May 12, 2025, 3:47 pm
হেলাল শেখঃ বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের নবনিযুক্ত ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেছেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা নিবিড়ভাবে মনিটরিং এর জন্য ডিআইজি অফিসে একটি বিশেষ মনিটরিং সেল খোলা হবে। মনিটরিং সেলে আমি প্রত্যেকটি মামলার বাদী, ভুক্তভোগী, গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলবো এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঢাকার প্রতিটি থানা ফাঁড়ি, জেলা পুলিশ সার্কেল অফিসসহ পুলিশের সব কার্যালয়ে অভিযোগ বক্স স্থাপন করা হবে। ঢাকা রেঞ্জের ৯৮টি থানার সেবা মনিটরিং নিজেই করবো। সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার সব থানা হবে জনগণের।
রবিবার (১১ মে ২০২৫ইং) দুপুরে ঢাকার সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রেঞ্জ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি। এসময় রেঞ্জের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, বিগত সময়ের উচ্চাভিলাষী ও অপেশাদার কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। এরূপ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশ যে অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাচ্ছে, এর পেছনে যার অবদানের কথা না বললেই নয়, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনুস।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের প্রাচীন, অন্যতম বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ। ১৮২৯ সালে ঢাকা বিভাগ গঠিত হয়৷ ভৌগলিকভাবে ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। কারণ রংপুর বিভাগ ব্যতীত অন্যান্য সকল বিভাগের সঙ্গে ঢাকা বিভাগের সীমানা রয়েছে। রাজধানী ঢাকা এই রেঞ্জের আওতাধীন জেলাসমূহ দ্বারা পরিবেষ্টিত। বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পেরে নিজেকে সম্মানিতবোধ করছি।
ঢাকা রেঞ্জের অধীনে সকল থানা-ফাঁড়ি-সার্কেল এসপি অফিস হবে জনগণের উল্লেখ করে পুলিশের এই ডিআইজি বলেন, জনগণের সেবা করার জন্যই আমরা দায়িত্ব পালন করি। যারা ভুক্তভোগী এবং অসহায়, তাদের কথা আমি সরাসরি শুনতে চাই। তাদেরকে কী রকম আইনগত সহায়তা দেওয়া যায়, সেটি নিজে দায়িত্ব নিয়ে দেখবো। থানাকে সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
তিনি বলেন, ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে অপরাধীর বিরুদ্ধে বা আমার অধীনস্থ পুলিশের বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযোগ সরাসরি আমাকে জানাতে পারেন। আমার অফিসে নির্ধারিত সময়ে ঢাকা রেঞ্জের আওতাধীন ১৩টি জেলার ৯৮টি থানার মানুষ আমার কাছে আসতে পারবে। রেঞ্জের সংশ্লিষ্ট অফিসে যদি কাঙ্ক্ষিত সেবা না পায়, তাহলে আমি নিজেই তাদের কথা শুনে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবো।
ডিআইজি রেজাউল করিম ঘোষণা দিয়ে বলেন, ঢাকা রেঞ্জের জনগণের জন্য Talk to DIG নামে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু করতে যাচ্ছি। যার মাধ্যমে ঘরে বসেই মোবাইলের মাধ্যমে যে কোনো অপরাধের তথ্য বা সাহায্য প্রাপ্তির জন্য আমাকে জানাতে পারবেন। অ্যাপসে যারা তথ্য দিবেন, অবশ্যই তথ্যদাতার পরিচয় আমরা গোপন রাখবো।
ডিআইজি বলেন, আমরা জনগণের নিরাপত্তা দিতে এসেছি। আমার রেঞ্জে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন কিংবা পতিত সরকারের দোসররা যদি জনগণের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটানোর বিন্দুমাত্রও চেষ্টা করেন, সেটা শক্ত হাতে দমন করার সক্ষমতা ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের রয়েছে। আমার অধীনে এসপি ওসিদের নির্দেশ দিচ্ছি, নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো সংগঠনের কর্মকাণ্ড আপনার এলাকায় চলবে না। বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা দমন-পীড়ন করেছে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, মামলার তদন্তে যারা দোষী, যারা দোসর হিসেবে পরিচিত তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, সাধারণ মানুষ যেন সুবিচার পায়; অন্যায়-জুলুম থেকে বাঁচতে পারে সেটি নিশ্চিত করা হবে। এমনকি আমিও আইনের ঊর্ধ্বে নই। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ঢাকা রেঞ্জের কোনো পুলিশ সদস্য যদি কোনো ধরণের অনৈতিক ও অপেশাদার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়-তাদেরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবেনা।