December 26, 2024, 10:05 pm
কুমিল্লা সংবাদদাতা,মোঃতরিকুল ইসলাম তরুন,
মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে বারোমাসি ফল কানিয়া জাতের তরমুজ চাষে সফল হয়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ভুবনঘরের সামসুল হক নামে এক কৃষক।
উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তায় ১ বিঘা কৃষি জমিতে তরমুজ চাষ করেন এবছর। এই তরমুজ চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি।
স্বাদেও বেশ মিষ্টি ভিতরের রং হলদে। মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে এই তরমুজের ক্ষেত দেখতে প্রতিদিনই ভীড় করছেন অসংখ্য আশপাশের এলাকার কৃষক ও উৎসুক লোকজন। এছাড়াও তিনি ইতিপূর্বে ব্রকলি, স্কোয়াশ, রকমেলন, গোল্ডেন ক্রাউন (হলুদ তরমুজ), সাম্মাম চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন।
তিনি মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের ভূবনঘর গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে ও ভূবনঘর মর্ডান এগ্রোফার্ম এর স্বতাধিকারি কৃষক সামসুল হক সামসু।
স্থানীয় জনগন ও সামসুল হকের সাথে কথা বলে জানাযায়
দুটি ভাগে ভাগ করে তরমুজের চারা লাগনো আছে। পুরো জমিতে বাশের খুঁটির ওপরে জাল বিছিয়ে মাচা তেরি করা হয়েছে। এতে তরমুজগাছের লতা বেড়ে উঠেছে। পুরো মাচা গাছে ছেয়ে আছে। মাচার মধ্যে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে আছে বিভিন্ন রঙের ও বিভিন্ন সাইজের বাহারি তরমুজ। চাষি সামসু একটি একটি করে তরমুজ কাটছেন, আর ঝুড়িতে তুলছেন। প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি করছেন পাইকারী ৭০/৮০ টাকা। খুচরা ও পাইকারি ক্রেতারা খেত থেকে তরমুজ কিনে নিচ্ছেন।
জেলার দেবিদ্বার উপজেলার পৌরএলাকা থেকে আসা পাইকারি ক্রেতা ময়নাল বলেন, ‘খবর পেয়ে এসেছি। জমিতে বিভিন্ন আকারের তরমুজের বাম্পার ফলন, তবে দামে ভিন্নতা আছে। প্রতিটি তরমুজের ওজন তিন থেকে চার কেজি। কেজি ৭০থেকে ৮০ টাকা দরে কিনেছি। এগুলো ৯০ থেকে ১২০ টাকা দরে কেজি বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।’
কৃষক মামসুল হক জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে ঝিঙ্গা, লাউ, মূলা, টমেটো, ব্রকলি, বাধাঁ কপি ও ফুল কপিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে আসছি। গত বছর ব্রকলি, স্কোয়াশ, হলুদ তরমুজ, রকমেলন, মরুর দেশের ফল সাম্মাম ও বারমাসি তরমুজ চাষ করেও ভালো সফলতা পেয়েছি। এবারসহ ৩ বছর থেকে আমি কানিয়া, ম্যাজিক বয় ও হানিডিও জাতের তরমুজ চাষ করছি। প্রথম বছর লোকসান হলেও পরবর্তী বছর থেকে খুবই লাভ হচ্ছে। ‘ইউটিউবে দেখে আমি তরমুজ চাষে আগ্রহী হই। এরপর বীজ সংগ্রহ করে এক বিঘা ধানি জমি তরমুজ চাষের জন্য প্রস্তুত করি। পরে তরমুজের বীজ বপন করি। তরমুজের চারা বড় হলে সেগুলো বাঁশ দিয়ে তৈরি মাচায় ছড়ানো হয়। এরপর প্রথমে ফুল আসে। পরে ক্রমান্বয়ে বেরিয়ে আসে সবুজ, হলুদ ও কালো রঙের তরমুজ। দুই মাসের মধ্যে তরমুজ পরিপক্ব হয়। ১ বিঘা জমিতে তার খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। এখন প্রর্যন্ত তিনি বিক্রি করেছেন দেড় লক্ষ টাকা।
মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহম্মেদ জানান, সামসুল হক সামসু এই উপজেলার একমাত্র কৃষক প্রথম কানিয়া, ম্যাজিক বয় ও হানিডিও প্রজাতির তরমুজ চাষ করছেন। কানিয়া জাতের তরমুজের চাষ বারো মাস হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা দমন প্রক্রিয়াসহ সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। কৃষক সামসুল হকের পরিশ্রমে তরমুজ চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। আশা করি কৃষক সামসুর হককে দেখে অন্যকৃষকরাও এ সবজি চাষে ঝুঁকবে। ফলন দেখে ভালো লাগছে। কম সময়ে তরমুজ চাষে কৃষকরা ভালো লাভ করতে পারবেন। তাই এই প্রজাতির তরমুজ চাষ সমপ্রসারণের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে এবং কোন কৃষক আগ্রহী হয়ে এ ধরনের উদ্যেগ নিতে চান তাহলে তাকে মুরাদনগর উপজেলা কৃষি অফিস সব ধরনের কারিগরী সহযোগীতা ও পরামর্শ দেওয়া হবে।