July 22, 2025, 7:25 pm
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় ভেজাল জ্বালানী তেলে সয়লাব হয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে ওই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত মাহি প্রেট্রোল পাম্প থেকে এসব ভেজাল জ্বালানী তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন দীর্ঘ এক যুগ থেকে এই পাম্প থেকে ভেজাল তেলের রমরমা ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রেট্রোল, ডিজেল থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এই তেল ব্যবহার করে অনেকের যানবাহন অল্প সময়ে বিকল হয়ে গেছে। অনেকে বলছেন জ্বালানী তেল মাপেও কম দেয়া হয়। বিগত সরকারের ঠাকুরগাঁও ২ আসনের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামের ছত্রছায়ায় এই পাম্পে অবৈধভাবে পরিচালিত হতো। ৫ আগষ্টের পরে এই পাম্পে ভেজাল তেলের অভিযোগে স্থানীয়রা তাদেরকে সংশোধন হওয়ার তাগাদা দেয়। গত জুন মাসে ভেজাল তেল বিক্রীর অভিযোগে ভোক্তা অধিকারও পাম্মটিকে জরিমানা করে। কিন্তু তারপরও ভেজাল জ্বালানী তেল বিক্রী বন্ধ হয়নি। পাম্পটির বিস্ফোরক ছার পত্রও নেই। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছারপত্র। পাম্প কতৃপক্ষ বলছেন তারা পদ্মা ওয়েল কোম্পানীর পার্বতিপুর ডিপো থেকে স্যাম্পল সহ ভেজাল মুক্ত জ্বালানী তেল ক্রয় করেন। পরে তা আটোয়ারী এলাকার বিভিন্ন যানবাহন এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রী করেন। শুক্রবারে তেল কেনার নিয়ম না থাকলেও গভীর রাতে পাম্পের রিজার্ভ ট্যাংকে তেল ভরানো হয়। সরেজমিনে দেখা যায় মাহি পাম্পে পদ্মা ওয়েলের কোন স্যাম্পল পাম্পে নেই। পাম্প স্থাপনের অধিকাংশ শর্ত পুরন না করেই পাম্পটি স্থাপন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পদ্মা ওয়েল কোম্পানীর এ অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিএমও আবু সাকিল জানান, পদ্মাওয়েলের কাছে জ্বালানী ক্রয় করার সময় কাঁচের বোতলে স্যাম্পল দেয়া হয় এবং তা পাম্পে রাখার নির্দেশনাও দেয়া হয়। যাতে কোন ভাবে পদ্মা ওয়েলের সুনাম নষ্ট না হয়। শুক্রবারে ডিপো থেকে কোন জ্বালানী তেল সরবরাহ করা হয়না। স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ি রফিকুল ইসলাম জানান, আর কোন পাম্প না থাকায় সব সময় এই পাম্প থেকে জ্বালানী তেল নিতে হয়। দীর্ঘদিন থেকে এই পাম্পে অবৈধভাবে ভেজাল জ্বালানী তেল বিক্রী হয়। গাড়ি খুব তাড়াতাড়ি বিকল হয়ে যায়। প্রেট্রোল, ডিজেল, অকটেন থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এই পাম্পের ভেজাল তেলে বাজার সয়লাব হয়ে উঠেছে। তেল নিতে আসা মোটরসাইকেল চালক মির্জাপুর এলাকার আব্দুল জব্বার জানান, তেলে অত্যন্ত দুর্গন্ধ। প্রেট্রোলে তো প্রেট্রোলের গন্ধ থাকার কথা । এগুলে ভেজাল তেল। পুরাতন আটোয়ারী এলাকার গোপাল চন্দ্র সরকার একই অভিযোগ করেন।
পাম্পের ম্যানেজার আল আমিন জানান,একই মালিকানার আরেকটি পাম্প ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গি উপজেলায় রয়েছে। আলি ফিলিং স্টেশন নামের ওই পাম্প থেকে এই পাম্পে তেল পাঠানো হয়। দুুটি পাম্পের মালিকই আওয়ামীলীগ নেতা দবিরুল এমপির ছোট ভাই মোহম্মদ আলী। সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম ও তার ছেলে কারাগারে রয়েছে। ভাই মোহম্মদ আলীর নামেও একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি পলাতক রয়েছেন। মোহম্মদ আলীর মেয়ে রুনা আক্তার বর্তমানে পাম্প দুটি দেখা শোনা করছেন। তার স্বামী একজন পুলিশ কর্মকর্তা। রুনা আক্তার জানান, ৫ আগষ্টের পর আমার পাম্পগুলি ভাংচুর হয়েছে। তেল লুটপাট করা হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতা শাহাজাহান আলী আমার মামা। আমি মাসে একবার পাম্পে যাই। বালিয়াডাঙ্গিতে আমাদের আরেকটি পাম্প আছে। সেখানে সকল কাগজ পত্র আছে। ভেজাল তেল বিক্রী করা হয়না। যারা অভিযোগ করেছেন তারা মিথ্যা বলেছেন।
উপজেলা বিএনপির নেতা ও সাবেক উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান শাহজাহান আলী জানান ওই পাম্পের ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। তবে ভেজাল জ্বালানী তেলে আটোয়ারী উপজেলা সয়লাব হয়ে উঠেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আরিফুজ্জামান বলেন, পাম্পটির ব্যাপারে আমরা তদন্ত করবো। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।