July 18, 2025, 1:31 am

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে বিক্ষো-ভ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলায় বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান গোপালগঞ্জে হাম-লার প্রতি-বাদ জানিয়ে ‎ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের বিক্ষো-ভ শার্শা সীমান্তে বিজিবির অভি-যানে ৪৬ লাখ টাকার চো-রাচালানের পন্য আ-টক এনসিপির পদ-যাত্রায় হাম-লার প্রতি-বাদে সুজানগরে জামায়াতের বিক্ষো-ভ মিছিল ও সমাবেশ চতুর্থবারের মত রাজশাহী জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি হিসেবে নির্বাচিত গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি রুহুল আমিন পাইকগাছা হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের মা-রামারি দেখে বৃদ্ধার মৃ-ত্যু খুলনার পাইকগাছা ও কয়রাবাসীর প্রাণের দাবি শিববাটি ব্রীজের টোল স্থায়ীভাবে অব-মুক্ত দাবিতে মানববন্ধন অর্থের বিনি-ময়ে পলাশবাড়ীর খাদ্য বান্ধব ডিলার নিয়ো-গের অভি-যোগ লাপা-ত্তা টিসিএফ আলোচনায় নেই, স্মৃতি-তে নেই—জুলাই শ-হীদ দিবসে উ-পেক্ষিত অ-ন্ধ শিক্ষার্থী
বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার আমের বানিজ্য হবে

বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার আমের বানিজ্য হবে

রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ আমের বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা, সংস্কৃতে আম্র, বাংলায় আম, ইংরেজিতে ম্যাংগো, মালয় ও জাভা ভাষায় ম্যাঙ্গা, তামিল ভাষায় ম্যাংকে এবং চীনা ভাষায় ম্যাংকাও। আম অর্থ সাধারণ। সাধারণের ফল আম। রসাল বা মধু ফলও বলা হয় আমকে। রামায়ণ ও মহাভারতে আম্রকানন এবং আম্রকুঞ্জ শব্দের দেখা মেলে।
ধারণা করা হয়।

আম প্রায় সাড়ে ৬০০ বছরের পুরনো। আমের জন্মস্থান নিয়ে রয়েছে নানা তর্ক-বিতর্ক। বৈজ্ঞানিক ‘ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা’ নামের এ ফল ভারতীয় অঞ্চলের কোথায় প্রথম দেখা গেছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আমাদের এ জনপদেই যে আমের আদিবাস এ সম্পর্কে আম বিজ্ঞানীরা একমত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭-এ আলেকজান্ডার সিন্ধু উপত্যকায় আম দেখে ও খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এ সময়ই আম ছড়িয়ে পড়ে মালয় উপদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ ও মাদাগাস্কারে।

চীন পর্যটক হিউয়েন সাং ৬৩২ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এ অঞ্চলে ভ্রমণে এসে বাংলাদেশের আমকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করেন। ১৩৩১ খ্রিস্টাব্দ থেকে আফ্রিকায় আম চাষ শুরু হয়। এরপর ১৬ শতাব্দীতে পারস্য উপসাগরে, ১৬৯০ সালে ইংল্যান্ডের কাচের ঘরে, ১৭ শতাব্দীতে ইয়েমেনে, উনবিংশ শতাব্দীতে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে, ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইতালিতে আম চাষের খবর জানা যায়। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাটিতে প্রথম আমের আঁটি থেকে গাছ হয়। এভাবেই আম ফলটি বিশ্ববাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়।

জানা যায়, মোগল সম্রাট আকবর ভারতের শাহবাগের দাঁড়ভাঙায় এক লাখ আমের চারা রোপণ করে উপমহাদেশে প্রথম একটি উন্নত জাতের আম বাগান সৃষ্টি করেন। আমের আছে বাহারি নাম বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ। ফজলি, আশ্বিনা, ল্যাংড়া, ক্ষীরশাপাতি, গোপালভোগ, মোহনভোগ, জিলাপিভোগ, লক্ষণভোগ, মিছরিভোগ, বোম্বাই ক্ষীরভোগ, বৃন্দাবনী, চন্দনী, হাজিডাঙ্গ, সিঁদুরা, গিরিয়াধারী, বউভুলানী, জামাইপছন্দ, বাদশভোগ, রানীভোগ, দুধসর, মিছরিকান্ত, বাতাসা, মধুচুসকি, রাজভোগ, মেহেরসাগর, কালীভোগ, সুন্দরী, গোলাপবাস, পানবোঁটা, দেলসাদ, কালপাহাড়সহ চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাওয়া যায় প্রায় ৩০০ জাতের আম। তবে অনেকগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়।

বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রধান বৈশিষ্ট হলো লাল মাটি। এই লাল মাটি নিয়ে এক যুগ আগেও বিপাকে ছিলেন কৃষকরা। উঁচু-নিচু টিলার মতো ভূমিতে এক যুগ আগেও শুধুমাত্র ধান ছাড়া তেমন কোনো ফসল বা ফলচাষ ভালো হয় না বলে ধারণা ছিল কৃষকদের। বোরো ধানচাষ করতে গিয়ে প্রচুর পানির ব্যবহারের ফলে ক্রমেই পানির স্তর নামতে নামতে এখনো সুষ্ক মৌসুমে মরুভূমির মতো খাঁ খাঁ হয়ে উঠে বরেন্দ্র অঞ্চল। তবে সেই ধারণা পাল্টে দিয়ে বরেন্দ্রভূমিতে ফলছে সুস্বাদু আম। আর আমচাষীদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে।

সহায়ক প্রকৃতি ও অনুকূল আবহাওয়ায় চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে আমের ভালো ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত স্বল্প বিরতিতে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ বছর আমের আকার বড় ও পুষ্ট হয়েছে। আমের গুণগত মানও বেশ ভালো। এ বছর রাজশাহী অঞ্চলের বাগানগুলোতে গাছে গাছে আম ঝুলতে দেখে চাষিরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। আম বিক্রি করে ভালো পয়সা পাবেন। প্রচন্ডগরম, ঈদুলআজহার ছুটিতে কোরিয়ার সার্ভিস বন্ধ থাকা, অফিস ছুটিসহ বিভিন্ন কারণে এবার ১৫/২০ দিন আমের কাঙ্ক্ষিত দাম পায় নি আম চাষিরা। গরমের কারনে আম একসাথে পেঁকে সামান্য বৃষ্টি, বাতাসে বেশীর ভাগ আম পড়ে গেছে। কুরবানির সময় মাংশ খেয়ে আমের প্রতি মানুষেন চাহিদা কম থাকায় আমচাষিরা আমের নায্য মূল্য পায় নি।
চাষি, বাগান ও মোকাম পর্যায়ে গত বছরের তুলনায় এবার সব ধরনের আমের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। এতে চাষিদের পাশাপাশি মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ীরাও বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। তবে বর্তমানে সবধরণের আমের দাম চড়া।

আমের রাজধানী বলতে চাঁপাই নবাবগঞ্জ বলা হয় আর আমের বড় বাজার বলতে কানসাট বাজার বলা হয়। এখানে আমের মৌসুমে কয়েক হাজার কোটি টাকার আমের বানিজ্য হয়ে থাকে। রাজশাহী চাঁপাইনবাগঞ্জ অঞ্চলে এখন হাজার হাজার বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে এই আমগাবান। আর চলতি আমের মৌসুমে আমকেন্দ্রিক লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের, শিবগঞ্জ, নাচোল, গোমস্তাপুর, নওগাঁ জেলার সাপাহার, নিয়ামতপুর, মহাদেবপুর, পোরশা উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় গড়ে উঠেছে শত শত একর জমিতে আমবাগান। ছোট-বড় আমবাগানে কপাল খুলেছে হাজার মানুষের। একেবারে শূন্য থেকেও কেউ হয়েছেন কোটিপতি হয়েছেন অনেকে আমের বাগান, আমের ব্যবসা করে।
শুধু আমচাষী নয় এর সাথে যুক্ত রয়েছেন, আম ব্যবসায়ী, দিনমজুর, চুক্তিভিত্তিক মজুর, কীটনাশক ব্যবসায়ী, পরিবহণ শ্রমিক, কুরিয়ার ব্যবসায়ী, ভ্যাচালক, অটোচালক, ট্রাক শ্রমিক-মালিক, কুলি, হাটের ইজারাদার, আমের আড়ৎদার, আমের দোকানের কর্মচারীসহ আরও বিভিন্ন ধাপের মানুষ। এই সময়ে আমকেন্দ্রীক এসব মানুষের মধ্যে অনেকের ভাগ্যের চাকাও বদলে যায়। বিশেষ করে আম চাষি ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা প্রতি বছর এই সময়ে মোটা অংকের অর্থ পকেটে পুরতে পারেন। এতে অনেকেই নতুন করে স্বপ্ন দেখাও শুরু করেন। সেই স্বপ্ন থেকে অনেকেই আবার নতুন করে বাগান বৃদ্ধি করেন। আবার কেউ কেউ সেই অর্থ দিয়ে বাড়ি-গাড়িও করেন।

গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল এলাকার আমচাষি আনছার আলী জানালেন, ‘৮-১০ বছর আগেও যেখানে এক বিঘা জমি থেকে কৃষক পেতেন বড় জোর ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার ধান। সেখানে এখন তারা প্রতি বিঘা জমি থেকে বছরে আম বিক্রি করেই পাচ্ছেন ৫০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা। আমের কারণেই বর্তমানে এই এলাকার মানুষের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি। জীবন যাত্রার উন্নয়ন হয়েছে। অনেকেই জমি আমচাষের জন্য বর্গা দিয়েই বছরে লাখ টাকা আয় করছেন। বিঘাপ্রতি এখন ২০-৩০ হাজার টাকা হারে জমি বর্গা নিয়ে আমচাষিরা আমচাষ করছেন।

গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট এলাকায় প্রায় ৫৫ বিঘা জমিতে আমের বাগান করেছেন সরকারি চাকরিজীবী সোহেল রানা। তিনি বলেন, ৫ বছর আগে আম্রপালি ও বারি ফোর জাতের আমের চারা রোপন করেছিলাম। গত বছর প্রায় ১১ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। এবার বিক্রি করেছি ২২ লাখ টাকার। আমসহ বাগান বিক্রি করে করে দিয়েছি। ব্যবসায়ীরা আম পেড়ে নিয়ে চলে যাবেন। আম পাড়া শেষ হলে আমি আবার পরিচর্যা করে আগামী বছরের জন্য প্রস্তুতি নিব। আগামী বছর ৫০ লাখ টাকার কাছাকাছি আম বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’ ভাল জাতের আম ২০০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।

গত বছর এই সময়ে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোকামগুলোতে ক্ষিরসাপাতি আম মানভেদে প্রতিমন ১ হাজার ৮০০ থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান প্রধান মোকামে ক্ষিরসাপাতি আম মানভেদে প্রতিমন সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আবার চাষি ও বাগান পর্যায়ে ক্ষিরসাপাতি আম বিক্রি হচ্ছে প্রতিমন ২ হাজার ৪০০ টাকায়। ন্যাংড়া জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা প্রতিমন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট বাজারের আড়তদার সাহেব আলী বলেন,“এই মুহূর্তে হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা মনে, যা কেজিতে পড়ে মাত্র ৬৭ টাকা। গতবার যা ছিল অনেক বেশি।”

বাজারে ভালো মানের হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা মণে, আর নিম্নমানের আম ১৬০০ টাকা মণে। ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়।

চাষিরা বলছেন, ঈদের ছুটি, গরমে আগাম পাঁকা আম, এবং অনলাইন ক্রেতাদের অনুপস্থিতি- সব মিলিয়ে দাম কমেছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
অন্যদিকে, আমের নতুন রাজধানীখ্যাত নওগাঁয় জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত সময়ের আগেই বাজারে এসেছে আম্রপালি ও অন্যান্য জাতের আম। এতে করে আমের সরবরাহ বেড়েছে কয়েকগুণ, অথচ চাহিদা নেই তেমন।

এদিকে নওগাঁর বাজারে ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা মণে, আম্রপালি ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা, আর নাক ফজলি ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে। অথচ গত বছর এই সময় এসব আমের দাম ছিল দ্বিগুণের কাছাকাছি।

চলতি মৌসুমে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেজিতে আম ক্রয়-বিক্রয়ের নির্দেশনা দেওয়া হলেও এর বাস্তবায়ন এখনো লক্ষনীয় হয় নি। সরেজমিনে রাজশাহী বিভাগের বড় বড় আমের হাট রোহনপুর, ভোলাহাট, কানসাটের বাজারে কোথাও কেজিতে আম ক্রয়ের কোন বাস্তবায়নের চিত্র দেখা যায় নি। কোথাও ৫২ কেজিতে আবার কোথাও ৫৪ এবং ৫৫ কেজিতেও মন হিসেবে আম কেনা হচ্ছে । বর্তমানে আমের দাম এবং ওজন ও বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের রয়েছে চরম অসন্তোষ।
নওগাঁর সাপাহার আমের হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি মণ হিমসাগর ১৮০০-২৬০০ টাকা, নাক ফজলি ১৫০০-১৯০০ টাকা, ল্যাংড়া ১২০০-১৫০০টাকা, ব্যানানা ম্যাংগো ৩৫০০-৪২০০ টাকা, হাড়ি ভাংগা ১৫০০-২৫০০ টাকা এবং আম্রপালি ১৮০০-৩৫০০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
আমের হাটে আম বিক্রি করতে আসা আমচাষি কালাম বলেন, এবছর আমের দাম অনেক কম। গত বছর যে আম ৪০০০-৪৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি সে আম এ বছর ২২০০-২৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে । এ দামে আম বিক্রি করে কীটনাশক খরচ ই উঠবে না। এভাবে চলতে থাকলে লোকসান গুনতে হবে।
সাপাহার উপজেলা আম আড়ৎদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সহ সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, তুলনামূলকভাবে এবছর আমের ফলন কম হলেও আমের সাইজ অনেক ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে আমের বেপারীরা কেনা বেচা শুরু করে দিয়েছে। ওজন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,পাশ্ববর্তী রোহনপুর, ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং কানসাটের ব্যবসায়ীরা ৫০ থেকে ৫২ কেজিতেই মণ হিসেবে আম ক্রয় করছেন। যার কারণে এ বাজারে আম ক্রয় করতে আসা অন্য ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছেন। তাই ওজনের বিষয়টি যদি সারাদেশে একই রকম রাখা হয়, তাহলে আম চাষী ও আড়ৎদারের সুবিধা হবে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

রাজশাহী জেলা সদর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে গোদাগাড়ী-সাপাহার রাস্তার ধারে সাওর গ্রামেই হুমায়ন আলীর আমবাগানটিতে গিয়ে দেখা যায়, গোটা বাগানে পাঁকা ঝুলছে। পাইকারগণ বাগানে এসে আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাগানে পানি সেঁচের জন্য একটি গভীর টিউবওয়েলও বসিয়েছেন তিনি। মোটর দিয়ে সেই টিউবয়েল থেকে পানি উত্তোলন করে সুষ্ক মৌসুমে পানি সেঁচও দেন বাগানে। তবে এখন আর তেমন পানির প্রয়োজন হচ্ছে না।
এককই এনামুল বলেন আমি আগে লোকের বাগানে কাজ করতাম এখন আমার আমবাগানেই প্রতিদিন অন্তত ৬০ জন শ্রমিক কাজ করে। আমাকেও আর পরের জমিতে কাজ করতে হয় না। আমার জমিতে কাজ করেও অনেকেই সাবলম্বি হচ্ছেন।’ এখন আম শ্রেণীভেদে প্রতিমন আম ২০০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ভাল দাম পেয়ে আম চাষিরা দারুন খুশি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটের আমচাষি ফরহাদ উদ্দিন জানালেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকেই আম চাষ করেন তাঁরা। তবে গত প্রায় ১০ বছর ধরে এখন আরো বেশি করছেন। তাঁর নিজের বাগানই আছে ৩০ বিঘা জমিতে। অপর দুই ভাইয়ের আছে আরও প্রায় ৪০ বিঘা। অথচ তাদের বাপের ছিল ১৫ বিঘা জমিতে আম বাগান। বছরে আম বিক্রি করেই অন্তত ৩০ লাখ টাকা আয় করেন ফরহাদ উদ্দিন। এর মধ্যে জমি বর্গাসহ বিভিন্ন খাতে খরচ হয় অন্তত ১৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা লাভ থাকে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় সবমিলিয়ে এ বছর আম চাষ হয়েছে ৮৭ হাজার ৩০৭ হেক্টর জমিতে। এখান থেকে প্রায় ১০ লাখ টন আম উৎপাদন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে কৃষি বিভাগ। যা থেকে আয় হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। যা অতিতের সব রেকর্ড ভাঙবে এবার। আম বাজারজাত শুরু হওয়ায় এরই মধ্যে এ অঞ্চলের অর্থনীতিও চাঙ্গা হতে শুরু করেছে বলেও দাবি করেন অর্থনীতিবিদরা।

তারা আরও বলছে, রাজশাহী অঞ্চলে গত ১০ বছর আগেও আমচাষ ছিল ৩০ হাজার হেক্টরের নিচে। গত প্রায় এক যুগ ধরে এই অঞ্চলে আমচাষ বাড়তে থাকে। এখন আমচাষে যেন বিপ্লব এনেছেন কৃষকরা। বারি-৪, বারি-১৩, বারি-১১, আম্রপালি, ব্যানানা, বারোমাসি কাঠিমণসহ উচ্চ ফলনশীল নানা জাতের আমচাষ হচ্ছে এখন। পাশাপাশি দেশি জাতের গোপাল ভোগ, লক্ষণভোগ, হিমসাগর, ফজলি, আশিনা, রানি প্রসাদ বা রানী পছন্দ, গৌড়মতি, গুটি বা আঁঠিসহ নানা জাতের আমও চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে তুলনামূলক হারে বেশি চাষ হচ্ছে আম্রপালি জাতের আম। এ আম প্রচুর মিষ্টি, আঁশ না থাকা এবং ফলন বেশি হওয়ায় রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা গত ১৫-২০ বছর ধরে চাষ শুরু করেন। এমন কৃষক আছেন একাই দেড়-দুইশ বিঘা জমিতে এ আমের চাষ করেছেন। এর পর একসঙ্গে শত বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে বারি-৪ জাতের আম। আমপ্রালির পরে একেবারে শেষদিকে ফজলির পাশাপাশি সময়ে বাজারে আসে এ আম। ফলে দামও ভালো পাওয়া যায়।

এদিকে, রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলছিলেন, এ বছর জেলায় ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এখান থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ২ লাখ ৬০ টন। আশ করছি, চাষিরা এবার আমের ফলন ভালো পাবেন। এ আম থেকে এবার অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা আয় হবে চাষিদের।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানচ্ছিলেন, এ বছর জেলায় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমচাষ হয়েছে। এবার ৩ লাখ ৮৭ হাজার টন আমের উৎপাদন আশা করা হচ্ছে। এ হিসাবে এ বছর নওগাঁ থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. ইয়াছিন আলী বরছিলেন, এ জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে নানা জাতের আমচাষ হয়েছে। চলতি বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৯২ টন। এখান থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা আয় হবে বলেও তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। গত ১০ বছরে প্রায় ১৩ হাজার ২৪৪ হেক্টর জমিতে আমচাষ বেড়েছে এ জেলায়।

জেলার আম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোখলেসুর রহমান বলছিলেন, জেলার চাষিরা আমের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টন আম দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যকভাবে সরবরাহ করেন। এছাড়া কয়েক বছর ধরে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে এ জেলার আম। গত বছর জেলা থেকে এক হাজার ৩৩ টন আম রপ্তানী হয়েছে বিদেশের মাটিতে।

ইউরোপ-আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানির পর বৃহত্তর রাজশাহীর আম এবার যাবে চীনেও। গত বছর শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেই এশিয়ার ১১টি দেশ, মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি এবং ইউরোপের সাতটি দেশে আম রপ্তানি করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ এপ্রিল চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনসহ আমদানিকারকরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি আমবাগান পরিদর্শন করেছেন।

কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক ড. ইয়াছিন আলী জানান, চলতি বছর এ জেলায় ৩৩৯ হেক্টর জমিতে ১২২ জন আমচাষি (উত্তম কৃষিচর্চা) মেনে রপ্তানিযোগ্য আমচাষ করেছেন। এখান থেকে বিপুল পরিমাণ আয় আসবে দেশে।

আমকেন্দ্রীক রাজশাহীর অর্থনীতির প্রভাব নিয়ে বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল ওয়াদুদ। তাঁর মতে, প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের জন্য বড় ধরনের আর্থ-সামাজিক সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। যদি এই বিপুল অর্থের একটি বড় অংশ আমচাষিদের হাতে পৌঁছায় এবং তারা ন্যায্য মূল্য পায়, তাহলে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। চাষিরা তখন তাদের পরিবারে খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং বাসস্থান খাতে আরও বেশি ব্যয় করতে পারবে, যা সামগ্রিকভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল করবে।

রাজশাহীর জেলার সবচেয়ে বড় আমের হাট পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে। এখানে হাট থেকে আম কিনে বিভিন্ন মোকামে নিয়ে যান পাইকাররা। এই মোকামগুলোতে প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ী রয়েছেন। দীর্ঘদিন থেকে এই ব্যবসায়ীরাই সিন্ডিকেট করে স্থানীয় আমচাষি ও বিক্রেতাদের ঠকাচ্ছে। চক্রটি কয়েক বছর ধরেই ঢলন ও শোলা প্রথার নামে চাষিদের নানাভাবে ঠকাচ্ছে। কিন্তু একাধিকবার সমাধানের জন্য আলোচনা করেও সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না খোদ প্রশাসনও। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ঢলন প্রথা বাতিল করে কেজি দরে আম কেনা-বেচার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ৪০ কেজিতে মণ ক্রয় করা নির্দেশ দেওয়া হলেও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আড়ৎদাররা আম ক্রয় করছেন ৫০-৫২ কেজিতে মণ হিসেবে। প্রতি মণে ঢলন নেওয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১২ কেজি।

আম চাষিরা বলছেন, বাজারের আম ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁরা একরকম জিম্মি। তাঁরা যেভাবে পারছেন বিক্রেতাদের লুটছেন। প্রতি মণে ঢলন দিতে হচ্ছে ১০-১২ কেজি। জেলা প্রশাসক কেজি দরে আম কেনার নির্দেশ দিলেও কোনো সুফল মিলছে না তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আম পচনশীল তাই ঢলন নেওয়া হয়। কৃষকের কাছ থেকে আম কেনার পর আম পচে যায়, নষ্ট থাকে, ছোট আম বের হয় আবার পেকে গেলে ওজন কমে যায়। সে কারণে ঢলন নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যমান উচ্চ তাপমাত্রা ও বৃষ্টিহীনতার কারণে আমের ক্ষেত্রে ‘ফোর্স রাইপেনিং’ সিনড্রোমের ঘটনা ঘটেছে। বৃষ্টিহীনতার কারণে আমের বোঁটায় থাকা ফ্লুইড শুকিয়ে আপনা-আপনি গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আম। তিনি আরও বলেন, নামলা জাতের আমগুলোও নির্ধারিত টাইম লাইনের দুই সপ্তাহ আগেই গাছে পেকে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে চাষিরা পাকা আম দ্রুত গাছ থেকে নামিয়ে মোকামে তুলছেন। আমরাও খবর নিয়ে দেখেছি এবার অন্য বছরগুলোর তুলনায় মোকামগুলোতে আমের দাম কিছুটা কম। তবে দু-একদিনের মধ্যে যদি বৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের আমের স্থায়িত্ব আরও কিছুদিন বাড়বে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ম্যাঙ্গো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ও বাণিজ্যিক আমচাষি আহসান হাবিব বলেন, অত্যধিক তাপমাত্রা ও গরমের কারণে সব শ্রেণির আম একসঙ্গে পেঁকেছে। দ্বিতীয়ত, ঈদের দীর্ঘ ছুটির কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় নগর-শহরের মানুষ একটানা ১০ থেকে ১৫ দিন গ্রামে অবস্থান করেছেন। এ সময়ে কুরিয়ার সার্ভিসহ পরিবহণ চলাচল সীমিত ছিল। প্রতিবছর ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলো থেকে দলে দলে চালানি ব্যাপারীরা আম কিনতে বৃহৎ আমের মোকাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট বা রাজশাহীর বানেশ্বরে আসতেন। এবার চালানি ব্যাপারীর সংখ্যা খুবই কম। শনিবার থেকে বাইরের চালানি ব্যাপারীরা দু-একজন করে আসছেন এবং তারা আম কিনছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে দেশে ২৮ লাখ টন আম ফলনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলায় ১২ লাখ ৫৫ হাজার টন আম ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলাভেদে এবারও আম উৎপাদনে শীর্ষস্থানটি রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার। এ জেলায় চলতি মৌসুমে ৪ লাখ ৫৮ হাজার টন আম ফলনের আশা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আম উৎপাদনের জেলা নওগাঁয় ৩ লাখ ৭৮ হাজার টন আমের ফলন হওয়ার আশাবাদ থাকলেও হাইব্রিড জাতের আম্রপালির ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছু কম উৎপাদন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া রাজশাহীতে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৪৩ টন ও নাটোর জেলায় ১ লাখ ৪৩ হাজার টন আম ফলনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে এবার আমের ফলন বেশ ভালো। তবে তাপপ্রবাহ, অত্যধিক গরম ও একটানা কিছুদিন বৃষ্টিহীনতার কারণে আম দ্রুত পেকে যাচ্ছে। ঈদের লম্বা ছুটির কারণে আম চালান ও পরিবহণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এতে আমের দাম কিছুটা কমেছে। এরপরও ফলন যেহেতু ভালো হয়েছে ফলে চাষিরা সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।

মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,রাজশাহী ।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD