March 12, 2025, 11:59 am

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
স্বরুপকাঠীতে মাদককান্ডে প্রমান মিলেছে ইয়াবা ছিল কালু পালের মোরেলগঞ্জে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ আশুলিয়ায় চাকরির খোঁজে আসা চাচা কর্তৃক ৮ বছরের শিশু ধর্ষিত রসুলপুর ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল  সাতলায় জেলেদের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরন পাইকগাছায় ২৫ হাজার শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা উজিরপুরে মাত্র ৭ মাসে কোরআনের হাফেজ হলেন আব্দুল্লাহ ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবীতে গাইবান্ধা বিক্ষোভ মিছিল আশুলিয়ায় বিয়ের প্রলোভনে কৌশলে জিম্মি করে পতিতা বানানো হয় পুঠিয়া জিয়া পরিষদের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহাফিল অনুষ্ঠিত 
বৃটিশ নৃ-শংসতার অমর স্বাক্ষী আজ ঐতিহাসিক কুলকাঠি হ-ত্যাযজ্ঞ দিবস

বৃটিশ নৃ-শংসতার অমর স্বাক্ষী আজ ঐতিহাসিক কুলকাঠি হ-ত্যাযজ্ঞ দিবস

ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ মোঃ নাঈম মল্লিক

আজ ২ মার্চ। উপমহাদেশ কাঁপানো, হৃদয়বিদারক, নৃশংস, লোমহর্ষক, কলঙ্কময়, ঐতিহাসিক কুলকাঠি হত্যাযজ্ঞ দিবস। বৃটিশ শাসনামলের এ ঘটনা ‘দ্বিতীয় জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড’ নামেও পরিচিত।
আজ থেকে ৯৮ বছর আগে, বাংলা ১৩৩৩ ও ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের এ দিনে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করতে গিয়ে নলছিটির কুলকাঠিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইএন বান্ডির হুকুমে গুর্খা সৈন্যদের গুলিবর্ষণে শহীদ হন ১৯ জন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। এ সময় আহত হন অসংখ্য মানুষ।

নলছিটি শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সুগন্ধা নদীর দক্ষিণ তীরে, সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নে হিন্দু সম্প্রদায়ের আন্তর্জাতিক ৫২টি পীঠস্থানের ৩য় তীর্থস্থান শিববাড়ির অবস্থান।
প্রাচীন কাল থেকে প্রতিবছর শিবচতুদর্শী উপলক্ষে শিববাড়িতে বিরাট মেলা বসে। এখন দুই-তিন দিনে সীমাবদ্ধ হলেও আগে পক্ষকাল থেকে মাসব্যাপী মেলা চলতো। শিববাড়ির কাছেই নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি গ্রামটি অবস্থিত।
ইংরেজ রাজত্বের দোর্দন্ড প্রতাপকালে ১৯২৬ সালে কুলকাঠি গ্রামে একটি জামে মসজিদ নির্মিত হয়। পীর মোয়াজ্জেম সড়ক সংলগ্ন পৌর এলাকার দক্ষিণ বৈচন্ডী জামে মসজীদ ও কুলকাঠি জামে মসজীদের পাশ দিয়ে হিন্দুরা ঢোলবাদ্য বাজিয়ে মসজিদ সংলগ্ন রাস্তা দিয়েই মেলায় যেত। এতে মসজিদে নামাজ আদায়রত মুসলমানদের ইবাদতে ব্যাঘাত ঘটায় তারা হিন্দু নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করে সুফললাভে ব্যর্থ হন। প্রথমে দক্ষিণ বৈচন্ডী জামে মসজীদের মুসুল্লীরা বৈচন্ডী এলাকায় এতে বাঁধা দিলে তারা ভ্রুক্ষেপ করেননি। এ অবস্থায় কুলকাঠি জামে মসজিদের ইমাম মৌলভী সৈয়দ উদ্দিনের নেতৃত্বে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার জন্য মসজিদের পাশে রাস্তা দিয়ে বাদ্যবাজনা বাজিয়ে যেতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অন্যদিকে, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকরা বাজনাসহকারেই শিবমন্দিরে যাবার প্রথা অব্যাহত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে। বিখ্যাত হিন্দুনেতা (পরে বরিশাল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট) সতীশ সেন একদল ‘স্বেচ্ছাসেবক’ নিয়ে শিববাড়ি-কুলকাঠি এলাকায় অবস্থান নেন। অন্যদিকে, শান্তিভঙ্গের আশঙ্কায় বাকেরগঞ্জের তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইএন বান্ডি, পুলিশ সুপার মি. টেলর এবং সদর এসডিও জিকে বিশ্বাস বাংলা ১৩৩৩ সালের ১৮ ফাল্গুন, বুধবার, গুর্খা বাহিনী নিয়ে কুলকাঠি আসেন। সকাল বেলা কয়েক হাজার হিন্দু তাদের নেতা সতীশ সেনকে নিয়ে বাজনা বাজিয়ে মসজিদের পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে উদ্যত হয়। ক্ষুব্ধ কয়েকশ’ মুসলমান এগিয়ে এসে হিন্দুদের কাছে বাদ্যবাজনা বন্ধ করার অনুরোধ জানায়। পুরোপুরি ঘটনা না বুঝেই ম্যাজিস্ট্রেট বান্ডি মসজিদের ইমাম সৈয়দ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে।

এতে মুসলমানরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে এগিয়ে আসার চেষ্টা করে। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট মুসলমানদের ওপর গুলি করার জন্য গুর্খা সৈন্যদের নির্দেশ দেন। মূহুর্তের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অসংখ্য মুসলমান। ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন ১৯ জন মুসল্লী। আহত হন অনেকেই। কুলকাঠি-শিববাড়িসহ আশেপাশের গ্রামগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ জ্ঞানহারা হয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে।
একটু পরেই পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। ময়না তদন্তের জন্য লাশগুলো বরিশাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বর্তমানে হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাঁ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় নামাজে জানাজা। এতে শোকে মুহ্যমান হাজার হাজার মুসলমান অংশ নেন। পরে শহীদদের আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী মৃতদেহগুলো গ্রামে নিয়ে এসে মসজিদের কাছেই দাফন করেন। বীর শহীদরা হলেন- বাবর উল্লাহ হাওলাদার, আফেল গাজী, নঈম উদ্দিন হাওলাদার, এয়াসিন আকন, আতামুদ্দিন হাওলাদার, হাসান উল্লাহ হাওলাদার, মোসলেম উদ্দিন, মোহন মোল্লা, সেরাজ উদ্দিন, সুন্দর খান, ছবদার খান, মফেজ হাওলাদার, রহমালি হাওলাদার, বলু খান, রিয়াজ উদ্দিন, জাহের তালুকদার, জহির উদ্দিন হাওলাদার, আবুল হোসেন হাওলাদার ও ফরমান উল্লাহ।
তৎকালীন বৃটিশ-ভারতের পত্রপত্রিকায় ফলাও করে এ নৃশংস হত্যকান্ডের খবর প্রকাশ করা হয়। মাসিক সওগাত পত্রিকা ঘটনাটিকে ‘দ্বিতীয় জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। পত্রিকায় বলা হয়, ‘কুলকাঠিতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে তাতে সমগ্র ভারতবর্ষ চঞ্চল হয়ে উঠেছে’।
খবর পেয়ে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক কুলকাঠিতে ছুটে আসেন। জনসভা করেন বরিশালে। হত্যাকান্ডের নায়ক বান্ডিকে ‘বাডি’ বলে আখ্যায়িত করেন। নরহত্যার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়। সরকার পক্ষ মামলায় হেরে গিয়ে প্রত্যেক শহীদ পরিবারের জন্য চরমোয়াজানে দশ কানি জমির বরাদ্দ দেয়। কবরস্থানের চারদিকে দেয়াল এবং মসজিদটি ভালভাবে নির্মাণ করে দেয়া হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বান্ডি ক্ষমা প্রার্থনাও করে। ১৯ শহীদের স্মৃতি অম্মান রাখতে কুলকাঠির চন্ডিপ্রসাদ হাইস্কুলটির নামকরণ করা হয় ‘কুলকাঠি শহীদিয়া ইউনিয়ন একাডেমী’। সেখানে শহীদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৪ সালে স্থাপিত হয় কুলকাঠি শহীদিয়া দাখিল মাদ্রাসা। বর্তমানে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে কুলকাঠির শহীদদের স্মৃতি আজ বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে ১৯ শহীদের কবর। অনেক কবরের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। স্থানীয়ভাবে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। বিদেশী অর্থে মসজিদেরও কিছু উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তবে ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতিময় স্থাপনাগুলো যথাযথ সংরক্ষণ ও সংষ্কারের জন্য সরকারীভাবে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

তৎকালীন বৃটিশ ভারতের অদ্বিতীয় ধর্মীয় ঘটনা সংগঠিত হলেও দিবস উপলক্ষ্যে শহীদের স্মরনে নেই কোন সরকারি বেসরকারি কর্মসুচী। এতবড় ঘটনা কালের স্বাক্ষী হিসেবে থাকলেও বর্তমান প্রজন্মের কাছে সে ইতিহাস অজানাই থেকে যাচ্ছে। দিবসটি সরকারিভাবে পালনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

হত্যাযজ্ঞে নিহত শহীদ খোসাল উদ্দিন এর নাতনি হামিদুল ইসলাম সিদ্দিকি জানান, নিহত শহীদদের কবর সংরক্ষণসহ দিবসটি সরকারি ভাবে পালন করা উচিত। ঐতিহাসিক শহীদিয়া মসজীদ ও মাদ্রাসায় অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারি বরাদ্ধও দাবি কর

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD