April 8, 2025, 12:11 am
আরিফ রব্বানী।।
স্টাফ রিপোর্টার ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ পৌর ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে জমি নামজারিসহ বিভিন্ন কাজে নিয়ম-নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সিরাজুল ইসলাম টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না এবং অর্থের বিনিময়ে জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ছাড়াই প্রতিবেদন তৈরি করেন। তার এই প্রক্রিয়ায় প্রতারিত হচ্ছেন অসংখ্য নিরীহ মানুষ, যারা পরবর্তীতে জমি নিয়ে মামলা ও জটিলতায় পড়ছেন।
স্থানীয়রা জানান, নাইব সিরাজুল ইসলাম দালাল চক্রের সহায়তায় অবৈধভাবে বিভিন্ন জমি সংক্রান্ত কাজের অনুমোদন দেন। দালালদের মাধ্যমে কাজ করায় ভূমি মালিকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী,
জানান, “আমি জমির নামজারি করতে অনেক চেষ্টার পরেও সঠিক কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। টাকা না দিলে কোনো কাজ হয় না।” তার মতো আরও অনেকেই জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে নিজেদের সম্পত্তি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, সিরাজুল ইসলাম এর আগেও কেওয়াটখালি ভূমি অফিসে কর্মরত থাকাকালীন একই ধরনের দুর্নীতি করে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ-লক্ষ টাকা। সেখানে জমির নামকরণের ফাইল প্রতি ৩ হাজার টাকা করে ঘুষ দাবি করা হতো।
ময়মনসিংহ পৌর ভূমি অফিসে যোগ দেওয়ার পরও তার অপকর্ম থামেনি। এখানেও এসব অনিয়ম ঘুষ বাণিজ্য ও অনৈতিক কার্যকলাপ এখনো চলমান রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পৌর ভূমি অফিসে ময়মনসিংহের শিল্পপতি ব্যবসায়ীরা তাদের জমি জমার নামজারীসহ বিভিন্ন কাজে যোগাযোগ করেন।এসব শিল্পপতি ও শহরের নামীদামী ব্যবসায়ীদের অনেকে আছেন নগরীতে সরকারি জমি দখল করে আছেন আবার অনেকে আছেন কাগজপত্র নিয়ে ভেজাল জমি ক্রয়-বিক্রয় করে থাকেন,আর এসব ব্যক্তিদের নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে নিয়মকে অনিয়ম আবার অনিয়মকে নিয়ম করে ভেজাল জমিগুলো নামজারী দিয়ে ক্রয়-বিক্রয়ে সহযোগীতা করেন নাইব সিরাজুল ইসলাম।বিনিময়ে তিনি পান মোটা অংকের অর্থ। এসব ভেজাল জমির মালিকদের জন্য কাজ দ্রুত সমাধান করার জন্য ঘুষ গ্রহণ করে তিনি হয়ে উঠেছেন কোটিপতি। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন এই অবৈধ ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে অর্থ উপার্জন করে নাইব সিরাজুল ইসলাম ময়মনসিংহের মাসকান্দা এলাকায় বিলাসবহুল একটি বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেছেন, যার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকারও অধিক হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের প্রশ্ন, এত কম সময়ে বিপুল পরিমাণ টাকা অর্জন কীভাবে সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সুত্র জানিয়েছে-ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের টাউন হল মৌজাস্থিত ছায়া বাণী সিনেমা হল এর দখলে থাকা খাস খতিয়ানভুক্ত প্রায় ৫৮ শতাংশ জমি উদ্ধার করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন। উদ্ধারকৃত ভূমির বর্তমানে বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা।ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী ‘শেরপুকুর এলাকার আমলাপাড়ায় অবৈধ দখলে থাকা প্রায় ২৫ শতক জমি যা পুকুর ছিলো এবং এর মুলা প্রায় ২০ কোটি টাকা সেটাও দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছর পর প্রশাসন অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে। অভিযোগ রয়েছে এসব অবৈধ দখলদারদের নিকট থেকেও মোটা অংকের মাসোহারা আদায় করতো পৌর ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা। মাসোহারা পেয়ে অবৈধ দখলদারদের সরকারি সম্পদ ভোগদখল করার সুবিধা দিতেন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নাইব)।
শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সরকারি খাস অর্পিত ভিপি সম্পত্তির উপর বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ চলছে অভিযোগ রয়েছে নায়েব সিরাজুল ইসলাম মোটা অংকের অর্থ নিয়ে এসব ভবন নির্মাণ কাজ সহযোগিতা করছেন।
তাছাড়া, একাধিক সূত্র জানায় যে, সিরাজুল ইসলাম স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সিন্ডিকেট গড়ে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে গেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বিভিন্ন সময় মামলার হুমকি দিয়ে সাংবাদিকদের চুপ করানোর চেষ্টা করেন এবং দলীয় নেতাদের নাম করে হুমকি দেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, তিনি ‘দুর্নীতিবাজ’ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন, যিনি জনগণের অধিকার খর্ব করছেন এবং সরকারি সম্পদের অপব্যবহার করছেন।
স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, এমন একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি জনগণের সেবা করতে পারেন না। তারা সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করার পাশাপাশি তাকে ময়মনসিংহ থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
এছাড়া, ভূমি অফিসে সেবা প্রদানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ঘটনায় সিরাজুল ইসলামের বিলাসবহুল জীবনযাপন ও সম্পদের বিষয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে, যা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। তাই, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জনগণ ও স্থানীয় নেতারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগেও এই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দৈনিক ইনকিলাব বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে সংবাদটি সর্বমহলে ব্যাপক গ্রহণ যোগ্যতা পেলেও প্রশাসনিকভাবে উক্ত নাইব এর বিরুদ্ধে তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রশাসনের ভাবমূর্তি নিয়ে ময়মনসিংহবাসীর মাঝে চরম হতাশার দেখা দিয়েছে। এত অল্প সময়ে কিভাবে এত অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন নাইব সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী উঠেছে ময়মনসিংহের সর্ব মহলে।