December 26, 2024, 1:44 pm
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামে এমপিওভুক্তির তালিকায় ৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই পাঠদান কার্যক্রম, তবুও এমপিওভুক্তি। প্রতিষ্ঠানে সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম আছে শুধু কাগজ কলমে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীকে ভর্তি করে শুধু পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানোসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
গত ৬জুলাই সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রাম জেলায় ৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। এসব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নাগেশ্বরী উপজেলার বানূরখামার নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, চন্ডিপুর আদর্শ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মমিনগঞ্জ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আস্করনগর এ এস নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান স্কুল নামমাত্র স্কুল চালিয়ে এমপিওভুক্তির জন্যর অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন আর শিক্ষক ও কর্মচারী রদবদলে নিয়োজিত। প্রতিষ্ঠান চারটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিক্ষা কার্যক্রম আছে শুধু কাগজ কলমে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জায়গা থাকলেও ভবন ও পাঠদানের জন্য উপযুক্ত নেই কোনো শ্রেণিকক্ষ এবং ছিলো না তেমন ছাত্র-ছাত্রী। কখনোই নিয়মিত ক্লাস হতো না। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীকে ভর্তি করে শুধু পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো হতো। দুপুরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতেন এবং বিকাল হলে নামাতেন।
এমপিওভুক্তি ঘোষণার পরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বানূরখামার নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, চন্ডিপুর আদর্শ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মমিনগঞ্জ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আস্করনগর এ এস নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের পরিত্যক্ত কক্ষগুলো সংস্কার করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। কক্ষে অনেক চেয়ার-বেঞ্চ ভেঙ্গে এখনো এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। কক্ষের ভেতরে ময়লার স্তর দেখে মনে হয় কখনো এখানে পাঠদান কার্যক্রম চলেনি।
একাধিক স্থানীয়দের অভিযোগ-মতে, বানূরখামার নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহুরুল হক গত ২০০৩সালে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং পাশাপাশি নাগেশ্বরী ডিএম একাডেমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরী করতেন ও প্রতিষ্ঠানে বেতন না থাকায় কয়েকজন সহকারী শিক্ষক-কর্মচারী চাকরী বাদ দিয়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন এবং অনিয়িমিতভাবে চলতো বিদ্যালয়টি। অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক জহুরুল হক তদবির করে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে বর্তমানে বেকডেটে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে লাখ লাখ টাকার বানিজ্য করছেন।
চন্ডিপুর আদর্শ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোস্তম আলী ও শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়ায় স্কুল বন্ধ করে জীবনের তাগিদে অন্যত্র কাজ করতেন। এ সুযোগে অত্র প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ১০বছর ধরে নুরানী ও হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম চলতো। এমপিওভুক্ত হওয়ার সাথে সাথেই প্রধান শিক্ষক রোস্তম আলী স্থানীয় জন-প্রতিনিধিদের সহযোগিতা নিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য করছেন।
মমিনগঞ্জ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোন ঘর না থাকায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস কৃষি কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এবারে তিনি ঢাকা গিয়ে তদবির করায় বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হয়েছে। প্রধান শিক্ষক স্কুল চালাতেন কাগজে কলমে এবং ছিলোনা কোন ভবন ও শ্রেণিকক্ষ। তবে চলতি বছর বল্লভেরখাস ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক এলজিএসপির উন্নয়ন খাতের প্রকল্প দিয়ে একটি টিনসেট ঘর নির্মাণ করে দেন। তিনিও শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যে ব্যস্ত।
আস্করনগর এ এস নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুল হকের একই অবস্থা। নেই বিদ্যালয়ে পাঠদান শুধু প্রতিষ্ঠান চলছে কাগজে কলমে।
বানূরখামার নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহুরুল হক বলেন, আমি এখন ব্যস্ত আছি। পরে কথা হবে।
চন্ডিপুর আদর্শ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোস্তম আলী বলেন, ইতিপূর্বে টিনশেড ঘর ভেঙে যাওয়ায় স্কুল দীর্ঘদিন বন্ধ ছিলো তাই বিদ্যালয়ে নুরানী ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা চলতো। প্রতিষ্ঠানে এমপি এসেছে। আমাদের আর কোন ভয় নেই।
মমিনগঞ্জ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, প্রতিষ্ঠানে কোন ঘর না থাকায় পাঠদান করতে পারিনি। এখন থেকে নিয়মিত পাঠদান করবো।
আস্করনগর এ এস নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুল হক বলেন, আপনাদের যা লেখার লেখেন বুঝেন তো আমাদের প্রতিষ্ঠান এখন এমপিওভুক্ত।
নাগেশ্বরী উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা মন্ত্রীর কড়া নির্দেশ কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া মাত্র তদন্ত সাপেক্ষে উদ্ধর্তন কতৃপক্ষকে অবগত করা হবে।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে তদন্ত পুর্বক সত্যতা প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।