May 10, 2025, 4:48 am
আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
অবসরোত্তর ও বকেয়া গ্র্যাচুয়েটি ভাতার দাবিতে ঝিনাইদহে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেছে মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা। বুধবার সকালে কালীগঞ্জ মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের সামনে এ কর্মসূচীর আয়োজন করে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক, কর্মচারী ও কল্যাণ সমিতি। এতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীসহ সুগার মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা অংশ নেয়। সেসময় অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক, কর্মচারী ও কল্যাণ সমিতির সভাপতি আতিয়ার রহমান, যুগ্ম সম্পাদক সোহেল আহম্মেদ, সুগার মিল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুলসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, ২০১৮ সাল থেকে মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের ২২০ জন শ্রমিক-কর্মচারীর গ্র্যাচুয়েটি দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন অবসরপ্রাপ্তরা। তাই দ্রæত তাদের পাওনা ১৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা দেওয়ার দাবী জানান। ঈদের আগে টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা না হলে ঈদের পর কঠোর কর্মসূচী ঘোষনার হুশিয়ারি দেন তারা। পরে ঝিনাইদ-যশোর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। এদিকে কালীগঞ্জে মোবারকগঞ্জ সুগার মিলে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ইউনিয়ন নেতাদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার সকাল ৭ টা থেকে ফটক সভায় মোবারকগঞ্জ সুগার মিলস্ লিমিটেডের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্যে রাখেন চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম।
ঝিনাইদহে লোডসেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হাফিয়ে উঠেছে মানুষ
আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
প্রখর রোদ আর ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শতভাগ বিদ্যুতায়িত জেলা ঝিনাইদহে চলছে বিদ্যুতের ভেলকিবাজী। আর ঘন ঘন এই লোডসেডিংয়ে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে বিদ্যুৎ সল্পতার কারণে প্রতিদিন তাদের ১০ ঘন্টার লোডসেডিং করতে হচ্ছে। ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুতের মোট চাহিদা হচ্ছে ১৪৮ মেগাওয়াট। এদিকে গ্রাম ও শহরের বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বিদ্যুৎ গেলে আর আসতে চায় না। ভ্যাপসা গরেমের তীব্রতায় শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ হাফিয়ে উঠেছেন। প্রতিনিয়ত হিটস্ট্রোকে মৃত্যু ও অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। কোন কোন এলাকায় মানুষ রাতে ঘুমাতে পারছে না। গরমের পারদ আর বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নাকাল মানুষ বেসামাল হয়ে পড়ছে। ঝিনাইদহ ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, প্রতিদিন ঝিনাইদহে ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্ত পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৩২ মেগাওয়াট। ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি পুরণে ১০ ঘন্টার লোডসেডিং করতে হচ্ছে। তিনি জানান, মিল কারখানাসহ ওজোপাডিকোর এক লাখ ৩০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এদিকে সার্কিট হাউস পাড়ার ইমতিয়াজ শাহাদৎ জানান, বিদ্যুতের আসা যাওয়ার কারণে শুধু মানুষই কষ্ট পাচ্ছে না, ইলেক্ট্রিক পন্যগুলো নষ্ট হচ্ছে। তিনি আরো বলেন প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় কারেন্ট যাচ্ছে। এতে জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। শহরের চাকলাপাড়া এলাকার খামারী তরুণ মেম্বর জানান, তার খামারে ৮/১০টি গরু আছে। প্রতিটি গুরুর দাম হবে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা হবে। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে হচ্ছে। গরুগুলোর হিটস্ট্রোকের আশংকা রয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, অনেক সময় নিজে না ঘুমিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে গরুর বাতাস করতে হচ্ছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজারের অটো রাইচ মিলের মালিক আরশাদ আলী জানান, তীব্র লোডসেডিংয়ের কারণে আমরা চাহিদা মোতাবেক মেশিনে চাল ছাটাই করতে পারছি না। অন্যদিকে গরমের কারণে মিলছে না শ্রমিক। সব মিলিয়ে তাদের ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। লোডসেডিং ও শ্রমিকের অভাবে প্রতিদিন তাকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এত চালের দাম দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে শহরের চেয়ে গ্রামের অবস্থা আরো নাজুক। হরিণাকুন্ডু উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কলেজ ছাত্র মোঃ সংগ্রাম হোসেন জানান, ভয়াবহ লোডসেডিংয়ে তার এলাকার মানুষ হাফিয়ে উঠেছে। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে কৃষকরা ফসলের ক্ষেতে সেচ দিতে পারছে না। গ্রামের পুকুরগুলো শুকিয়ে গেছে। টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। সর্বত্রই যেন হাহাকার উঠে গেছে। এক দুঃসহ যন্ত্রনায় মানুষ জীবন পার করছে বলে তিনি জানান। তার ভাষ্যমতে গ্রামে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের আনোয়ার পাশা বিদ্যুৎ ও বাবুল বিশ্বাস জানান, কারেন্টের কারণে মানুষ খুবই কষ্ট পাচ্ছে। বিদ্যুৎ থাকছে না বল্লেই চলে। মাছ চাষিরা পুকুরে পানি দিতে পারছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে মানুষের এক ভয়াবহ পরিণতি হবে। এদিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম ইমদাদুল ইসলাম জানান, ঝিনাইদহে তাদের গ্রাহক আছে চার লাখ ১৪ হাজার। ৮৩টি ফিডারের মাধ্যমে এই বৃহৎ পরিবারের বিদ্যুতের যোগান দিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মোট ৯৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু তিনি দাবী করেন চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছেন। জিএম’র ভাষ্যমতে প্রতিদিন ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৮ থেকে ১০ ঘন্টার লোডসেডিং হচ্ছে।
ঝিনাইদহ
আতিকুর রহমান