December 26, 2024, 1:58 pm
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধিঃ
মোংলার মিঠাখালী গ্রামের মধ্যপাড়ার বাসিন্দা দেলোয়ার শেখের (৩৫) চিংড়ি ঘেরে গ্যাসের অস্তিত্ব মিলেছে। শনিবার রাতে গ্যাস উদগিরণস্থল পরিদর্শন করে এসে সেখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের এ অস্তিত্বের কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার। তিনি জানান, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে নিশ্চিত হওয়া গেছে এখানে গ্যাসের অস্তিত্ব রয়েছে। কারণ পৌনে তিন বিঘার এ চিংড়ি ঘেরের ৬/৭ জায়গা থেকে কম বেশি করে গ্যাস বুদবুদ করে বের হচ্ছে। আর সেখান থেকে সংযোগ নিয়ে দেলোয়ারের পরিবার রান্নাও করছেন। শনিবার রাতে সেই গ্যাস দিয়েও তারা ডিম সিদ্ধ করেছেন যেটা আমি নিজেই দেখেছি। তবে এ গ্যাসের ব্যবহার আর না বাড়ানোর জন্য ঘের মালিক দেলোয়ারকে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ নতুন সংযোগ বাড়ানো হলে তাতে দুর্ঘটনার ভয় রয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে সেখান থেকে দেলোয়ারসহ অন্য কেউও যাতে গ্যাসের ব্যবহার না করতে পারে সেজন্য গ্রাম পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গ্রাম পুলিশের পাশাপাশি মিঠাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ওই ওয়ার্ডের মেম্বরকে গ্যাস উদগিরণস্থল নজরদারী করতে বলা হয়েছে। এছাড়া সেখানে উৎসুক জনতার ঢল বন্ধেও তাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, ঘেরটিতে গ্যাসের অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মহোদয়কে রিপোর্ট আকারে জানানো হয়েছে। তিনি বাপেক্সসহ সরকারের উর্ধতন মহলকে অবহিত করবেন। উর্ধতন কর্তৃপক্ষই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে চিংড়ি ঘেরে গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিন দুরদুরান্তের লোকজন তা দেখার জন্য সেখানে বিড় জমাচ্ছেন। এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে যেমনি উচ্ছ্বাস ও কৌতুহল রয়েছে তেমনি রয়েছে ভীতি এবং উৎকন্ঠাও। কারণ যদি গ্যাস হয়েই থাকে তাহলে যখন তখন দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। আবার বিশাল জায়গা নিয়ে গ্যাসের অস্তিত্ব মিললে তাদের জায়গা-জমি ও বাড়ীঘর ছেড়ে চলেও যেতে হতে পারে।
এ নিয়ে উৎকন্ঠায় থাকা মিঠাখালীর পূর্বপাড়ার বাসিন্দারা বলছেন, গ্যাস থাকলেও তো আর দেলোয়ারের শুধু পৌনে তিন বিঘার ঘেরেই নয়, আশপাশের অনেক জায়গা জমি নিয়েই রয়েছে। তাতে তো ভয় কাজ করবেই। তাই আমরাও চাই এ বিষয়ে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে যাই করার তাই করুক। সরকার আমাদের বাচিয়ে রেখেই যেন যা করার তাই করেন। আমরা যেন আমাদের প্রাপ্যটা পাই। কারণ গ্যাস পাওয়া গেলে তো আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। সরকার লাভবান হবেন, আমরাও যেন ভালভাবে বেচে থাকতে পারি তারও ব্যবস্থা করবেন সরকার সেই দাবী আমাদের। মিঠাখালীর পুর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ঘের মালিক দেলোয়ার শেখ বলেন, ৬ বছর আগে তার পৌনে তিন বিঘার চিংড়ি ঘেরের জমি থেকে বালু-মাটি উত্তোলনের জন্য একটি মিনি ড্রেজারের পাইপ বসাতে গেলেই সেখান থেকে এ গ্যাস উঠতে শুরু হয়। তখন তার বাবা বিষয়টি কেউকে না জানানোর জন্য পরিবারকে বলে তা গোপন রাখেন। এরপর দুই বছর আগে তার বাবা মারা যান। সেই থেকে গ্যাস উঠতে থাকলেও মুলত গত সপ্তাহখানেক ধরে ঘেরের বিভিন্ন জায়গা থেকে আরো বেশি পরিমাণে গ্যাস উঠতে শুরু হয়। গ্যাসের চাপ দেখে তা ব্যবহারের জন্য গত সোমবার সেখান থেকে পাইপ লাইন টানেন দেলোয়ার। আর বৃহস্পতিবার থেকে তা দিয়ে রীতিমত রান্নাবান্নার কাজ করছেন তার পুরো পরিবার। এ গ্যাসের অস্তিত্বের বিষয়ে তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ, বিদ্যৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির মোংলার আহবায়ক মোঃ নুর আলম শেখ বলেন, বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনসহ উপকূলীয় বিভিন্ন জায়গায় গ্যাসসহ নানাবিধ খনিজ সম্পদের অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু বাপেক্সের উদাসিনতার কারণে তা সনান্ত, উত্তোলন ও ব্যবহার সম্ভব হচ্ছেনা। মিঠাখালীর দেলোয়ারের ঘেরে যে গ্যাসের অস্তিত্ব মিলেছে তাও অনেক আগে। আগে থেকেই বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের জানানো হলেও তারা তাতে নজর দেয়নি। সরকারের কিংবা বাপেক্সের উচিৎ হবে ঘটনাস্থলে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।