গোদাগাড়ীতে বিজিবির হাতে গুপ্তচ-র সন্দেহে আট-ক আশা কারাগার থেকে ফিরে গেলেন বাবার বুকে

রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ সন্তানকে কেড়ে নেওয়া, স্বামীর তালাক আর শৈশবে মায়ের মৃত্যু-সব মিলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন নওগাঁর মেয়ে আশা বানু (২৩)। দেড় মাস আগে ভারতীয় নাগরিক সন্দেহে সীমান্ত থেকে আটক হয়ে কারাগারে যাওয়ার পরও কিছু বলতে পারছিলেন না।

অবশেষে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্মকর্তাদের আন্তরিক চেষ্টায় ধীরে ধীরে মুখ খুললেন তিনি। জানালেন নিজের নাম-ঠিকানা, বাবার নাম। শেষ পর্যন্ত বাবার কাছে ফিরে গেলেন কান্নাজড়িত আবেগঘন পরিবেশে।

উল্লেখ্য গত ১৬ মে রাত সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর গহোমাবোনা সীমান্তে পদ্মা নদীর ধারে তাঁকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে আটক করে বিজিবি। কোনো কথা না বলায় ও সঠিক পরিচয় না জানানোয় তাঁকে ভারতীয় নাগরিক ও গুপ্তচর সন্দেহে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসকরা জানান, তাঁর দেহে কোনো সমস্যা নেই। এরপর ১৭ মে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

কারাগার সূত্রে জানা যায়, নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের মীর মোস্তাফিজুর রহমান ও ফরিদা বেগমের মেয়ে আশা বানু। স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন তিনি। তাঁদের ১০ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ২০২২ সালে সন্তানকে কেড়ে নিয়ে স্বামী তালাক দিয়ে তাঁকে তাড়িয়ে দেন। এরপর থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন আশা।

কারাগারে আসার পরও দীর্ঘদিন কিছু বলেননি আশা। কারা কর্তৃপক্ষ বারবার কথা বলার চেষ্টা চালিয়ে যান। একদিন অবশেষে মুখ খোলেন তিনি। বলেন, তিনি ভারতীয় নন, নওগাঁর হাকিমপুর গ্রামের মীর মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়ে। তখনই তাঁর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান জানান, প্রথমে বাবার ছবি তুলে আশাকে দেখানো হয়। তিনি চিনে ফেলেন। এরপর বাবাকে কারাগারে এনে আরও কয়েকজন মেয়ের সঙ্গে দাঁড় করানো হয়। ভেতর থেকে মেয়েকে চিনে নেন বাবা।

বাবা-মেয়ের মিলনের মুহূর্তে আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন দুজনেই। এরপর জেল সুপার ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করে জামিন প্রক্রিয়া শুরু করেন। গতকাল বুধবার বিকেলে মুক্তি পান আশা বানু।
কারা কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আশা বানুর বাবা বলেন,‘এবারও মেয়েকে হারিয়ে থানায় জিডি করেছিলাম। অনেক খুঁজেও পাইনি। আল্লাহর রহমতে মেয়েকে ফিরে পেলাম।’
কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে আশা বানু শুধু বলেন,
‘হামি মনে করেছিলাম ঢাকায় যামু, চাকরি করমু। পরে কই গেছি মনে করতে পারিনি। বিজিবি বা পুলিশের প্রশ্নেরও উত্তর মনে পড়ছিল না।’

সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান বলেন, ‘মামলার আইনি প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে। হাজিরা দিতে হবে তাঁকে।’দীর্ঘ দেড় মাসের নিস্তব্ধতার পর নিজের পরিচয় ফিরে পাওয়া আর বাবার বুকে ফিরে যাওয়ার আনন্দেই আজ উজ্জ্বল আশা বানু।

মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *