রাজশাহীতে ২০ কেজি পটল বিক্রি করে মিলছে ১ কেজি কাঁচা মরিচ

রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ রাজশাহীতে ৪ দিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে প্রায় কয়েকগুণ। গত সপ্তাহে কেজিপ্রতি ৭০/ ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে মান ভেদে ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকায়। বিক্রেতা বলছেন, সরবরাহ কমের কারণে দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের।

শনিবার (১২ জুলাই) রাজশাহী নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা দেখা গেছে। নগরীর খড়খড়ি পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বিক্রেতারা পণ্য কিনে এনে নগরীতে বিক্রি করেন। এখানে গিয়ে দেখা গেছে, মরিচের সরবরাহ অনেক কম। এখানে পাঁকা লাল মরিচ বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম কম। আর কাঁচা সবুজ মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা কেজিতে।

বিক্রির জন্য এই হাটে কয়েক কেজি মরিচ আনেন পারিলা গ্রামের কৃষক মনির হোসেন। তিনি জানান, পারিলা গ্রামে তার কয়েক শতাংশ মরিচ ক্ষেতে কয়েকদিন ধরে পানি জমে আছে। খেতে নামা যাচ্ছে না। খেতের পাশ থেকে কিছু মরিচ তুলেছেন। সেগুলো বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন। তিনি ৩৫০ টাকা কেজি দরে দাম চাচ্ছেন। তার আশঙ্কা, আর দুই-তিন দিন এমন বৃষ্টি হলে মরিচ ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাবে। এরইমধ্যে কিছু গাছ পচে গেছে। পানি নামার জায়গা নেই
নগরীর বিনোদপুর ও সাহেববাজার এলাকার কাঁচাবাজারেও মরিচের ঘাটতি নজরে পড়েছে। সেখানে মানভেদে কেজি ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকায় মরিচ বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এসব এলাকার বিক্রেতারা জানান, রোদ না উঠলে দাম কমবে না। বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ী রায়হান আলী বলেন, বৃষ্টির কারণে মরিচের সরবরাহ নেই বললেই চলে।

এদিকে গোদাগাড়ীর বিভিন্ন হাটবাজার, মুদির দোকানে হঠাৎ করেই কাঁচা মরিচের বাজারে লেগেছে আগুন। এ আগুন যেন নিভানো যাচ্ছে না। যে কাঁচামরিচ মাত্র ৪ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৬০/৭০ টাকা কেজি দরে। সে কাঁচা মরিচ এখন বেড়েছে কয়েক গুণ। সাড়ে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হাঠাৎ দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতাসধারণ সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন। চর আষাড়িয়াদহ থেকে কয়েকজন কৃষক পটল বিক্রি করতে এসেছেন রেলওয়ের বাজারে তারা জানান, মান ভেঁদে পটলের কেজি ১২ টাকা থেকে ১৬ টাকা। ১ কেজি কাঁচামরিচ কিনতে ২০ কেজি পটল বিক্রি করতে হচ্ছে। পটল চাষ করে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

শনিবার সকালে মহিশালবাড়ী, রেলবাজার, গোদাগাড়ী হাট, সুলতানগঞ্জ, কামারপাড়া, বালিয়াঘাটা, কাঁকনহাট, সাগরামের মোড়, রাজাবাড়ি, প্রেমতলী, গোগ্রাম, পিরিজপুর ও আশপাশের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে।

ক্রেতাসাধারণ বলছেন, সিন্ডিকেট মাধ্যমে অন্তরবর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য একটি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছেন। আর বিক্রেতারা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে মাঠে মরিচ নেই। ফলে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে।

মহিশালবাড়ী বাজরের সবজি বিক্রেতা কালু বলেন, টানা বৃষ্টিতে মরিচ উৎপাদন কমে গেছে, মরিচের সরবরাহ খুবই কম। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তার বেশিরভাগই পাঁকা মরিচ- যার দাম ২৭০ টাকা কেজি। ভালো মানের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত।

সবজি বিক্রেতা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, , “গতকাল পর্যন্ত মরিচ ৩৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। আজকে কম মানের মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা দরে। বৃষ্টি না কমলে দাম আরও বাড়তে পারে। গাছে মরিচ নেই, পানিতে গাছও মরে যাচ্ছে।”

শিবসাগর গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন,
মাঠে গাছে মরিচ ভাল আছে কিন্তু কৃষক দাম পাচ্ছে না। তাঁর মরিচক্ষেতে কয়েক দিন ধরে পানি জমে আছে। সেখান থেকে কিছু মরিচ তুলেই বিক্রি করতে এনেছেন। “আর দুই-তিন দিন এভাবে থাকলে পুরো খেতটাই নষ্ট হয়ে যাবে।” দালাল শ্রেণীর মানুষ বেশী লাভবান হচ্ছে, কৃষকের ভাগ্যে কোন পরিবর্তন হচ্ছে না।

রাজশাহী সাহেব বাজার থেকে কাঁচা মাল নিয়ে মহিশালবাড়ী, রেলওয়ে বাজারসহ সবজি ব্যবসায়ী নিকট পাইকারি বিক্রি করেন মোঃ সজিব তিনি জানান, আগে ৫০/৬০ টাকা কেজি মরিচ কিনে এনে বিক্রি করে যে লাভ করেছি এখন ৩৪০ টাকা মরিচ কিনে এনে তার অর্ধেক লাভ হচ্ছে না। আমরা যে দামে কিনবো ভ্যান, খাজনাসহ অন্যান্য ব্যয় বাদ দিয়ে সামান্য লাভ করবো। তবে কিছু দিন পরে দাম কমে যাবে।
তিনি আরও জানান আজ গোদাগাড়ীর হাটপাড়ার হাটে ৪০০ টাকা কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি করছে।
একই হাটে আড়াই কেজি মরিচ কেনেন জাব্বার নামে এক ক্রেতা। তিনি বলেন, “বাসায় অনুষ্ঠান, মরিচ দরকার। তাই এত দাম দিয়েও কিনতে হলো।”

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, কেউ মজুদ করে দাম বাড়াচ্ছে কি না দেখতে হবে। কোন সিন্ডিকেট সৃষ্টি হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে। গোদাগাড়ীতে সবজির আবাদ কম, মূলত পবা, মোহনপুর, বাগমারায় সবজির আবাদ বেশী হয়। গোদাগাড়ির চরআষাদিয়াদহ, দেওপাড়া, গোগ্রামে সবজি, মরিচের আবাদ হয়েছে।
উপজেলায় এবার গ্রীষ্ম কালিন মরিচ ১৭৬ হেক্টর
জমিতে। আশা করি বৃষ্টি কমে আসলে মরিচের দাম কমে আসবে।

উপসহকারী কৃষি অফিসার ওবাইদুল হক বলেন,
গোদাগাড়ী পৌরসভায় ১ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। এসময় প্রতিবছর মরিচের দাম বাড়ে। টানা বৃষ্টিতে মরিচের গাছ হলুদ হয়ে গেছে, ফুল ও ফল নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি কমে আসলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, বাজারে দাম কমবে ইনসাল্লাহ। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো বিষয়টি তিনি মানতে নারাজ।

মোঃ হায়দার আলী
গোদাগাড়ী,রাজশাহী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *