May 25, 2025, 7:33 pm
হেলাল শেখঃ চাঞ্চল্যকর ছিনতাই ও হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার ও লুন্ঠিত সিএনজি উদ্ধার করেছে র্যাব।
১। “বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিলগ্ন থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, খুনী, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেপ্তার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র্যাব ইতোমধ্যে জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
২। আপনারা জানেন গত ১৬ মে ২০২৫ মিরপুর ডিওএইচএস এর ৪ নং গেইট সংলগ্ন এলাকায় একটি অজ্ঞাত লাশ পাওয়া যায়। এই তথ্য র্যাব-৪ এর আভিযানিক দল জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পারি যে অজ্ঞাত লাশটি জনৈক আব্দুল অজিদ@বাচ্চুর যিনি পেশায় একজন সিএনজি চালক ছিলেন। উক্ত ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারিত হলে র্যাব-৪ এর আভিযানিক দল হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে ছায়া তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তে আমরা ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া এবং কুমিল্লায় আসামীদের অবস্থান সনাক্ত করি। পরবর্তীতে র্যাব-৪, র্যাব-৯ এবং র্যাব সদর দপ্তর, ইন্ট উইং এর যৌথ আভিযানিক দল ২২ মে ২০২৫ বিকেলে ঢাকা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া এবং কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে উক্ত হত্যাকান্ড ও সিএনজি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার ও লুন্ঠিত সিএনজি উদ্ধার করে।
৩। গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে জানা যায়, উক্ত ঘটনার সাথে ৬-৭ জন জড়িত ছিল। ঘটনার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ছিনতাই পর্যন্ত এই ৬-৭ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। এই ঘটনা মূলত পরিকল্পনা করা হয় ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায়।
মুসা, সৌরভ এবং ইয়াছিন পরপস্পর বন্ধু এবং তারা ছোট খাটো চুরি ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত ছিল। সেখানে তারা পরিকল্পনা করে একটি সিএনজি ছিনতাইয়ের, যা করতে পারলে তাদের ভাল টাকা পয়সা আসবে। এ ধরনের ছিনতাই ঢাকায় করা সহজ বলে তারা ঢাকায় একটি সিএনজি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পানা মোতাবেক গত ১৫ মে সন্ধ্যায় সৌরভ এবং ইয়াছিন আগারগাঁয়ে মিলিত হয়। তারা মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে একটি উপযুক্ত টার্গেট খোঁজার চেষ্টা করে। আনুমানিক রাত তিনটার দিকে সৌরভ শ্যামলী ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে থেকে আব্দুল অজিদ@বাচ্চুর সিএনজিটি ভাড়া করে। সিএনজিটি নিয়ে ৬০ ফিট পানির ট্যাংকির সামনে পূর্ব থেকে অপেক্ষমান ইয়াছিনকে নিতে আসে। পরিকল্পনা মোতাবেক তারা সিএনজি ড্রাইভারকে সিএনজিটি ঘুরাতে বলে। সিএনজি ড্রাইভার সিএনজি থেকে নেমে সিএনজি ঘুরাতে গেলে তারা অকস্মাৎ মাথার পিছনে থেকে আঘাত করে এবং মুসার পরামর্শে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
তারা বেশ কয়েকটি জায়গায় লাশ ফেলানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর পল্লবী থানাধীন মিরপুর ডিওএইচএস এর ৪ নম্বর অবকাশ ক্যান্টিনের দক্ষিণপাশের্^ সিরামিক প্রাচীরের পাশে ফেলে সাভারে পালিয়ে যায়।
সেখানে তারা সিএনজিটি পরিষ্কার করে সন্ধ্যার দিকে তিনজনে মিলে ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পূর্বাচল পার হওয়ার পরে চোরাই সিএনজি বেচাকেনা চক্রের দলনেতা আল আমিনের সহযোগী শাহজালাল ও দুলাল এসে সিএনজিটিতে উঠে এবং সবাই মিলে ব্রাক্ষণবাড়ীয়ায় চলে যায়। পরদিন আল আমিন এসে শাহজালাল ও দুলালের সহায়তায় পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকায় সিএনজিটি ক্রয় করে কুমিল্লার দেবিদ্বারে নিয়ে যায়। সেখানে সে গাড়িটির রং ও কভার পরিবর্তন করার জন্য একটি ওয়ার্কশপে দেয়। সেখান থেকে গতকাল বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর, ইন্ট উইং এবং র্যাব-৪ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল উক্ত সিএনজিটি উদ্ধার করে এবং ঘটনার সাথে জড়িত চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলোঃ
১। মোঃ সৌরভ সরকার(২০), ঢাকা
২। মোঃ ইয়াছিন মিয়া(২০), ব্রাক্ষণবাড়ীয়া
৩। মোঃ মুসা(২৫), ব্রাক্ষণবাড়ীয়া
৪। মোঃ দুলাল মিয়া(৩২), ব্রাক্ষণবাড়ীয়া
৫। মোঃ শাহজালাল(২৬), ব্রাক্ষণবাড়ীয়া
৫। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।