May 13, 2025, 9:12 pm

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
আমুর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা শাওন ঢাকায় আ-টক ডিসি মফিদুল আলমের নির্দেশনায় গৌরীপুরে ২ মাদ-কাসক্তকে জরি-মানা ও অর্থদ-ন্ড যশোরের বাগআঁচড়া বসতপুরের আলোচিত প্রতা-রক আনোয়ার আট-ক আগৈলঝাড়া থানা দ্বি-বার্ষিক পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত ডিআইজি র‌্যাব-১২ এর অভিযানে ৩,৯২০ পিচ মাদ-কদ্রব্য ই-য়াবা ট্যাবলেটসহ ২ জন মাদ-ক ব্যবসায়ী গ্রে-ফতার বাংলার বাঘ এ কে ফজলুল হক গজারিয়ার গুয়াগাছিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে অ-স্ত্র গু-লি উদ্ধার,আটক ৩ ঝিনাইদহের ২১৩ কিশোরী এসএসসি পরীক্ষার আগেই বিয়ের পীড়িতে ধামইরহাটে আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানে গেট নির্মাণে অনিয়-মের অভি-যোগ মোরেলগঞ্জে সেনা সদস্যর বাড়িতে হাম-লা ভাংচু-র আহত ২
বাংলার বাঘ এ কে ফজলুল হক

বাংলার বাঘ এ কে ফজলুল হক

মো: হায়দার আলী |। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞার মুখে এবার নিবন্ধন স্থগিত হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। গত সোমবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ। এর ফলে, দীর্ঘ ছয় মেয়াদে সরকারে থাকা স্বাধীনতা-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ হারাল।

কমিশনের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠন, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করায়, নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে দলটির নিবন্ধন (নম্বর-০০৬, তারিখ: ০৩/১১/২০০৮) স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গত শনিবার আওয়ামী লীগের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত আসে।
রোববার সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরুর প্রক্রিয়া ঘোষণা করে। এর ২৪ ঘণ্টার মাথায় সরকারের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সকল প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ ও সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়তা নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এই প্রজ্ঞাপনের পর নির্বাচন কমিশন সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বৈঠকে বসে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আব্দুর রহমানেল মাছউদসহ অন্যান্য সদস্যরা।
বৈঠক শেষে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আওয়ামী লীগসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

নিবন্ধন স্থগিতের ভিত্তি সম্পর্কে সাংবাদিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের ধারাবাহিকতায়ই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত করার ক্ষমতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের নিয়ম চালু করে নির্বাচন কমিশন। ওই বছর আওয়ামী লীগ নিবন্ধন পায়- নম্বর ছিল ৬, প্রতীক ‘নৌকা’।

এ পর্যন্ত ৫৫টি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হলেও জামায়াতে ইসলামীর মতো পাঁচটি দলের নিবন্ধন বিভিন্ন সময়ে বাতিল হয়। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত হওয়ায় এখন দেশে নিবন্ধিত দল রয়েছে ৪৯টি। এ নিয়ে পত্রপত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ চায়ের কাপে ঝড় উঠেছে। বিষয়টি টক অফ দ্য কাউন্টিতে পরিনত হয়েছে। এর আগে জামায়াতের একই পরিনত করেছিল বিগত আওয়ামী সরকার। গ্রাম্য ভাষায় একটি প্রবাদ আছে ঘুটা পুরে আর গোবর হাসে। কাঁক কাকের মাংশ খায় না কিন্তু রাজনীতিবিদগণ সুযোগ পেলেও ছাড়ে না।

এর উপরে একটি কলাম লিখার চিন্তাভাবনা করছিলাম। এমন সময় ক্লাস ফোরে পড়া আমার এক রিলেটিভ এসে প্রশ্ন করলো আঙ্কেল বাংলার বাঘ কে? উত্তরে বললাম এ কে ফজলুল হক। সে পাল্টা প্রশ্ন করে বসলো মানুষ কি কোন দিন বাঘ হয়? তাকে বুঝানোর সময় তথ্য উপাত্ত দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করলাম সে বুঝলো তথ্য উপাত্ত নিয়ে লিখার থিম পরিবর্তন করে আল্লাহকে স্মরন করে বাংলার বাঘ এ কে ফজলুল হকের উপর লিখা শুরু করলাম। তিনি বিবিসি জরিপে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির আয়োজনে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিলেন। তার বাণী সমূহ যে জাঁতি তার বাচ্চাদের বিড়ালের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ায়, তারা সিংহের সাথে লড়াই করা কিভাবে শিখবে?
নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে জাতির সহায়তায়। মহত্ত্ব নিয়ে অনাসক্ত হয়ে ব্যক্তিসত্তার স্বকীয়তা ভূলতে হবে; … সে যাই হউক ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলা একটি ‘শ্রোতা জরিপ’-এর আয়োজন করে। বিষয়টি ছিলো – সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে? ৩০ দিনের ওপর চালানো জরিপে শ্রোতাদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ২০ জনের জীবন নিয়ে বিবিসি বাংলায় বেতার অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় ২০০৪-এর ২৬শে মার্চ থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত।বিবিসি বাংলার সেই জরিপে শ্রোতাদের মনোনীত শীর্ষ কুড়িজন বাঙালির তালিকায় চতুর্থ স্থানে আসেন এ কে ফজলুল হক। তিনি অবিভক্ত বাংলার জাতীয় নেতা আবুল কাশেম ফজলুল হক তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতার জন্য ছিলেন সুপরিচিতি। তিনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
সর্বভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ফজলুল হক। তাঁর আপোষহীন ন্যায়নীতি ও অসামান্য বাকপটুতার কারণে রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের কাছে তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন শেরে বাংলা (বাংলার বাঘ) নামে। সর্বভারতীয় রাজনীতির পাশাপাশি গ্রাম বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের জন্য সর্বপ্রথম তিনি একটি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। বরিশাল জেলায় বাকেরগঞ্জের বর্ধিষ্ণু গ্রাম সাতুরিয়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৭৩ সালের ২৬শে অক্টোবর। আইনজীবী কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ ও সাইদুন্নেসা খাতুনের একমাত্র পুত্র ছিলেন তিনি।
এ কে ফজলুল হকের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাড়ির পরিবেশে। বাড়িতেই তিনি আরবি, ফারসি ও বাংলা ভাষায় শিক্ষা লাভ করেছিলেন। পরে তিনি ভর্তি হন বরিশাল জেলা স্কুলে এবং সেখান থেকে ১৮৯০ সালে এন্ট্রাস পাশ করার পর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে। প্রখর মেধাসম্পন্ন ছাত্র ছিলেন ফজলুল হক। পুরনো কলকাতায় সেকালের প্রেসিডেন্সি কলেজ (১৯২৫)
সে সময় প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপক ছিলেন বিশিষ্ট রসায়নবিদ প্রফুল্লচন্দ্র রায়। ফজলুল হকের মেধায় তিনি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। ১৮৯৪ সালে তিনি একই বছরে রসায়ন, গণিত ও পদার্থবিদ্যা তিনটি বিষয়ে অনার্সসহ কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক পরীক্ষা পাশ করেন, যা ছিল একটি বিরল দৃষ্টান্ত। ইংরাজি ভাষায় এমএ পাঠ শুরু করলেও পরে তিনি গণিতশাস্ত্রে এমএ ডিগ্রি নেন ১৮৯৬ সালে। কথিত আছে তিনি ইংরাজি ভাষায় এম.এ. পড়তে গেলে তাঁর এক সহপাঠী তাঁকে বলেছিলেন মুসলমান শিক্ষার্থীরা অঙ্ক পড়তে ভয় পায়। সে কারণেই কি তিনি ইংরাজিতে এম.এ. পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? ওই সহপাঠীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাত্র ছয় মাসের প্রস্তুতি নিয়ে অঙ্কে প্রথম শ্রেণিতে এমএ পাশ করেন ফজলুল হক। তিনি আইনেও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছিলেন এবং কলকাতার খ্যাতনামা আইনজীবী স্যার আশুতোষ মুখার্জির অধীনে আইনের শিক্ষানবিশ হয়েছিলেন। দুবছর শিক্ষানবিশীর পর তিনি কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী হিসাবে আইন ব্যবসা শুরু করেন। যদিও এক বছরের মাথায় পিতার মৃত্যুর পর তিনি ফিরে গিয়েছিলেন বরিশালে এবং সেখানে বরিশাল আদালতে যোগ দিয়েছি। কলকাতা হাইকোর্ট যেখানে ফজলুল হক বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৪০ বছর আইন প্র্যাকটিস করেছেন। আইন ব্যবসা ছেড়ে ফজলুল হক সরকারি চাকরি নিলেন ১৯০৬ সালে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন ফজলুল হক ১৯১১ সালে। আবার তিনি ফিরে গেলেন কলকাতা হাইকোর্টে আইনের পেশায়। সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় তিনি বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষক শ্রমিকদের বাস্তব অবস্থা দেখেছিলেন, প্রত্যক্ষ করেছিলেন তাদের ওপর জমিদার ও মহাজনদের নির্মম অত্যাচার। তাঁর সেই অভিজ্ঞতার আলোকে পরবর্তী জীবনে দরিদ্র নিপীড়িত কৃষক সমাজের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে তিনি প্রবর্তন করেছিলেন ঋণ সালিশী বোর্ড, প্রণয়ন করেছিলেন বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর এনিয়ে বাংলার জনগণ বিভক্ত হয়ে পড়লে, ঢাকার চতুর্থ নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুর মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি সংগঠন তৈরির কথা ভাবেন। তিনি ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্স আহ্বান করেছিলেন। এই সম্মেলন থেকেই জন্ম নেয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন ফজলুল হক। ১৯০৬ সালে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্স যার সূত্র ধরে জন্ম নেয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ।
সেই অর্থে মুসলিম লীগের পথচলার শুরু থেকেই দলটির সঙ্গে ছিলেন তিনি। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি ১৯১৩ সালে এবং ১৯১৬ থেকে ১৯২১ পর্যন্ত তিনি ছিলেন নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভাপতি। ওই একই সময়ে পাশাপাশি তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের যুগ্ম সম্পাদক এবং পরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। দিল্লিতে ১৯১৮ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ফজলুল হকই ছিলেন একমাত্র বাঙালি যিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছিলেন।
লক্ষ্ণৌ শহরে ১৯১৬ সালে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে তিনি যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, তা ‘লক্ষ্ণৌ চুক্তি’ নামে অভিহিত হয়। এই চুক্তির অন্যতম একজন প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন মি. হক। এই চুক্তির মাধ্যমে প্রাদেশিক পর্যায়ে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়। ওই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ এবং মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। উনিশশ চব্বিশ সালে তিনি বাংলার শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন এবং ১৯৩৫ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। তিনিই ছিলেন এ পদে অধিষ্ঠিত প্রথম বাঙালি মুসলমান।
লন্ডনে ১৯৩১ সালে অনুষ্ঠিত ভারতীয় শাসনব্যবস্থা বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক। ভারতের ভবিষ্যত শাসনতন্ত্রের রূপরেখা নিয়ে আলোচনার জন্য ১৯৩০ এবং ১৯৩২ সালের মধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পরপর বেশ কয়েকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তদানীন্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র‌্যামসে ম্যাকডোনাল্ডের সভাপতিত্বে।
লন্ডনে অনুষ্ঠিত ১৯৩০-৩১ সালের প্রথম বৈঠকে কংগ্রেসের যোগদান প্রত্যাখান করেছিলেন মি. গান্ধী। দ্বিতীয় বৈঠকে অবশ্য যোগ দিয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু মুসলিম লীগ ওই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছিল। ফজলুল হক ওই বৈঠকে বাংলা এবং পাঞ্জাবের মুসলমানদের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিত্ব দাবি করেছিলেন। তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচনের পক্ষেও বক্তৃতা দিয়েছিলেন। অবিভক্ত বাংলা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন পাবার পর ১৯৩৭ সালে সেখানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ব্রিটিশ ভারতে প্রজা পার্টি নামে সামন্ততন্ত্র বিরোধী যে দল ছিল ফজলুল হক সেটির রূপান্তর ঘটান কৃষক-প্রজা পার্টি নামে রাজনৈতিক দলে।
ওই নির্বাচনে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদে তাঁর দল তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ এবং নির্দলীয় সদস্যদের সঙ্গে জোট গঠন করেন মি. হক এবং এ. কে ফজলুল হক হন অবিভক্ত বাংলার প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত হয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশন। ২২ থেকে ২৪শে মার্চ তিনদিনের ওই অধিবেশনে এক জ¦ালাময়ী বক্তৃতায় প্রথম ‘পাকিস্তান গঠনের প্রস্তাব’ পেশ করেন বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক। বাংলার দরিদ্র কৃষকদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য ফজলুল হক আইনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব এবং উত্তরপশ্চিমের মুসলমান প্রধান অংশে ‘স্বায়ত্তশাসিত পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার দাবি সম্বলিত সেই প্রস্তাব গৃহীত ও পাশ হয় ওই অধিবেশনে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে ‘লাহোর প্রস্তাব’ ছিল একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা পরে ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ নামে পরিচিত হয়। তাঁর ওই বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে পাঞ্জাববাসীরা তাঁকে উপাধি দিয়েছিল শের-ই-বঙ্গাল অর্থাৎ বাংলার বাঘ। তখন থেকে তিনি শেরে-বাংলা নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
১৯৩৭ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদের দীর্ঘ প্রধানমন্ত্রীত্বকালে তিনি বহু জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। এ সময়ে তিনি ‘ঋণ সালিশী বোর্ড’ গঠন করেন, যার ফলে দরিদ্র চাষীরা সুদখোর মহাজনের কবল থেকে রক্ষা পায়। ভারত ও পাকিস্তান পৃথক হয়ে যাবার পর ফজলুল হক ঢাকায় চলে যান এবং ১৯৫২ সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের অ্যাডভোকেট জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৫৪ সালে দেশের সাধারণ নির্বাচনে তিনি ‘যুক্তফ্রন্ট’ দলের নেতৃত্ব দিয়ে বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
এরপর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র গৃহীত ও কার্যকর হবার পর তিনি স্বারষ্ট্রমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়ে করাচি থেকে ঢাকা চলে যান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর পদের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ঢাকায় তিন নেতার মাজার- বাংলার স্বাধীনতা-পূর্ব তিন রাজনৈতিক নেতা এ কে ফজলুল হক, খাজা নাজিমুদ্দিন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সমাধি। এই পদে তিনি ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন। আটান্ন সালে পাকিস্তানের এক অভ্যূত্থানের পর তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়।
১৯৪০ সালে ফজলুল হকের প্রচেষ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল প্রতিষ্ঠিত হয়। একই বছরে তাঁর প্রচেষ্টায় মুন্সিগঞ্জে প্রতিষ্ঠা হয় হরগঙ্গা কলেজ। তাঁর নিজের গ্রামেও তিনি একটি কলেজ এবং পাশাপাশি মাদ্রাসা ও হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফজলুল হকের উদ্যেগে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইসলামিয়া কলেজ ও মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লেডি ব্র্যার্বোন কলেজ।এছাড়া তিনি মুসলমানদের শিক্ষিত করে তুলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছিলেন। শিক্ষা বিস্তারে তিনি অনন্য অবদান রেখেছেন। ১৯৬২ সালের ২৭শে এপ্রিল।এ কে ফজলুল হকের জীবনাবসান হয় ঢাকায়।

লেখক : মোঃ হায়দার আলী
গোদাগাড়ী উপজেলা শাখা,

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD