July 13, 2025, 8:05 pm
মোঃ শহিদুল ইসলাম
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল ব্যবসার ছদ্মবেশে সরকারি কর্মকর্তাদের ছবির ফাঁদে কোটি টাকার ডিজিটাল প্রতারক চক্রের এক সদস্য নরসিংদী জেলার ঘোড়াদিয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার ও প্রতারণার কাজে সংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার করেছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে মসজিদে এসি স্থাপন, এতিমখানায় সহায়তা ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) আড়ালে তারা এসব প্রতারণা কার্যক্রম পরিচালনা করতো। একইসাথে সরকারি কর্মকর্তার ছবি ও পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করত চক্রটি।
তবে চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পাতানো ফাঁদে ধরা পড়েছে চক্রটির অন্যতম সদস্য শরীফুল ইসলাম।
গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জুনায়েত কাউছার এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রতারক চক্রটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবসার আড়ালে হুন্ডি, অনলাইন জুয়া ও হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ লেনদেনে জড়িত ছিল। বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশের নজরে এলে তদন্ত শুরু হয়।
এরা মূলত ছদ্মবেশে অনলাইনে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা। দীর্ঘদিন যাবত একটি সংঘবদ্ধচক্র অনলাইনে সাধারণ মানুষের whatsApp হ্যাক করে সরকারি কর্মকর্তাদের ছবি ও পরিচয় ব্যবহার করে কৌশলে অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
এছাড়াও মসজিদে বা অফিসে এয়ার-কন্ডিশনার (এসি) লাগবে, উন্নয়নমূলক কাজ করবে, অসহায় ব্যক্তিদের সহায়তা করবে, এতিম খানায় সহযোগিতা লাগবে এমন অজুহাতে প্রতারক চক্র মানুষের কাছ থেকে টাকা চেয়ে থাকে।
অনেকেই সরল বিশ্বাসে প্রতারক চক্রকে অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ প্রদান করেছে মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। বিষয়টি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের নজরে আসলে জেলা পুলিশের ফেসবুক পেইজে এ সংক্রান্তে সতর্কতামূলক নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এই বিষয়ে কতিপয় ভুক্তভোগী আমাদের কাছে প্রতারিত হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ দাখিল করেন।
বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপার নির্দেশে জেলা গোয়েন্দা শাখা তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে এই প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হয়।
গত বুধবার (৯ জুলাই) নরসিংদীর ঘোড়াদিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে নগদ ৪ লাখ টাকা, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স, ৮টি মোবাইল ফোন, সিমকার্ড, সিল, পাসপোর্ট, এনআইডি কপি, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত কাগজপত্রসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়।
তদন্তে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত চক্রের মূলহোতা শরীফুল ইসলাম ও তার বড় ভাই আরিফুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রতারণা কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।
তারা ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংকে নামে বেনামে ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব খুলে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে লেনদেন করে আসছে।
কোনো অচেনা ব্যক্তি পরিচিত বা অপরিচিত সরকারি কর্মকর্তা বা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে বা বাহিনীর লোগো ব্যবহৃত কোন আইডি থেকে কল করে টাকা দাবি করে, তাহলে বিশ্বাস না করে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করার জন্য জানান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ।
একইসাথে Social Media, WhatsApp ও বিকাশ/ উপায়/রকেট/ মোবাইল ব্যাংকিং Apps অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যবহার করার জন্যে অনুরোধ জানান।