July 22, 2025, 9:54 pm
এন আই মিলন,
দিনাজপুর প্রতিনিধি – দিনাজপুরের বীরগঞ্জে চাঁদাবাজী ও রাস্তার গাছ কাটার অপরাধের সাবেক ইউপি সদস্য ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP) বীরগঞ্জ উপজেলা শাখার যুগ্ম সমন্বয়কারী সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে কুমোরপুর জনসংগঠন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বীরগঞ্জ পৌর শহরের পার্শ্ববর্তী সুজালপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড কুমোরপুর গ্রামের বাসিন্দারা কুমোরপুর জনসংগঠন সমিতি নামে একটি সংগঠন করে ২০১২ সালে ২০৮ জন সদস্যকে সাথে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সাথে ২০ বছর মেয়াদে লিখিত চুক্তি করে গ্রামের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে ও নিজেদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন রাস্তায় গাছ লাগায়। যার মেয়াদ ২০৩২ সাল পর্যন্ত রয়েছে। চুক্তি নামায় প্রথম পক্ষ ইউনিয়ন পরিষদ ও দ্বিতীয় পক্ষ কুমোরপুর জনসংগঠন সমিতি। ২০ বছর পর গাছ বিক্রির মুনাফা চুক্তিনামা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ ২০%, ভূমির মালিক ৫% ও উপকারভোগীরা ৭৫% পাবেন। সংগঠনের পক্ষে কুমোরপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হান্নানের পুত্র সাধারণ সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান গাছগুলি দেখাশোনার দায়িত্ব রয়েছেন। দাবি কৃত চাঁদা না পেয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কুমোরপুর গ্রামের মৃত খোরশেদ আলীর ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ সিদ্দিকুল ইসলাম, স্বাধীন রায়ের পুত্র জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP) বীরগঞ্জ উপজেলা শাখার যুগ্ম সমন্বয়কারী জেমিয়ান রায় ও মাহাতাব আলীর পুত্র আবু বক্কর সিদ্দিক সংগঠনের কাউকে অথবা ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদন না নিয়ে গত ১ জুলাই হতে ৩ কিস্তিতে গ্রামীণ সড়কের ৫৩ টি ইউকিলিপটাস গাছ অবৈধভাবে কেটে বিক্রয় করেন। যাহার মুল্য ৩.৫৫.০০০ (৩ লক্ষ ৫৫ হাজার) টাকা। মামলার অপর আসামীরা হলেন গাছ ক্রেতা ৩ জন মানিক মিয়া, বরকত আলী, গনি মিয়া, তারা বানু, বিলকিছ বেগম, মোঃ আলম ও অব্দুল জব্বার।
বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত, বীরগঞ্জ, দিনাজপুর আদালতে এ মামলা টি হয়। যাহার নং ৩১৩/২৫। তারিখ- ১৪-০৭-২০২৫ ইং।
আদালতে মামলার বাদী কুমোরপুর জনসংগঠন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান ২২ জুলাই জানায়, সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ সিদ্দিকুল ইসলাম ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, ছাত্র সমন্বয়ক জেমিয়ান রায় গাছগুলির বাবদ তাদের কাছে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে গাছগুলি কেটে নেয়। তিনি বিভিন্ন হুমকি ধমকির পরেও গত ১০ জুলাই বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করলেও কোন সুস্থ সমাধান পাননি। তিনি আরো বলেন, ১ নং আসামী সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ সিদ্দিকুল ইসলাম পূর্বে ২০২০ সালেও ঐ রাস্তার ৪টি গাছ কাটার অপরাধে আদালতে ফৌজদারী মামলা হয়েছিলো। যার মামলা নং- সি.আর- ২১২/২০২০।
অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ মাজেদুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের কোন সহযোগিতা ও সুষ্ঠ সমাধান না পেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন তারা। উপকারভোগীরা গাছ কাটার বাধা ও বিচার দেওয়ার পরেও তারা গাছ কাটার পায়তারা শুরু করলে তার প্রতিবাদে এলাকাবাসী ঢাকা-পঞ্চগড়কেও অবোরধ করে। পরে পুলিশ প্রশাসনে আশ্বাসের প্রেক্ষতে অবোরধ তুলে নেয়।
সুজালপুর ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ মহিবুল ইসলাম বাবু বলেন, গাছ কাটার সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েকটি গাছ সাময়িক আটক করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই।
বন বিভাগের রেন্জ কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম দিন গাছ কাটার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র সমন্বয়ক জেমিয়ান রায়কে সেখানে পাই। গাছ কাটা বন্দ করে ঘটনাটি বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করি।
অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটি রেকর্ডিও নয়। পূর্বের মামলাটি আপোষ হয়েছে। বর্তমানে গাছ কাটার ব্যাপারে তিনি কিছুই যানেন না।
বীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল গফুর বলেন, ঘটনাটি নিষ্পত্তি করার জন্য ১৬ জুলাই উভয় পক্ষকে বীরগঞ্জ পৌর কার্যালয়ে আসার জন্য বলা হয়। কিন্তু আসামী পক্ষরা উপস্থিত হয় নাই।
সুজালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, ২০১২ সালে আমার আমলেই চুক্তির মাধ্যমে গাছগুলি লাগিয়েছিলো কুমোরপুর জনসংগঠন সমিতির সদস্যরা। অনেক আগের থেকে চলাচলের রাস্তাটি পূর্বের রেকর্ড না থাকলেও সরকারি সকল কার্যক্রমের সহযোগিতা ওই রাস্তায় দেওয়া হয়েছে এবং ২০০৬ সালের সর্বশেষ জরিপে রাস্তাটি রেকর্ড হয়েছে। আমি উভয় পক্ষকে ডেকে ইউনিয়ন পরিষদের স্বার্থ রক্ষা করে দুই পক্ষের আপস মীমাংসা করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু গাছ কাটা পক্ষের কোন সহযোগিতা পাইনি।
বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর আহমেদ বলেন, গাছ কাটার সংবাদ পেয়েছিলাম। সংস্লিষ্ঠ দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।