May 9, 2025, 8:37 pm

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
সুনামগঞ্জে শনিবার বিদ্যুৎ থাকবেনা সকাল ৭ থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত আশুলিয়ার চাঞ্চল্যকর রুবেল হ-ত্যাকান্ডের মূল হো-তাকে গ্রেফ-তার করেছে র‌্যাব-৪ নড়াইলে যুবকের ম-রদেহ উ-দ্ধার র‌্যাব-১২ এর অভি-যানে কষ্টিপাথরসহ ৩ জন পাচা-রকারী গ্রেফ-তার গোদাগাড়ীতে মাদ-ক ও বা-ল্য বিয়ে কে না বলি” ইউএনও ফয়সাল আহমেদ নড়াইলে পুলিশের অভি-যানে দুই ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪ জন গ্রে-ফতার আশুলিয়ায় ছাত্র জনতা হ-ত্যার একাধিক মামলার আসামি জামাই রনি আহমেদকে গ্রে-ফতার গোদাগাড়ী বাল্য বিয়ে ব-ন্ধ করলেন ইউএনও। রাজশাহী ১ আসনের সাবেক প্রভাবশালী এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ‘বডিগার্ড’ গ্রে-প্তার গোদাগাড়ীতে আ.লীগ নেতা নজরুল ইসলাম গ্রে-প্তার
ভারতীয়  নাগরিকের জা-লিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশী  জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে

ভারতীয়  নাগরিকের জা-লিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশী  জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে

মো. মোঃ বাবুল হোসেন. পঞ্চগড় :

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় দুই ভারতীয় নাগরিক নিজেদের পরিচয় গোপন করে বাংলাদেশি পরিচয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। 

 অনুসন্ধানে জানা যায়, ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধান এবং বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধানের পরিচয় অনুযায়ী ভারত ও বাংলাদেশে তাদের ঠিকানা আলাদা।  ভারতীয় আধার ও নির্বাচন কমিশনের পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তাদের স্থায়ী ঠিকানা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি থানার পশ্চিম মাগুরমারী গ্রামে। ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধানের আধার নাম্বর: ৪৪১৭০৩৯৫৪৩৯৪,নির্বাচন কমিশনের পরিচয়পত্র নাম্বর: WB/03/015/222490 এবং বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধানের আধার নাম্বর: ৬৪৬৭২৫৮০৯৪৩৪, নির্বাচন কমিশনের পরিচয়পত্র নাম্বর: JLG3534427 । তারা ভারতীয় নাগরিক পরিচয় গোপন রেখে  জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেদের জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র সহ  বাংলাদেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী  তাদের ঠিকানা দেখানো হয়েছে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের জায়গীর পাড়া। ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধানের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বর: ১০৪৬৭৪৬২২৬, জন্ম নিবন্ধন নাম্বর: ১৯৫৪৭৭১২৫৮০০১৩৯৭২ এবং বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধানের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বর: ৭৩৭৯১১৩০৭৪,জন্ম নিবন্ধন নাম্বর: ১৯৫৭৭১২৫৮০০১৪০২০। বজেন্দ্র নাথের ছেলে হিতেন রায় প্রধান ভারতের আসাম রাইফেলস নামক আধা সামরিক বাহিনীতে কর্মরত।  তারা দুজনে ভারতীয় নাগরিক হলেও বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট  ইউনিয়নের জায়গীর পাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা পরিচয়ে ভুয়া নাগরিক সনদ, হোল্ডিং ট্যাক্সের কাগজ, ওয়ারিশ সনদ সবই তৈরি করেন জালিয়াতির মাধ্যমে। এই কাগজপত্র দিয়ে বোদা উপজেলা নির্বাচন অফিস তাদের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করে গত বছর ১১ ডিসেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করেন। অভিযুক্তরা জালিয়াতির মাধ্যমে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রই সংগ্রহ করেননি, বরং সেই পরিচয় ব্যবহার করে দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে ওয়ারিশ সনদও গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও, তারা বাংলাদেশি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন এবং মোবাইল অপারেটরের সিমকার্ড সংগ্রহ করেছেন।

এদিকে সরেজমিনে বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের জায়গীরপাড়া এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধান ও বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধান নামে কেউ ওই এলাকায় বসবাস করেন না। এমন নামের কোনো ব্যক্তিকে তারা কখনও দেখেননি বা চেনেন না বলেও জানান স্থানীয়রা। জায়গীর পাড়া গ্ৰামের ষাট উর্ধো দূর্লভ চন্দ্র বলেন, দেশ স্বাধীনের সময় আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। আমার জানামতে এই এলাকায় ভবেন্দ্র নাথ, বজেন্দ্র নাথ নামে কোন লোক আগেও ছিল না। এখনো এই নামে কেউ নেই। একই গ্ৰামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের জায়গীর পাড়া এলাকায় ভবেন্দ্র নাথ এবং বজেন্দ্র নাথ এই নামে কেউ নেই। তারা এই এলাকার ঠিকানা দিয়ে কীভাবে এখানকার নাগরিক হলো তারাই ভালো জানে। এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে যাচাইকারী হিসেবে স্বাক্ষর করতে হয়। কিন্তু ভবেন্দ্র নাথ ও বজেন্দ্র নাথের জাতীয় পরিচয়পত্রে তার কোনো স্বাক্ষর নেই বলে জানান মাড়েয়া ইউনিয়নের ৭ নাম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, এই লোকগুলোকে আমি চিনিও না, কখনও দেখিও নাই। জাতীয় পরিচয়পত্র কারা করেছে, কীভাবে করেছে-সে বিষয়েও আমার কোনো ধারণা নেই। আমি কোনো স্বাক্ষর দেই নাই। এদিকে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনে উল্লেখিত জন্ম নিবন্ধন নাম্বার, হোল্ডিং নাম্বারের সূত্র ধরে মাড়েমা বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায় ভবেন্দ্র নাথ এবং বজেন্দ্র নাথ যেই জন্মনিবন্ধন নাম্বার উল্লেখ করেছেন তা অন্য ব্যক্তির। এছাড়া যেই হোল্ডিং নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছিল জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনে তার সাথেও বাস্তবে কোন মিল নেই।

এবিষয়ে অভিযুক্ত ভারতীয় নাগরিক বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধানের সঙ্গে সাংবাদিক পরিচয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, “আপনি যেই হোন না কেন, আমাকে সরাসরি ফোন দেওয়ার কোনো অধিকার আপনার নেই।

ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধানের নামে নিবন্ধিত একটি গ্রামীণফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি রিসিভ করেন দেবীগঞ্জ উপজেলার কাদেরের মোড় এলাকার মোস্তফা নামের এক ব্যক্তি। ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উনার নাম্বার আমার কাছে আছে। আমি আদালতে তার একটি মামলা দেখাশোনা করছি।”

এবিষয়ে মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম জানান, তারা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বামনহাট ইউনিয়নের জায়গীর পাড়া এলাকা থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র উত্তোলন করেছেন। এই বিষয়টি আমি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিষয়টি তদন্ত করে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দুটি বাতিল করার জন্য লিখিতভাবে অবগত করি।

বোদা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তকদির আলী সরকার জানান ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিলের আবেদন পাওয়ার পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি সেই আবেদন ফরয়াডিং আকারে ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধান এবং বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধানের বাতিলের নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠিয়েছেন। 

এবিষয়ে মুঠোফোনে বোদা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা  তকদির আলী সরকার বলেন, তারা যখন জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন করেন তখন সব কাগজপত্র ঠিক ছিল। পরবর্তীতে মাড়েয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জালিয়াতির বিষয়টি জানালে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল করা হবে।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার নজীর বলেন, মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কর্তৃক আমার কাছে এরকম একটি অভিযোগ এসেছিল। আমি তৎক্ষণাৎ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আমি তৎক্ষণাৎ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসারের নিকট পাঠিয়েছি এবং তিনি ইতোমধ্যে তা বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠিয়েছেন। 

জেলার সচেতন মহল মনে করেন, এমন পরিস্থিতি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক বড় ধরনের সংকেত। সেক্ষেত্রে, এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরছে।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD