April 26, 2025, 2:41 pm
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট :বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত উর্বর ভূমি বাগেরহাটের ৯ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিস্তীর্ণ চর এলাকা জুড়ে তরমুজ ক্ষেতের সবুজের সমারোহ। মঘিয়া এলাকার বিশাল বলেশ্বর নদীর চর ,আন্ধারমানিক, চরসোনাকুর এলাকায় কৃষকের বপনকৃত ক্ষেতে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চারিদিকে এখন বড় বড় আকারের তরমুজের বাম্পার ফলনে সেখানকার কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক। সাড়ে ৩৬ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হবে বলে লাভের আশা দেখছেন সেখানকার চাষিরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তরমুজ চাষীরা ক্ষেত থেকে তরমুজ বাজারজাত করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোন কোন ক্ষেতে তরমুজ তুলে স্তুব করা হচ্ছে। আবার কোন ক্ষেত থেকে তরমুজ ট্রাক অথবা ট্রলিতে বোঝাই করা হচ্ছে। প্রতিদিন ঢাকাগামী লঞ্চ, ট্রলার, কার্গো, ট্রাক যোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এসব তরমুজ বাজারজাত করা হচ্ছে। গাছ থেকে পাকা তরমুজ ছিঁড়ে বস্তায় ভরে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। তরমুজ ছেঁড়া, বাছাই ও পরিবহনের কাজ করছেন প্রায় চার শতাধিক শ্রমিক।প্রতিদিন এলাকার মানুষ ছুটে আসেন এই তরমুজের ক্ষেত দর্শনে। তাদের তরমুজ দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। সেখানে এখন প্রতিদিন বিকেলে দর্শনার্থীদের আগমনে বিরাজ করছে আনন্দঘন পরিবেশ।
কচুয়া উপজেলার ৮০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করা হয়েছে। গতবছর ১’শ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হলেও অতি বৃষ্টির কারণে চাষিরা আশানুরূপ সাফল্য পাননি।
গত মৌসুমে ১’শ হেক্টর জমির তরমুজ বিক্রি হয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা আর তার তুলনায় বর্তমান মৌসুমে ৮০ হেক্টর জমিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় তরমুজের যে ফলন ইতোমধ্যে বিক্রি হয়েছে দু’কোটি টাকা আরও সাড়ে ৪ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হবে বলে লাভের আশা দেখছেন সেখানকার চাষিরা।
কৃষি অফিসে থেকে, কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ, সার,বালাই নাশক ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।তরমুজ চাষের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কৃষি কর্মকর্তা তাদের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অধিকাংশ কৃষক শ্যালো ইঞ্জিন এবং পা দিয়ে ঢেঁকি কলের মাধ্যমে নিয়মিত পানি ক্ষেতে সরবরাহ করেন। তা ছাড়া বলেশ্বর নদীর পানি মিষ্টি হওয়ায় যতটা সম্ভব তাও ব্যবহার করা হয়।
ছোট আন্ধামানিক গ্রামের কৃষক দেবদাস মজুমদার (৩৫) তিনি ৩ বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন, বিঘা প্রতি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় করেন, চরসোনাকুর গ্রামের কৃষক সুদেব মিস্ত্রি (৪৫) তিনি ৩ বিঘা জমির তরমুজ বিক্রি করেছেন ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আন্ধার মানিক বলেশ্বর চর এলাকার কৃষক কালিপদ মিস্ত্রি (৪০) তিনি ২ বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ করেন এবং আশাবাদী যে ৫ লাখ টাকা তার আয় হবে। পাইকারি ব্যবসায়ী নজরুল শেখ বলেন, এই মাঠ থেকে আমি প্রায় ১ কোটি টাকার তরমুজ কিনেছি। এগুলো আমরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে বিক্রি করে থাকি। যে মোকামে দাম ভালো থাকে সেখানে যোগাযোগ করে পাঠিয়ে দেই।বাগেরহাট রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির জানান, তরমুজ চাষিদের কে সার, বীজ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন সীড কোম্পানি পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে সার ও বীজ দিয়ে গরীব কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে।
এবছর আমাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১১০ হেক্টর, কিন্তু আবাদ হয়েছে ৮০ হেক্টরে। এবছর প্রতিটি তরমুজের ওজন ৮থেকে ১২কেজির মত হয়েছে।এক বিঘা জমিতে তরমুজ হয় ১২’শ পিস।গত বছরের তুলনায় এবছর বিঘা প্রতি ৬০-৭০ হাজার টাকা দাম বেশি পাচ্ছেন কৃষক। তাই আগামী বছর চাষের পরিমান বাড়বে প্রায় ৫০ হেক্টর। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে আমন ধান কাটার পরে তরমুজের বীজ বপন করে থাকে স্থানীয় চাষিরা তবে এবার আগাম তরমুজের ফলন ভালো হলে রোজায় খুব ভালো দামে বিক্রি করেছেন।কচুয়ার তরমুজ ঢাকা থেকে পাইকার এসে ক্ষেত দেখে দর দাম করে আগাম টাকা দিয়ে ক্ষেত কিনে নিয়ে ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যান রাজধানী ঢাকাতে।
কচুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী জানান,৬৮ শতকের এক বিঘায় চাষ করতে কৃষকের খরচ হয় ৫০থেকে ৬০ হাজার টাকা। বিক্রি করেন ১লাখ ৮০ হাজার থেকে ২লাখ টাকা। দিনে দিনে তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়ছেন আশপাশের কৃষক। কৃষি কর্মকর্তা আশাবাদী যে আগামীতে ঝড়- ঝঞ্ঝা না হলে এবং যথারীতি রোগ বালাই দমনে সার্বক্ষণিক নজরদারি করতে পারলেই তরমুজ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যে এখান
তরমুজ চাষী শেখ ফিরোজ আহমেদ এ বছর ২ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। সব মিলিয়ে তার চাষে খরচ হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ জমির তরমুজ ক্ষেত থেকে উত্তোলন করে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। বাকি দেড় একর জমির তরমুজ এখনো ক্ষেতে রয়েছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে অবশিষ্ঠ তরমুজ বাজারজাত করে ৫ লক্ষ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছ।
উপজেলার৩নং গাংনী ইউনিয়নের তরমুজ চাষী আয়েব আলীজানান, বিরূপ আবহাওয়ার শিকার না হলে বিগত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে লাভবা হবেন।
মোল্লাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিমেষ বালা জানান, এ বছর তরমুজ ক্ষেতে পানি সেচের কোন প্রকার অসুবিধা ছিল না। ক্ষেতের যে কোন সমস্যা দেখা-শোনার জন্য আমাদের মাঠ কর্মীরা কাজ করেছেন। চলতি মৌসুমে শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রত্যেক চাষী গত দুই/তিন বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে। তবে সরকারের বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় এ বছর তরমুজ চাষীদের সংখ্যা কমে গেছে বলে তিনি জানান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)মো: আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, এ বছর তরমুজ ক্ষেতে পানি সেচের কোন প্রকার অসুবিধা ছিল না। ক্ষেতের যে কোন সমস্যা দেখা-শোনার জন্য আমাদের মাঠ কর্মীরা