়ে সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলে কৃষক সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। উক্ত সভায় তাদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে বিশাল বিলের বিভিন্ন লোকেশনে ৩টি ডীপ টিউবওয়েল ও বিশ্রামাগার নির্মাণ করে দেওয়ার অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে এ কাজটি করা হয়েছে। বাকী ২টির স্থান নির্বাচনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ইউএনও কে বলা হয়েছে। এ ধরণের সামাজিক কাজ আমি নিয়মিতই করে থাকি। জনকল্যাণে সরকারি সুবিধা সকল স্তরের মানুষ যাতে সমানভাবে ভোগ করতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। উপস্থিত কৃষকদের একজন বলেন পিঁয়াজ আবাদের সময় বর্ষাকালের বিপুল পরিমাণ কচুরিপানা পরিষ্কার করতে হয়। এতে বিঘা প্রতি ৪০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে যায়। এতে উতপাদন খরচ বেড়ে যায়।তাদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারীভাবে ও স্বেচ্ছাসেবক টীমের মাধ্যমে কচুরিপানা পরিষ্কারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ইউএনও সুজানগরকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আজীবন ভালো থাকুক খেটে খাওয়া মানুষগুলো মাতৃস্নেহের মতো ছায়াঘেরা পাখিডাকা বটবৃক্ষের সুশীতল ছায়া আর সুপেয় পানির তৃষ্ণা মিটিয়ে বলেও তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ জানান, জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক গাজনার বিলে বাকী ৩টি ডীপ টিউবওয়েল ও বিশ্রামাগার নির্মাণ কাজ অতি দ্রুতই সম্পন্ন করা হবে।
এম এ আলিম রিপন
সুজানগর(পাবনা)প্রতিনিধি।।