May 1, 2025, 11:59 pm

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
মফস্বল সাংবাদিকতায়, উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও ঝুকি বেশী। দেশে সাংবাদিকতাই শ্রেষ্ঠ পেশা হবে কবে? বীরগঞ্জে শ্রমিক-মালিক এক হয়ে গড়বো দেশ স্লোগানে মে দিবস পালিত রাসুল পাক (সাঃ) এঁর ক-টুক্তিকারী মোজাম্মেল হককে গ্রেফতারের দাবীতে তাওহিদী জনতার সংবাদ সম্মেলন মে দিবস আসে মে দিবস চলে যায় শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন নাহি হয় রাজশাহীতে ডিভোর্সি এক নারীর ঘর থেকে পুলিশ কনস্টেবল আটক রাজশাহীতে আসামী কাউন্সিলর কামাল হোসেন পুলিশ দেখে মৃ-ত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন নড়াইলের মধুমতী নদীর অসময়ে ভাঙছে বিপাকে নদী পাড়ের মানুষ শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি বুঝিয়ে দিন: বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ বানারীপাড়ায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলাদ হোসেন সানা আটক শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের বানেশ্বরে মহান মে দিবস
মে দিবস আসে মে দিবস চলে যায় শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন নাহি হয়

মে দিবস আসে মে দিবস চলে যায় শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন নাহি হয়

লেখকঃ মোঃ হায়দার আলীঃ অনেক কয়েক বছর পর দেশে বিএনপি, জামায়াত ঘটা করে কেন্দ্রীয়ভাবে পালন করছেন। তাছাড়া অন্য রাজনৈতিক দল, এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মে দিবস পালন করছরন। টিভি চ্যালেন, পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মে দিবস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে কিছু লিখা প্রয়োজন মনে করে ল্যাপটপ ওপেন করে তথ্য উপাত্তসহ আল্লাহর নাম স্মরণকরে লিখতে বসলাম।
পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মহান মে দিবস। শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দুর্বার আন্দোলনের রক্তস্রোত স্মৃতি বিজড়িত এই মে দিবস। শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রমিকদের প্রতি অবিচারের অবসান ঘটাবার সুতিকাগার বলা হয় মে দিবসকে।
শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলাম বদ্ধপরিকর। পৃথিবীর প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হযরত আদমই (আ)শুধু নন; সকল নবী-রাসূল এমনকি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) শ্রমিকের অধিকার ও শ্রম আইনের পথপ্রদর্শক।

মিশকাত শরিফে মহানবী (সা.) শ্রমিকের অধিকার সম্পর্কে এরশাদ করেছেন, ‘শ্রমিকদের ঘাম শুকানোর আগেই তাদের মজুরী পরিশোধ করে দাও’।
আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের অধীন লোকেরা তোমাদের ভাই,আল্লাহ যে ভাইকে তোমার অধীন করে দিয়েছেন তাকে তাই খেতে দাও,যা তুমি নিজে খাও।তাকে তাই পরিধান করতে দাও যা তুমি নিজে পরিধান কর’। বুখারী
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ ‘কেউ তার অধীনস্তকে অন্যায়ভাবে এক দোররা মারলেও কিয়ামতের বিচারের দিনে তার থেকে এর বদলা নেয়া হবে’।-তাবরানী
মহানবী (সা) শ্রমিককে আপনজনের সাথে তুলনা করে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের আপনজন ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে যেমন ব্যবহার কর, তাদের সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করবে।’
উমর ইবনে হুরাইস (রা) হতে বর্ণিত নবী করীম (সা) বলেছেন তোমরা তোমাদের কর্মচারীদের থেকে যতটা হাল্কা কাজ নিবে তোমাদের আমলনামায় ততটা পুরস্কার ও পূর্ণ লেখা হবে। প্রায় দেড়শত বছর আগে শ্রমিকদের মহান আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় শ্রমজীবী মানুষের বিজয়ের ধারা।

সেই বিজয়ের ধারায় উদ্ভাসিত বর্তমান বিশ্বের সকল প্রান্তের প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর যথাযথ মর্যাদায় ও গুরুত্বের সাথে সারাবিশ্বে উদযাপিত হয়ে আসছে মহান মে দিবস। পৃথিবীর মেহনতি মানুষের কাছে এ দিনটি একদিকে যেমন খুবই তাৎপর্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ তেমনি অনেক বেশী আবেগ ও প্রেরণার। বিশেষ করে পৃথিবীর কোটি কোটি শ্রমিক জনগোষ্ঠীর কাছে এ দিনটির ত্যাগ-মহিমা ও তাৎপর্য সবচেয়ে বেশি । কারণ এ দিনটির মাধ্যমে তারা তাদের কাজের প্রকৃত স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই ঐতিহাসিক মে দিবস বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ শ্রমিকের মর্যাদা রক্ষার দিন। তাদের ন্যায্য পাওনা আদায় তথা অধিকার আদায়ের দিন। শ্রমিকদের অস্তিত্ব ঘোষণার দিন।

মে দিবসের প্রেক্ষাপট: একজন শ্রমিকের সবচেয়ে বড় অধিকার বা দাবী হল, তার শ্রমের যথোপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভ করা। উনিশ শতকের গোড়ার দিককার কথা। তখন দেশে দেশে পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষের কষ্টের সীমা ছিল না। মালিকেরা নগণ্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে দরিদ্র মানুষের শ্রম কিনে নিতেন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাড়ভাঙা শ্রম দিয়েও শ্রমিক তার ন্যায্য মূল্য পেতেন না। মালিকেরা উপযুক্ত মজুরি তো দিতেনই না, বরং তারা শ্রমিকের সুবিধা-অসুবিধা, মানবিক অধিকার ও দু:খ-কষ্ট পর্যন্ত বুঝতে চাইতেন না। মালিকেরা তাদের অধীনস্থ শ্রমিককে দাসদাসীর মতো মনে করতেন। আর তাদের সাথে পশুর মতো ব্যবহার করতেন। সুযোগ পেলেই মালিকেরা শ্রমিকের ওপর চালাতেন নানা শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন। বলতে গেলে শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকারও তখন রক্ষিত হতো না। শ্রমিকের শরীরের ঘাম আর সীমাহীন শ্রমের বিনিময়ে মালিক অর্জন করতেন সীমাহীন সম্পদ অথচ তার ছিটেফোঁটাও শ্রমিকের ভাগ্যে জুটত না। সপ্তাহে ৬ দিনের প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘন্টার অমানবিক পরিশ্রম করতো কিন্তু তার বিপরীতে মিলত নগন্য মজুরী। যা দিয়ে শ্রমিকের সংসার চলত না, স্বজনের মুখে তিন বেলা খাবার তুলে দেয়া সম্ভব হতো না। পরিবার-পরিজন নিয়ে শ্রমিকের জীবন ছিল দুর্বিষহ। অনিরাপদ পরিবেশে রোগ-ব্যধি, আঘাত, মৃত্যুই ছিল তাদের নির্মম সাথী।

শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার ও দাবিদাওয়ার কথা মন খুলে মালিক সমাজকে বলতে পারতো না। এমনকি তাদের পক্ষ হয়ে বলার মতও কেউ ছিলনা। কাজের যেমন সুনির্দিষ্ট সময় ছিল না, তেমনি ছিল না সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটি এবং চাকরির স্থায়িত্ব ও মজুরীসহ সকল বিষয় ছিল মালিকের ইচ্ছাধীন বিষয়। তখন নির্ধারিত কোন ছুটি ছিল না, বেতন বা মজুরির কোন স্কেল বা পরিমাণ ছিল না, চরম বিপদের দিনেও শ্রমিকরা ছুটি পেতনা। দায়িত্বপালন কালে দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু ঘটলে তার পরিবারকে কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হতো না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিন-রাতে প্রায়ই ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করতো তারা। শ্রমিকরা তাদের দাবি দাওয়ার কথা বললে মালিকরা তাদের ওপর ক্ষেপে যেতো, এমনকি মালিকদের ভাড়াটে মাস্তানরা তাদের ওপর জুলুম করতো। মালিকরা শ্রমিকদের কলুর বলদের মতো খাটাতো। তাদের ওপর অতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দিতো। এতে শোষণ-নিপীড়ন ও বঞ্চনাই শ্রমিকের পাওনা হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে মালিকের সীমাহীন অনাচার, অর্থলিপ্সা ও একপাক্ষিক নীতির ফলে শ্রমিকদের মনে জমতে শুরু করে প্রচ- ক্ষোভ ও দ্রোহ। এমন অত্যাচার যখন তাদের ওপর চলছিল তখন শ্রমিকরা প্রতিবাদী হয়ে উঠে। প্রথম দিকে তাদের তো প্রতিবাদ করার সাহস ছিল না। ধীরে ধীরে শ্রমিকরা সব শ্রেণীর শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে শুরু করলো। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রথমে ১০ ঘণ্টা কাজের দাবি ও তাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য আন্দোলন করলো। বিশ্বের মধ্যে প্রথম ‘ট্রেড ইউনিয়ন ফিলাডেলফিয়ার মেকানিক ইউনিয়ন’ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। তাদের এ দাবি মালিকপক্ষও মেনে নেন; কিন্তু মুখ দিয়ে মেনে নিলেও বাস্তবে শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন অব্যাহতই রাখে।

মে দিবসের ইতিহাস: ১৮৬০ সালে শ্রমিকরাই মজুরী না কেটে দৈনিক ৮ ঘন্টা শ্রম নির্ধারনের প্রথম দাবি জানায়। কিন্তু কোন শ্রমিক সংগঠন ছিলনা বলে এই দাবী জোরালো করা সম্ভব হয়নি। এই সময় সমাজতন্ত্র শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে। শ্রমিকরা বুঝতে পারে বনিক ও মালিক শ্রেণীর এই রক্ত শোষণ নীতির বিরুদ্ধে তাদের সংগঠিত হত হবে। ১৮৮০-৮১ সালের দিকে শ্রমিকরা প্রতিষ্ঠা করে Federation of Organized Trades and Labor Unions of the United States and Canada [1886 সালে নাম পরিবর্তন করে করা হয় American Federation of Labor] এই সংঘের মাধ্যমে শ্রমিকরা সংগঠিত হয়ে শক্তি অর্জন করতে থাকে। ১৮৮৪ সালে সংঘটি ‘৮ ঘন্টা দৈনিক মজুরী’ নির্ধারনের প্রস্তাব পাশ করে এবং মালিকও বনিক শ্রেণীকে এই প্রস্তাব কার্যকরের জন্য ১৮৮৬ সালের ১লা মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। তারা এই সময়ের মধ্যে সংঘের আওতাধীন সকল শ্রমিক সংগঠনকে এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে সংগঠিত হওয়ার পুনঃ পুনঃ আহবান জানায়। প্রথম দিকে অনেকেই একে অবাস্তব অভিলাষ, অতি সংস্কারের উচ্চাকাংখা বলে আশংকা প্রকাশ করে। কিন্তু বনিক-মালিক শ্রেণীর কোন ধরনের সাড়া না পেয়ে শ্রমিকরা ধীরে ধীরে প্রতিবাদি ও প্রস্তাব বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে থাকে। এ সময় এলার্ম নামক একটি পত্রিকার কলাম- ‘একজন শ্রমিক ৮ ঘন্টা কাজ করুক কিংবা ১০ ঘন্টাই করুক, সে দাসই’ যেন জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢালে। শ্রমিক সংগঠনদের সাথে বিভিন্ন সমাজতন্ত্রপন্থী দলও একাত্মতা জানায়। ১লা মে কে ঘিরে প্রতিবাদ, প্রতিরোধের আয়োজন চলতে থাকে। আর শিকাগো হয়ে উঠে এই প্রতিবাদ প্রতিরোধের কেন্দ্রস্থল।

১লা মে এগিয়ে আসতে লাগল। মালিক-বনিক শ্রেণী অবধারিতভাবে ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। ১৮৭৭ সালে শ্রমিকরা একবার রেলপথ অবরোধ করলে পুলিশ ও ইয়ুনাইটেড স্টেটস আর্মি তাদের উপর বর্বর আক্রমন চালায়। ঠিক একইভাবে ১লা মে কে মোকাবেলায় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রস্তুতি চলতে থাকে। পুলিশ ও জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা শিকাগো সরকারকে অস্ত্র সংগ্রহে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে। ধর্মঘট আহবানকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য শিকাগো বানিজ্যিক ক্লাব ইলিনয় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ২০০০ ডলারের মেশিন গান কিনে দেয়। ১লা মে সমগ্র যুক্ত্ররাষ্ট্রে প্রায় ৩০০,০০০ শ্রমিক তাদের কাজ ফেলে এদিন রাস্তায় নেমে আসে। শিকাগোতে শ্রমিক ধর্মঘট আহবান করা হয়, প্রায় ৪০,০০০ শ্রমিক কাজ ফেলে শহরের কেন্দ্রস্থলে সমবেত হয়। অগ্নিগর্ভ বক্তৃতা, মিছিল-মিটিং, ধর্মঘট, বিপ্লবী আন্দোলনের হুমকি সবকিছুই মিলে ১লা মে উত্তাল হয়ে উঠে। পার্সন্স, জোয়ান মোস্ট, আগস্ট স্পীজ, লুই লিং সহ আরো অনেকেই শ্রমিকদের মাঝে পথিকৃত হয়ে উঠেন। ধীরে ধীরে আরো শ্রমিক কাজ ফেলে আন্দোলনে যোগ দেয়। আন্দোলন কারি শ্রমিকদের সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় ১ লাখে।

৩ মে (কারো কারো মতে ৪মে) ১৮৮৬ সালে সন্ধ্যাবেলা হালকা বৃষ্টির মধ্যে শিকাগোর হে-মার্কেট বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হন। আগস্ট স্পীজ জড়ো হওয়াশ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলছিলেন। হঠাৎ দূরে দাঁড়ানো পুলিশ দলের কাছে এক বোমার বিস্ফোরন ঘটে, এতে এক পুলিশ নিহত হয় এবং ১১ জন আহত হয়, পরে আরো ৬জন মারা যায়। পুলিশবাহিনীও শ্রমিকদের উপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে যা সাথে সাথেই রায়টের রূপ নেয়। রায়টে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন। পুলিশ হত্যা মামলায় আগস্ট স্পীজ সহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।১৮৮৬ সালের ৯ অক্টোবর বিচারের রায়ে তাদের মৃত্যুদন্ড-দেয়া হলো। কিন্তু এ রায় মেনে নিতে পারেননি শ্রমিক নেতাদের পরিবার। তারা রায়ের প্রতিবাদ করলেন, সমাবেশ করলেন, মিছিল, বক্তৃতা দিলেন। দেশ-বিদেশের সরকারের কাছে সাহায্য চাইলেন। কিন্তু তাদের প্রতিবাদ কোনো কাজে এলো না এবং শ্রমিক নেতাদের মৃত্যুদন্ড মওকুফ হলো না, বরং আবেদন অগৃহীত হয়ে ফাঁসির রায় অব্যাহত রইল। শ্রমিক নেতাদের দেখার জন্য তাদের পরিবারের সদস্যদেরও কোনো সুযোগ দেয়া হলো না।এক প্রহসনমূলক বিচারের পর ১৮৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর উন্মুক্ত স্থানে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। লুই লিং একদিন পূর্বেই কারাভ্যন্তরে আত্মহত্যা করেন, অন্য একজনের পনের বছরের কারাদন্ড হয়। ফাঁসির মঞ্চে আরোহনের পূর্বে আগস্ট স্পীজ বলেছিলেন, “আজ আমাদের এই নি:শব্দতা, তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে”। ২৬শে জুন, ১৮৯৩ ইলিনয়ের গভর্ণর অভিযুক্ত আট জনকেই নিরপরাধ বলে ঘোষণা দেন এবং রায়টের হুকুম প্রদানকারী পুলিশের কমান্ডারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। আর অজ্ঞাত সেই বোমা বিস্ফোরণকারীর পরিচয় কখনোই প্রকাশ পায়নি।

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস: শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের “দৈনিক আট ঘন্টা কাজ করার” দাবী অফিসিয়াল স্বীকৃতি পায়। শ্রমিক নেতাদের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ১৮৮৯ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মে দিবসকে আর্ন্তজাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনের উক্ত গৌরবময় অধ্যায়কে স্মরণ করে ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছরের ১লা মে বিশ্বব্যাপী পালন হয়ে আসছে “মে দিবস” বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস”।১৮৯০ সালের ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিষ্ট কংগ্রেসে’ ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষনা করা হয় এবং তখন থেকে অনেক দেশে দিনটি শ্রমিক শ্রেনী কর্তৃক উদযাপিত হয়ে আসছে। রাশিয়াসহ পরবর্তীকালে আরো কয়েকটি দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবসংঘটিত হবার পর মে দিবস এক বিশেষ তাৎপর্য অর্জন করে। জাতিসংঘে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শাখা হিসাবে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আই.ত্রল.ও প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার সমূহ স্বীকৃতি লাভ করে এবং সকল দেশে শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের তা মেনে চলার আহবান জানায়।

বিশ্বব্যাপী মে দিবস উদযাপন: ১৮৮৯ সালের প্যারিস সম্মেলনে স্বীকৃতির পর থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মে দিবস উদযাপন শুরু হয়। ১৮৯০ সালে গ্রেট ব্রিটেনের হাউড পার্কে বিশাল সমারোহে উদযাপন করা হয় প্রথম আন্তর্জাতিক মে দিবস। যুক্তরাষ্ট্রেও প্রথম মে দিবস পালন করা হয় একই বছর। ফ্রান্সে দিবসটি পালন করা হয় শ্রমিকদের বিশাল মিছিল ও সমাবেশের মাধ্যমে। রাশিয়ায় প্রথম ১৮৯৬ সালে এবং চীনে ১৯২৪ সালে আন্তর্জাতিক মে দিবস উদযাপন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পরে এই রীতি ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি মহাদেশে। বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা ও ওশেনিয়া মহাদেশের প্রায় প্রতিটি উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত ছোট বড় সব দেশেই প্রতি বছর পালিত হয় আন্তর্জাতিক মে দিবস।

বাংলাদেশে মে দিবস পালন এবং শ্রমিকদের বাস্তবতা: বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং আই.এল.ও কর্তৃক প্রণীত নীতিমালার স্বাক্ষরকারী একটি দেশ।এই দেশে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা অনেক। শ্রমিক দিবসের প্রেরণা থেকে বাংলাদেশ মোটেও পিছিয়ে নেই। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শাসন থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে মে দিবস পালিত হয়। ঐ বছর সদ্য স্বাধীন দেশে পয়লা মে সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়। তারপর থেকে আজও পয়লা মে সরকারি ছুটির দিন বহাল আছে। এদিন শ্রমিকরা মহা উৎসাহ ও উদ্দীপনায় পালন করে মে দিবস। তারা তাদের পূর্বসূরীদের স্মরণে আয়োজন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। শ্রমিক সংগঠনগুলো মে দিবসে আয়োজন করে নানা ধরণের সাংস্কৃতিক ও কল্যাণমুখী কর্মসূচীর। বাংলাদেশের শ্রমিকরা এদিন তাদের নিয়মিত কাজ থেকে সাময়িক অব্যহতি পেয়ে থাকে। আনন্দঘন পরিবেশে তারা উদযাপন করে মহান মে দিবস। রাষ্ট্রের সরকারি দল ও বিরোধী দলসহ অন্যান্য বিভিন্ন সংগঠনও দিনটি পালন করে থাকে। এদিন দেশের সকল প্রচারমাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় শ্রমিকদের পক্ষে সভা-সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়।

প্রতিবছর মে দিবস উদযাপনের মধ্যদিয়ে শ্রমিকরা একদিকে যেমন তাদের অধিকার আদায়ের রক্তাক্ত ইতিহাসকে স্মরণ করে তেমনি স্বপ্ন দেখে তাদের অধিকারের ষোলআনা প্রাপ্তির। বাংলাদেশের শ্রমিকরাও নিঃসন্দেহে এর বাহিরে নয়। কিন্তু আজও বাংলাদেশের শ্রমিকদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি।বাংলাদেশের শ্রমিকদের দিকে তাকালে আমরা আজও দেখতে পাই মালিক শ্রেণী কিভাবে তাদেরকে শোষণ করছে।মালিক শ্রেণীর শোষনের ফলে অসহায়ের মতো শ্রমিকদেরকে প্রাণ দিতে হচ্ছে। ২০১৩ সনের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সাভারে রানা প্লাজায় শ্রমিকদের উপর স্মরণকালের ভয়াবহ ভবন ধসে প্রায় বার শতাধিক নিরহ শ্রমিকের করুণ মৃত্যুপুরো জাতিকে শোকাহত করে।ঘটনার পাঁচ বছর পুর্ণ হলেও রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে নিখোঁজ ১০৫ জন শ্রমিকের সন্ধান আজও মিলেনি, এমনকি অনেকের কপালে ক্ষতিপূরণের অর্থও জোটেনি। এর পূর্বে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের গার্মেন্ট কারখানায় আগুন লেগে ১১১ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যায়। এর আগে ২০১০ সালে হামিম গামেন্টসসহ তিনটি গার্মেন্টসে অনেক শ্রমিকের প্রাণ চলে যায়।এসবের অধিকাংশ ঘটনা ঘটেছে শুধুমাত্র মালিক শ্রেণীর গাফলতির কারণে। এভাবে প্রায় প্রতি বছর গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোয় বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এসব দুর্ঘটনায় অনেক নারী-পুরুষ-শিশু মারা যায়। দুর্ঘটনায় যেসব শ্রমিক মারা যায়, তাদের পরিবারের রুটি-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তারা চোখেমুখেঅন্ধকার দেখে। আর মালিক শ্রেণীরা এ থেকে রেহায় পেয়ে যাচ্ছে। যদি সরকারীভাবে প্রতিটি দুর্ঘটনা ঘটার সাথে সাথে সঠিক তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচার করা হতো তাহলে এতো দুর্ঘটনা ঘটতো না।

আজকের এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য বেতন পাচ্ছে না। যেখানে শ্রমিক আন্দোলন হয়েছিল ৮ ঘন্টা কর্ম দিবসের জন্য। যেখানে বাংলাদেশের গার্মেন্টগুলোতে এখনও ৮ ঘন্টার পরিবর্তে ১২ ঘন্টা কাজ করানো হচ্ছে। বিনিময়ে বেতন দেওয়া হচ্ছে নামমাত্র। যা দিয়ে একজন মানুষ চলাফেরা করা কষ্টকর। আজকে শ্রমিকদের কোন নিরাপত্তা নেই। মৃত্যুর ঝুকি মাথায় নিয়ে তারা পেটের দায়ে কাজ করে যাচ্ছে।আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন বকেয়া রেখে উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে চায়। এ নিয়ে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় দ্বন্ধ দেখা যায়। তাছাড়া আমাদের দেশে শ্রমিকদের একটি বড় অংশ নারী ও শিশু। এসব নারী ও শিশু বিভিন্ন কল-কারখানা, বিশেষ করে গার্মেন্ট শিল্পে তারা বেশি কাজ করে থাকে। অথচ আমাদের সংবিধানে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। তথাপি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করেও তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকেই আবার জীবন ঝুঁকির মধ্যেও পড়ে যাচ্ছে। মারাও যাচ্ছে অনেক শ্রমিক।বাংলাদেশের শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার কারণে তারা শারীরিক-মানসিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। শিক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা হচ্ছে বঞ্চিত। এসব শিশু স্নেহ-ভালোবাসার অভাবে এক সময় অপরাধ জগতে পা বাড়ায়।

আসলে আমরা শ্রম বা শ্রমিকের মর্যাদা বুঝেও বুঝতে চাই না। একজন মানুষের জীবনধারণের জন্য যা যা প্রয়োজন, অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এসবই একজন শ্রমিকের প্রাপ্য। আর এটাই হচ্ছে শ্রমিকের প্রকৃত মর্যাদা। একুশ শতকে এসে শ্রমিকরা এর কতটুকু মর্যাদা বা অধিকার ভোগ করছে? বর্তমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে শ্রমিকশ্রেণির স্বার্থ নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে। কারণ শ্রমিকরা এ দেশের সম্পদ। তাদের কারণেই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। এ কারণে তাদের অবহেলার চোখে দেখার কোন সুযোগ নেই। তাদের কাজের ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশে কাজের ক্ষেত্রে পোষাক শ্রমিকের পর নির্মাণ শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় যাদের রক্ত ও ঘাম মিশে আছে তারাও তাদের শ্রমের ন্যায্য পাওনা অনেক সময় পায়না। শ্রম দিয়ে যারা শ্রমের মূল্য পায় না তারাই জানে জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার লড়াই কত কষ্টের? শ্রমের মর্যাদা ও শ্রমিকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আল এল ও ) এবং দেশের শ্রম আইনে সংবিধান অনুসারে শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষিত আছে। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার যেন কিতাবে আছে গোয়ালে নেই! বরাবরই এই দেশের দিনমজুর শ্রেণীর মেহনতি মানুষ বঞ্চিত ও শোষিত।

শুধু গার্মেন্টস শিল্পে নয় ওয়ার্কসপ, বিভিন্ন মিল, ফ্যাক্টরী ও ব্রিকফিল্ড শ্রমিকের পর সবচেয়ে বেশি শোষণের শিকার হয় ঘরের গৃহকর্মীরা। বাংলাদেশে গৃহকর্মীর গায় গরম ইস্ত্রির সেকা দিয়ে পিট ঝলসিয়ে দেওয়া এবং নানাবিধ নির্যাতনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। শুধু তাই নয় গৃহ কর্মীদের উপর বর্বর নির্যাতনের পাশাপাশি খুন ধর্ষনও করা হচ্ছে।মে দিবসে যেভাবে আমরা শ্রমিক অধিকার নিয়ে কথা বলি তার তুলনায় বাস্তবে শ্রমিকের অধিকার ও অর্জন অনেক সীমিত।

মে দিবসের তাৎপর্য: বর্তমান শ্রেণি বৈষম্যহীন সভ্য সমাজের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে মূলত ১৮৮৬ সালের সেই শ্রম আন্দোলন । মে দিবসের জন্ম বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে অনেকবেশী তাৎপর্যপূর্ণ এবং ব্যাপকভাবে সমাদৃত। সারা পৃথিবীজুড়ে শ্রমিক আন্দোলন ও মুক্তির সংগ্রামের মহান ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ মে দিবস। সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী অমানবিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করার মন্ত্র বিশ্ববাসীকে শিখিয়ে দিয়েছে এই দিবস। এজন্য মে দিবসকে বলা যায় পুঁজিবাদী দাসত্ব থেকে শ্রমিকদের মুক্তি লাভের সনদ। পুঁজিবাদীরা এক সময় শ্রমিকদেরকে নিজেদের দাস হিসেবে ব্যবহার করার হীন প্রবণতা প্রকাশ করতো। শ্রম বিপ্লবের পর মে দিবস যখন প্রতিষ্ঠা লাভ করলো তখন এই দাসপ্রথার বিলুপ্তি ঘটলো।মে দিবসের কারণে শ্রমিক শ্রেণির চিন্তা ও চেতনায় বৈপ্লবিক উন্নতির উদয় হয়েছে।শ্রমজীবীরা এর মাধ্যমে এক নতুন জীবন লাভ করলো, যা তাদেরকে কিছুটা হলেও স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ করে দিল। তাদের সংগ্রামী চেতনার আলোয় আলোকিত হয়েছে পুরো মানবসমাজ। শ্রমিক শ্রেণির সামনে উন্মোচিত হয়েছে এক নতুন দিগন্ত। শ্রমিক সংহতি ও ঐক্য হয়েছে আরো বেশি দৃঢ় ও মজবুত। মে দিবস সমাজ থেকে দূর করতে সক্ষম হয়েছে কলুষিত ও বিভীষিকাময় অন্ধকার।

মে দিবসের মূল্যায়ন: শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার রক্তাক্ত ইতিহাসের মধ্য দিয়ে শ্রমিকরা তাদের কিছু অধিকার অর্জন করলেও সকল দিক থেকে শ্রমিকরা তাদের অধিকার পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি। মে দিবস ঘটা করে পালন হলেও শ্রমিকরা আজও অবহেলা ও অবঙ্ঘার স্বীকার।আজও তারা তাদের কাঙ্খিত মজুরী নিশ্চিত করতে পারেনি। কর্মক্ষেত্রে ৮ ঘণ্টা শ্রমের নিয়ম হয়তো বা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, কিন্তু থামেনি শ্রমিক নিপীড়ন এবং প্রতিষ্ঠিত হয়নি শ্রমিকের প্রকৃত মর্যাদা ও শ্রমের মূল্য ।বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অহরহ শ্রমিক বিক্ষোভ থেকে আমরা সহজেই এটা অনুধাবন করতে পারি।বেতন বৃদ্ধিকিংবা বকেয়া বেতন আদায়ের নিমিত্তে প্রতিনিয়তঃ বাংলাদেশের অধিকাংশ গার্মেন্টে ণৈরাজ্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। গার্মেণ্ট শ্রমিকরা দাবী আদায়ে বিক্ষোভ,সড়ক অবরোধ করে যাচ্ছে।মালিক পক্ষ হর হামেশাই শ্রমিকদেরকে ঠকিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলন ঠেকানোর জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীকে ব্যবহার করে শ্রমিক নেতা-নেত্রীদেরকে গ্রেফতার করানো হয় কাজেই এটি দৃঢ়তার সাথে বলা যায় আজও দুনিয়ার কোথাও শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের প্রকৃত মজুরী এবং তাদের বাঁচার উন্নত পরিবেশ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক সংগঠন হিসেবে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে শ্রমিকদের অধিকারসমূহ স্বীকৃতি লাভ করে। আইএলও শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এ পর্যন্ত ১৮৩টি কনভেনশন প্রণয়ন করে। এর মধ্যে ৮টি কোর কনভেনশনসহ ৩৩টি কনভেনশন অনুসমর্থন করেছে বাংলাদেশ। তাছাড়া দেশে বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী সরকার শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতকরণে দায়বদ্ধ। কিন্তু আমাদের শ্রমিকরা কতটুকু অধিকার পাচ্ছে, শ্রমিকদের কতটুকু কল্যাণ সাধিত হয়েছে আজ এই সময়ে তা কঠিন এক প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ লেবার ফোর্সের জরিপ অনুযায়ী দেশের মোট শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। এর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ মহিলা শ্রমিক। অন্যদিকে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দেশে শিশু শ্রমিক বেড়েছে সাড়ে ৮৬ হাজার। বর্তমানে দেশে ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জন শিশু শ্রমিক আছে। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯। বর্তমানে শিশু শ্রমিকের মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। যতদূর জেনেছি- শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে শিশুদের ফিরিয়ে কাজের মাধ্যমে আয়ের পথ করে দিতে ২০১৮ সালে ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। ‘ শিশু শ্রমিক না কমে তবে প্রকল্প করে লাভ কি।
মে দিবস যায়, মে দিবস আসে। কিন্তু শ্রমিকদের ভাগ্য যেন আর খোলে না।

পরিশেষে মে দিবসের প্রাক্কালে আমরা বলতে চাই, নানা আয়োজনে প্রতি বছর শ্রমিক দিবস পালন করার মধ্যে শ্রমিকের প্রকৃত কোনো মুক্তি নেই। যে অধিকারের জন্য শ্রমিকরা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন শিকাগোর রাজপথে, তা বাস্তবে এখনও অর্জিত হয়নি। আজও শ্রমিকেরা পায়নি তাদের কাজের উন্নত পরিবেশ, পায়নি ভালোভাবে বেঁচে থাকার মতো মজুরী কাঠামো এবং স্বাভাবিক ও কাঙ্খিত জীবনের নিশ্চয়তা।মহান মে দিবস কে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রকৃত অর্থে শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহন করা জরুরী।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD