মেধাবী ও অ-সচ্ছল শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিলো গোবিপ্রবি প্রশাসন

কে এম সাইফুর রহমান, 
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোবিপ্রবি) অধ্যয়নরত মেধাবী ও অসচ্ছল ১০৯১ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো বৃহৎ পরিসরে এমন উদ্যোগ নিলো প্রশাসন।

আজ সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবনের মুক্তমঞ্চে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের আয়োজনে প্রত্যেক সেমিস্টারের প্রথম থেকে পঞ্চম মেধাক্রমের ৮০০ জন মেধাবী শিক্ষার্থী ও ২৯১ জন অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর মাঝে বৃত্তির অর্থ প্রদান করা হয়।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখরের সভাপতিত্বে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজিমউদ্দীন খান বলেন, মেধার স্বীকৃতির নজির স্থাপন করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ। আসলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যেমন বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত, এখানে তার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা। বিগত সময়ে প্রতিষ্ঠানের কথা না ভেবে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইউজিসি সেই চেষ্টা করছে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠে। যাতে প্রকৃত মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা হিসেবে নিয়োগ পায়। তিনি আরো বলেন, আমি প্রত্যাশা করছি, বর্তমান প্রশাসন এই বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, ব্যক্তিগত এজেন্ডা সবসময় ক্ষতিকর। পূর্বে সকলে মিলে লেজুরবৃত্তিক চর্চা করায় বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের চর্চা হয়নি। নতুন জ্ঞান উৎপাদন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান দায়িত্বশীলরা সেদিকে মনোযোগী হবেন। কেননা আমরা হাজারো লাশের বোঝা বহন করে চলছি।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই আমরা পাহাড়সম সমস্যা থেকে বেরোনোর প্রয়াস চালাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় উদ্যমী করে তুলতে আজকে ২১ লাখ টাকার বেশি ব্যয় করে মেধাবৃত্তি দেয়া হলো। এর আগে আমরা ১০ লাখ টাকা ব্যয় করে ভাইস চ্যান্সেলর’স অ্যাওয়ার্ড দিয়েছি। এছাড়াও স্বনির্ভর কর্মসূচিতে ১০০ শিক্ষার্থী নিয়োজিত রয়েছে। এই কর্মসূচি বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিমাসে দুই লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে। আমরা এতোসব করছি, কারণ আমরা চাই এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বি গ্রেড থেকে এ গ্রেডভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হোক। আমরা ইউজিসির সম্মানিত সদস্য ড. তানজিমউদ্দীন স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি,  সম্প্রতি আমাদের দুটি বিভাগ হিট প্রজেক্ট প্রাপ্ত হয়েছে। আপনারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা এবং অডিটোরিয়াম, রাস্তাঘাট তথা অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা করবেন। যাতে করে শিক্ষার্থীরা বি গ্রেড থেকে এ গ্রেডের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারে।   

বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান বলেন, মেধার পরিচয় দিয়ে যে শিক্ষার্থীরা আজকে বৃত্তি গ্রহণ করছে, তাদের প্রতি হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা রইলো। তারা যেনো শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারে সেই প্রত্যাশা করছি। শিক্ষার্থীদের মাথায় রাখতে হবে, আজ থেকে তাদের সফলতার শুরু; তাই থেমে গেলে চলবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের আজকের এই স্বীকৃতি ছোটো হলেও এর ভারত্ব অনেক বেশি। কারণ এটি মনে প্রাণে ধারণ না করলে সামনে এগোনো সম্ভব নয়।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্মসচিব) মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, গোপালগঞ্জের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। শিক্ষার্থীরা যাতে আরো বেশি গবেষণামুখী হয়ে ওঠে, তাদের গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ পায়; একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান প্রজেক্টগুলো যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হয়, সেজন্য ইউজিসি ও সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, মেধাবৃত্তির স্বীকৃতি শিক্ষার্থীদের সুস্থ প্রতিযোগিতার পথে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হয়ে ক্যারিয়ার গড়তেও সাহায্য করবে।

এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে অতিথিদের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেয়া হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক- শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *