July 18, 2025, 4:39 pm

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
যশোরের বাগআঁচড়া নাভারণ ও বেনাপোল শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনে বাবু – রাজ্জাক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয় ইপিজেড থানায় জামায়াতের উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত মোংলায়, গণঅ-ভ্যুত্থানে শহী-দদের স্মর-ণে উপজেলা বিএনপির শো-ক র‍্যালী আলোচনা সভা ও দোয়া শহী-দ আব্দুল্লাহ আল আবিরের স্ম-রণে দো-য়া অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক সাঁকোয়া ব্রীজ এলাকায় ইপিজেড এর দাবীতে গাইবান্ধাবাসীর মান-ববন্ধন ও বিক্ষো-ভ সমাবেশ ঝালকাঠির নলছিটিতে তারেক রহমানকে নিয়ে কুরু-চিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতি-বাদে বিক্ষো-ভ  সমাবেশ অনুষ্ঠিত দায়িত্বশীল ক-র্মীবাহিনী ছাড়া সমাজ পরি-বর্তনের সংগ্রাম সম্ভব ন-য় — সভাপতি মিজান খান বাবুগঞ্জে তিনটি ইটভাটায় অবৈ-ধ মাটি কাটায় জরি-মানা, অভি-যান চালাল উপজেলা প্রশাসন জাতীয় ফুল শাপলা, পাঠ্যবইয়ে আছে, গোদাগাড়ী থেকে বাস্তবে বিলু-প্তির পথে নেছারাবাদে অ-জ্ঞান পার্টির খ-প্পরে প-ড়ে একই পরিবারের চারজন হাস-পাতালে
জাতীয় ফুল শাপলা, পাঠ্যবইয়ে আছে, গোদাগাড়ী থেকে বাস্তবে বিলু-প্তির পথে

জাতীয় ফুল শাপলা, পাঠ্যবইয়ে আছে, গোদাগাড়ী থেকে বাস্তবে বিলু-প্তির পথে

রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলী: রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামের খাল, বিল, পুকুর নালা, ডোবা ও উন্মুক্ত জলাশয় এখন আর তেমনভাবে দেখা যাচ্ছে না গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও জাতীয় ফুল শাপলা ও ঢ্যাপ।

বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করে জাতীয় ফুল শাপলা। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে শাপলা ফুল। একটি নতুন রাজনৈতিক নতুন দল দলীয় প্রতীক হিসেবে পেতে চাই শাপলা। ছোট বড় সবার কাছে সমাদৃত এ ফুল। যেকোন পুকুর, বিল, ডোবা নালায় জন্ম নিয়ে সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। কিন্তু আফসোস! প্রকৃতির বিরুপ প্রভাব, জলবায়ুর পরিবর্তন মানব সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতায় বিলুপ্ত হচ্ছে মুক্ত জলাশয় এবং হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল। শাপলা ফুলের সেই সমারোহ আর চোখে পড়ে না। দিনে দিনে শাপলা-শালুক যেন একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অথচ আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগেও বড় বড় পুকুর ডোবা ও বিলের বুক জুড়ে শাপলা ফুলের দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্য ছিলো চোখে পড়ার মতো। সে শরৎকালে দীঘিতে ও বিলের বুক জুড়ে প্রকৃতি অন্য রকম সাজে সেজে উঠত। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখা যেত চারদিকে ফুটন্ত সাদা এবং লাল শাপলার সমারোহ। মনে হতো এ যেন শাপলা ফুলের জগৎ।

কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল। আর তার সঙ্গে বিপন্নের পথে জলাভূমির ফল ঢ্যাপ। শাপলা ফুল শুধু পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে তা নয় এর রয়েছে অনেক পুষ্টি গুণ। এছাড়া এ ফুলের গাছ শিকড় ও মাথা কিছুই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। শাপলার নরম ডাঁটা, মাথা ও গোড়ায় জন্ম নেওয়া ড্যাপ এবং শালুক সবই মুখরোচক পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান। শাপলার গাছ বা ডাঁটা পানির গভীরতায় ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। তাছাড়া মাছ-মাংস রান্নায় উৎকৃষ্ট তরকারি হিসেবে এর ডাঁটা বেশ জনপ্রিয়। শালুক আগুনে পুড়িয়ে কিংবা সেদ্ধ করে খাওয়া হয়। আগের দিনে শরতের শেষে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিল জুড়ে শালুক তোলার ধুম পড়ে যেত। শালুক পোড়া গন্ধ এখনো প্রবীনদের শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয়। শাপলা, পদ্ম সাধারণত দিঘী বা বিলে ফুটে থাকে। তখন গ্রামের ছেলে-মেয়েরা সাঁতার কেটে এই ফুল তুলে আনত। শাপলাকে দুভাবে কেটে কেটে মালার মতো করে একজন অপরজনের গলায় পড়িয়ে দিত। রসবোধ সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে মহাকালের অতল গহ্বরে। বিশেষজ্ঞদের মতে জলবায়ু ব্যাপক পরিবর্তনে আগের মতো সঠিক সময়ে বন্যা হচ্ছে না। এছাড়া আবাদি জমিতে অপরিমিত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগে অনেক শাপলা বীজ বা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা মা শালুক বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন করে শাপলার গাছ জন্ম হচ্ছে না। এখন শরৎকাল শেষ হলেও বড় বড় দীঘি ও জলাশয়ে দেশের কোথাও সেই আগের মতো শাপলা-শালুকের দেখা মেলেনা। এ জলজ উদ্ভিদ আজ বিলুপ্তির পথে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরে শাপলার অস্তিত্ব কতটুকু টিকে থাকবে তা দেখার বিষয়।

এলাকাবাসী বলছেন, বর্তমানে গ্রাম-বাংলায় বিভিন্ন খালেবিলে অতিরিক্ত পুকুর খনন, কৃষি জমিতে ও রাস্তার ধারের নয়নজুলি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ, কৃষকদের অপরিকল্পিত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ হও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এ শাপলা ফুল ও ঢ্যাপ। শাপলার ফলকেই ‘ঢ্যাপ’ বলা হয়। কিছু আঞ্চলিক নামে ‘ভেট’ বলা হয়। এক সময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশ শাপলা ফুলের ডাঁটা তরকারি হিসেবে খেতেন। শুধু তাই নয়, এই ঢ্যাপ আমাশয়, বদ হজম এবং রক্ত আমাশয় নিরাময়ের জন্য বেশ কার্যকরী বলেও প্রচলিত রয়েছে গ্রামে।
দেশের বিভিন্ন বিলে অপরিকল্পিত ভাবে অতিরিক্ত পুকুর খনন, কৃষি জমিতে স্থাপনা নির্মানের ফলে শাপলা ফুল আজ বিলুপ্তির পথে। বিভিন্ন বিল ও জলাশয় যেগুলোতে প্রাকৃতিক ভাবে মাছ চাষ হতো সেগুলো এখন পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষের আওতায় নিয়ে আসার কারণে সেখানে আর শাপলা ফুল জন্মাতে পারে না। প্রাচীন কাল থেকেই শাপলার ফল (ঢ্যাপ) দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খৈ তৈরি হয়। অনেকে শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে বিক্রি করতো। বর্তমান সভ্যতায় বাড়তি জনগণের চাপের কারণে আবাদি জমি ভরাট করে বাড়ি, পুকুর, মাছের ঘের বানানোর ফলে বিলের পরিমাণ কমে গেছে। যার কারনে শাপলা জন্মানোর জায়গাও কমে আসছে। গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে অহরহ দেখা যেত জলে ভাসা ফুলটি। তবে এখন অযত্ন আর অবহেলায় জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সকালে অথবা চাঁদনি রাতে বিলে-ঝিলে বা জলাশয়ে ফুলটি যখন অনেক ফুটে থাকে, তখন সেখানে এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় খাল-বিল, জলাশয় ও নিচু জায়গায় পানি জমা থাকলে সেখানেই প্রাকৃতিক ভাবেই জন্ম নেয় আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা। দিন দিন দেশের বিল, ঝিল, খাল, নদী দখল, ভরাট, জমিতে অতি মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে শাপলাফুল।

কিন্তু শাপলা ফল’ বা ‘ঢ্যাপ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময় গোদাগাড়ীর বিল পাতিকলা, দুর্গাদহ, সিধনা বিল, ঝিকড়া বিলসহ পুকুর, ডোবা, মুক্তজলাশয়ে এবং তানোর উপজেলার কুমারী বিল ও পুকুর, খাল ও জলাশয়ে শাপলা ফুল ফুটত। এসব খাল জলাশয়, পুকুর ও বিল থেকে শাপলা ফুল ও ঢ্যাপ তুলে উপজেলার হাট বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন অনেকেই। কিন্তু আস্তে আস্তে ভরাট হয়ে যাচ্ছে জলাশয়, খাল, বিল। অপর দিকে দুই উপজেলা সরকারী খাস পুকুর গুলো সরকারীভাবে লিজ দেয়ার কারনে বানিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ফলে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল ও ঢ্যাপ। শাপলার ফল বা ঢ্যাপ দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খই ভাজা হয়। যেটি গ্রাম-গঞ্জের মানুষের কাছে ‘ঢ্যাপের খই’ নামে পরিচিত।

এ ঢ্যাপের মধ্যে অসংখ্য বীজদানা থাকে। এসব বীজদানা রোদে শুকিয়ে চাল তৈরি করা হয়। ঢ্যাপের পুষ্টিকর চাল থেকে তৈরি করা হয় খই ও নাড়ু। খালবিল ও জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ধ্বংসের কারণে সুস্বাদু ঢ্যাপ বিলুপ্তি হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করেন। গোদাগাড়ী পৌরসভার সাবেক কমিশনার মুকুল বলেন,
আগে বাড়ির আশে পাশের পুকুর, ধানী জমির জলাশয়ে ফুটে থাকা শাপলার (লাইল) কাঁচা ও রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি ভ্যাট নামে পরিচিত ফল দিয়ে খই বানিয়ে খেতাম। কিন্তু এখন তো এগুলো দেখাই যায় না। যুবকেরা শাপলার ফল, ফুল সংগ্রহ করতে পানিতে নামতো ঝোঁক কামড় দিয়ে রক্তবের করে দিত। ঝোঁক মারতে সবাই লবন ( নুন) ব্যবহার করতো।

দিগরাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ ইফতিখার হোসেন বলেন, দেশে বাড়তি জনগণের চাপের কারণে পুকুর, জলাশয় ও আবাদী জমি ভরাট করে বাড়িসহ নানা স্থাপনা নির্মান, পুকুরে বানিজ্যিক ভাবে মাছ করার ফলে এখন পুকুর, জলাশয়ও নাই, তাই শাপলা ফুল আর দেখা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি

মুন্ডুমালা পৌর এলাকার সহকারী শিক্ষিকা আসিফা খাতুন বলেন, এক সময় তানোর বিল কুমারী বিলে প্রচুর পরিমাণে শাপলা ফুল ফুটত। কিন্তু এখন আর দেখা যাচ্ছে না। তারা বলেন, তানোর বিল কুমারী বিল থেকে হারিয়ে গেছে, জাতীয় ফুল শাপলা, শালুক, লিঘাড়, সিঙ্গার, পদ্ম ফুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ ফুল ও ফল।

উপজেলা কৃষি কর্মকতা মরিয়ম আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানান, জলবায়ু ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বর্ষা শেষ না হতেই খাল-বিল ও জলাশয় গুলো শুকিয়ে যাওয়া এবং লবণাক্ততা বেশি হওয়ার ফলে এলাকায় শাপলা জন্মানোর ক্ষেত্র বিনষ্ট হচ্ছে। এছাড়া আবাদি জমিতে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে অনেক শাপলা বীজ বা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা মা-শালুক বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে নতুন করে শাপলার গাছ জন্মাচ্ছে না। ফলে দিনে দিনে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার বিলুপ্তি ঘটছে।

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমার বাসার সামনে একটি বড় পুকুর আছে সেখানে শাপলা আছে বেশকিছু ফুলও ফুটেছে দেখতে সুন্দর লাগে। কেউ না উঠালে, এগুলি এমনি বৃদ্ধি পেতে থাকে। জনপ্রতিনিধি, সাধারন মানুষ, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কাজে এসে এ শাপলা ফুলের ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে আনন্দ উপভোগ করেন। উপজেলার বিভিন্ন বিল, পুকুরে প্রচুর শাপলা ফুটতো, এখন আর এগুলি দেখা যায় না। খই, নাড়ুসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার তৈরী হত। তিনি আরও জানান, শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। এই জাতীয় ফুল কে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এলাকার মানুষ ইচ্ছা করলে বাসাবাড়ীর পাশের পুকুর সুন্দর দৃশ্যের জন্য করতে পারেন।

মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী,

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD