March 19, 2025, 6:58 am
হেলাল শেখঃ ঢাকা জেলার আশুলিয়ায় শত বছরেও সরকারি নয়নজুলি খালসহ ৮টি খাল উদ্ধার করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। প্রভাবশালীদের দখলে থাকলেও খালগুলো উদ্ধার না হওয়ার কারণে বাসা বাড়ির নোংরা পানিতে জলাবদ্ধতায় জনদুভোর্গ বাড়ছে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ ২০২৫ইং) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঢাকা জেলার আশুলিয়ায় অবস্থিত সরকারি নয়নজুলি খালসহ ৮টি খাল অবকাঠামোগত সংস্কার ও জলাবদ্ধতা নিরসনে একাধিকবার এলাকাবাসী মানববন্ধন করলেও কোনো ফায়দা হয়নি, এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি খালগুলো উদ্ধারসহ জনগণের চলাচলের রাস্তা-ঘাট সংস্কার করার জন্য। এর আগে “চির তারণ্য সমাজকল্যাণ সংগঠন” এবং জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী একাধিকবার মানববন্ধন করার পরও নয়নজুলি খালসহ সরকারি ৮টি খাল শত বছরেও উদ্ধার হয়নি।
জনগণের অভিযোগ-সামান্য বৃষ্টি হলে ময়লা পানিতে রাস্তা দেখা যায় না, পুরো এলাকার ড্রেনের বেহাল অবস্থা, রাস্তার পানিতে জলাবদ্ধতা চোখে পড়ার মতো। এর কারণে এলাকায় বসবাসরত লাখ লাখ মানুষের চরম দূভোর্গ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়া থেকে নয়নজুলি খালটি জিরাবো পুকুরপাড় দিয়ে গেছে আর আমান স্প্রিনিং মিলের রাসায়নিক পানি, বর্জ্যগুলোর কারণে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকায় বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানা ও স্থাপনার মালিক কতর্ৃক নয়নজুলি খালটি অবৈধ ভাবে দখল করার কারণে বৃষ্টির পানি ও ময়লা আটকে গিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর কারণে উক্ত এলাকায় বসবাসকারী গার্মেন্টেসের লাখ লাখ শ্রমিক ও জনসাধারণের চরম ভোগান্তি হলেও কেউ কোনো ভাবে এ সমস্যার সমাধান করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
উক্ত এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য জিরাবো পুকুরপাড় বাজার সংলগ্ন ব্রিজের উপরে নয়নজুলি খালের পানি নিস্কাশনের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন একাধিকবার কিন্তু এতে কোনো সুফল হয়নি। স্থানীয় আব্দুল রশিদ কাজী জানান, এলাকাবাসীর এই সমস্যাটি নিয়ে বেশ কয়েকবার আমরা মানববন্ধন করেছি। তিনি বলেন, আশা করি এই সমস্যার সমাধান হবে। বর্ষাকালে বৃষ্টির সময় এলাকাবাসীর দূভোর্গ দেখে এলাকাবাসী সাথে সম্মিলিতভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করতে এসে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন চির তারণ্য সমাজকল্যাণের আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, এর আগে এমন দূভোর্গ চোখে পড়েনি। তিনি আরও বলেন, এই এলাকার শিল্পকারখানা “লোসাকা গ্রুপ ও আমান স্প্রিনিং মিলের মালিক অবৈধভাবে দখল করে তাদের রাসায়নিক ক্ষতিকর বর্জ্য ফেলছেন। ৬ফিট পাইপ লাইনের মাধ্যমে তাদের রাসায়নিক পানি নিস্কাশনের ধারণ ক্ষমতা না থাকায় উল্টো পানি পেছনের দিকে চলে যায়। এর কারণে বৃষ্টিপাত হলেই এলাকার শত শত বাড়ি ঘর ও রাস্তা প্লাবিত হয়ে যায়।এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে লোসাকা গ্রুপের “এমডি” শফিক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, এলাকার কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আমরা পানি নিস্কাশনের কাজ করেছি। তাদের মধ্যে এলাকার স্থানীয় মোঃ আফজাল মেম্বারকে সাথে নিয়েই আমরা কাজ করেছি। অবৈধভাবে দখলের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রশাসন ও ভূমি অফিস থেকে পাস এনেছি। নয়নজুলি খালের লিজিং দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও তার দাবির প্রেক্ষিতে কোনো লিখিত কাগজপত্র প্রমাণ দেখাতে পারেননি। অথচ কাদের দেওয়ান মোল্লা বাজার এলাকায় নয়নজুলি খাল দখল করে রেখেছেন।
আশুলিয়ায় নয়নজুলি খালসহ সরকারি ৮টি খাল প্রভাবশালীদের দখলে-এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিরব ভুমিকায় থাকার কারণে এসব খাল উদ্ধার করা যায়নি বলে স্থানীয়দের দাবি। একদিন বৃষ্টি হলে রাস্তায় হাটু পানি হয়, সেই পানি ৭-১০দিনের বেশি জলাবদ্ধতা থাকে। সেই সাথে পোশাক কারখানার ময়লা আবর্জনা বর্জ্যের পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা থাকলেও এ ব্যাপারে কারো কোনো মাথা ব্যথা নাই। এর কারণে জনসাধারণের চরম দূভোর্গ ও ভোগান্তি হয়। অপরিকল্পিত বাসা বাড়ি ও ঘর নির্মাণ করায় রাস্তা নিচু হয়ে গেছে। বাসা বাড়িসহ শিল্পকারখানার নোংরা পানি ও বর্জ্যে পরিবেশ দূর্ষণ করছে। বিভিন্ন রাস্তা গর্তের সৃষ্টি হয়ে এখন তা মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। মাঝে মধ্যে ভাঙ্গা রাস্তায় পড়ে গিয়ে আহত হয় অনেক মানুষ। সূত্রমতে, আশুলিয়ার জামগড়া হইতে পুরাতন আশুলিয়া তুরাগ নদী পর্যন্ত নয়নজুলি খাল ৭কি. মি.। নলীর খাল, ক্যান্টনমেন্ট হইতে বংশাই নদী পর্যন্ত ৬ কি. মি.। ডগরতলীর খাল, ডগরতলী হইতে বারল খাল পর্যন্ত ৪ কি. মি.। বারল খাল, চক্রবর্তী হইতে বংশাই নদী পর্যন্ত ৬ কি. মি.। কন্ডার খাল, কন্ডা হইতে সুগন্ধী পর্যন্ত ৩ কি. মি.। গাজীবাড়ি খাল, নন্দনপার্ক হইতে সুবেদী পর্যন্ত ৫ কি. মি.। ভারারিয়ার খাল, শিমুলিয়া হইতে নলাম পর্যন্ত ৪ কি. মি. গাজারিয়ার খাল, ইয়ারপুর হইতে মনসস্তোষ তুরাগ পর্যন্ত ৫ কি. মি.। সর্বমোট প্রায় ৪০ কিলোমিটার খালগুলো প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে এসব খালের পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। বাসা বাড়ির ময়লা পানি রাস্তায় ছেড়ে দেওয়াসহ বর্জ্যের দুর্গন্ধে মানুষ নাক ধরে রাস্তায় চলাচল করেন। দূষিত পানিতে এলাকায় বসবাসকারী মানুষগুলো চর্মরোগ ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছেন। শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় হাইওয়ে রোড থেকে শুরু করে শাখা রোডগুলোর বিভিন্ন রাস্তার বেহাল অবস্থা-সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তায় হাটু পানি হয়। সেই সাথে উচু বাসা বাড়ির পানি রাস্তায় ফেলার কারণে তা মানুষের শরীরে লেগে চর্মরোগসহ নানারকম রোগ হয়। এতে পোশাক শ্রমিকসহ লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই।
ঢাকা জেলার ৮বার শ্রেষ্ঠ করদাতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তানভীর আহমেদ রোমান ভুঁইয়া বলেন, রাতে রাস্তা ভালো থাকে আর সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দেখি রাস্তায় হাটুপানি, একদিন বৃষ্টি হলে হেয়ন গার্মেন্টস রোডসহ আশপাশের রাস্তায় ময়লা পানিতে জলাবদ্ধতা দেখা যায়। আমি ব্যবসায়ী তাই কাউকে কিছু বলতে পারিনা, তবে এলাকার উন্নয়নমূলক যেকোনো কাজে আমি সহযোগিতা করতে চাই, নয়নজুলি খাল উদ্ধার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য এলাকার সবার সাথে আছি থাকবো ইনশাল্লাহ।
ঢাকা আশুলিয়ার জামগড়া ভুঁইয়া বাড়ির কৃতিসন্তান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোর্শেদ আলম ভুঁইয়া বলেন, সরকারি নয়নজুলি খালটি উদ্ধার করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।তিনি দাবী করেন যে, সরকারি কাজে সহযোগিতা করবেন এবং এলাকার সবার সাথে থেকে উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগিতা করবেন। তিনি আরো বলেন, সরকার আসে যায় কিন্তু আশুলিয়ার নয়নজুলি খালটি উদ্ধার কেন করা যাচ্ছে না আমরা বুঝিনা। অনেকেই জানান, প্রভাবশালীরা দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে রাখায় এই খালটি উদ্ধার করতে সাহস পায়না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।