July 16, 2025, 1:47 pm
মোঃ হায়দার আলী, রাজশাহী থেকেঃ আম উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন বাড়লেও সে তুলনায় বাড়ছে না রপ্তানি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, রংপুর, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও সাতক্ষীরাসহ আরও কয়েকটি জেলায় বিভিন্ন জাতের ৪০ হাজার টন রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু নানান জটিলতায় গন্তব্য দেশগুলোতে আম রপ্তানিতে বড় সাফল্য নেই।
চলতি মৌসুমে চীনসহ বিশ্বের ৩৮টি দেশে পাঁচ হাজার টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গত বছর বিভিন্ন দেশে এক হাজার ৩২১ টন আম রপ্তানি হয়েছিল। ২০২৩ সালে রপ্তানি হয় সাড়ে তিন হাজার টন আম। এবারে আম রপ্তানির সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে চার হাজার টন। কিন্তু এ বছর মৌসুম শেষ হতে চললেও এখন পর্যন্ত ৭৮০ টন আম রপ্তানি হয়েছে। এ নিয়ে হতাশ রাজশাহী অঞ্চলের আমপ্রধান বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিক চাষিরা, যারা বাড়তি বিনিয়োগ করে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করেছেন। আম চাষিরা বলছেন, আম রপ্তানি প্রসার, প্রণোদনা ও রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে সরকারি একটি প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের কোনো সুফল রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষিরা পাচ্ছেন না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলায় দুই লাখ ২৫ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ বছর ২৭ লাখ ৩৫ হাজার টন আম উৎপাদনের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে দেশে আম উৎপাদনের পরিমাণ ২৮ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। দেশে মোট উৎপাদনের মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় অর্ধেকের বেশি প্রায় ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টন আম উৎপাদন হবে।
আম চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদাসীনতাসহ নানা কারণে আম রপ্তানিতে গতি নেই। বিশেষ করে রাজশাহী অঞ্চলে প্যাকিং হাউজ না থাকায় প্রথমে আম নিয়ে যেতে হয় ঢাকায়। এতে অন্তত ১০ শতাংশ আম নষ্ট হয়। এছাড়া আম পরিবহণের খরচ বাড়ে। এসব বাড়তি ঝামেলার কারণে চাষি ও আম ব্যবসায়ীরা রপ্তানিতে আগ্রহ পাচ্ছেন না। রাজশাহী অথবা চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্যাকিং হাউজ তৈরির দাবি চাষিদের অনেক দিনের। চলতি বছর রাজশাহী অঞ্চলের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন হয়েছে ছয় হাজার ৭২০ টন। এর মধ্যে রাজশাহীতে ২০০ টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছয় হাজার টন, নওগাঁয় ৫০৫ টন ও নাটোরে উৎপাদন হয়েছে ১৫ টন আম। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলমি মৌসুমে ২১ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৭৮০ টন আম রপ্তানি হয়েছে ১৪ দেশে। এর মধ্যে ২৮ মে ৩ টন আম চীনে রপ্তানির মধ্য দিয়ে চলতি বছর আম রপ্তানি শুরু হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ম্যাঙ্গো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব বলেন, গুড এগ্রিকালচারাল প্রোডাক্ট (গ্যাপ) প্রেটোকলে আম উৎপাদন করতে হয় রপ্তানি জন্য। এজন্য বাড়তি খরচ হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এবার রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করেছেন ১০৭ জন বাণিজ্যিক চাষি।
রাজশাহীর বিপন এগ্রোর মালিক হাফিজুর রহমান খান বলেন, আম রফতানির জন্য নিরাপদ স্থান, প্যাকিং, গ্রেডিং, কার্গো বিমান ইত্যাদি সমস্যার কারণেই আমরা আম রপ্তানিতে পিছিয়ে আছি।
রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এগ্রো ফুড সমিতির সভাপতি আনোয়ারুল হক বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করেন শতাধিক বাণিজ্যিক চাষি। কিন্তু সরকারের জটিল রপ্তানি নীতিমালা ও অবকাঠামোর অভাবে আম রপ্তানিতে গতি আসছে না।
কৃষি বিভাগ ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আম রপ্তানি উৎসাহিত করতে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন নামের সরকারি একটি প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পের অধীনে রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনে সহায়তা করা হয় চাষিদের। কৃষি বিভাগ ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলের আম রপ্তানির প্রধান সমস্যা হলো ফিটোস্যানিটারি সনদ জটিলতা। কোয়ারেন্টাইন জটিলতাও আছে। আম রপ্তানির জন্য ফিটোস্যানিটারি সনদ প্রয়োজন হয় যে প্রক্রিয়া বেশ জটিল। দেশে পর্যাপ্ত হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নেই। ইউরোপসহ অনেক দেশ আমদানির আগে হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট চায়, যা বাংলাদেশে শুধুমাত্র ঢাকাতেই রয়েছে। আম রপ্তানিতে বিমান ভাড়াও বেশি। নীতি সহায়তার অভাবও আম রপ্তানির প্রধান অন্তরায়।
রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক আরিফুর রহমান বলেন, চলতি বছর পাঁচ হাজার টন আম রপ্তানির প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে আমরা আশা করছি এবার চার হাজার টন রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এখনো আরও দুই মাস সময় আছে।
মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।