May 9, 2025, 7:26 pm
মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, তেতূলিয়া প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এখন বিলুপ্তি হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী গরুর হাল। এক সময় লাল-সবুজের বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মাঠে চোখে পড়তো কাক ডাকা ভোরে কৃষকদের গরুর সঙ্গে লাঙ্গল ও জোয়াল কাঁধে নিয়ে জমি চাষ করার জন্য মাঠে যাওয়ার দৃশ্য। কিন্তু এখন আর সেই এই দৃশ্য চোখে পড়ে না। কালের আবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে জমিতে গরু দিয়ে হাল-চাষ করা।
আধুনিকতার স্পর্শে ও বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারের ফলে কৃষকদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে কৃষিতে। তাই আর মাঠে গান গেয়ে গরু দিয়ে জমি চাষ করতে দেখা যায় না কৃষকদের। কৃষি প্রধান বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লাঙ্গল-জোয়াল। চিরায়ত বাংলার রুপের সন্ধান করতে গেলে এই দুই কৃষি উপকরণের কথা যেমন অবশ্যই আসবে, তেমনি আসবে হালের গরুর কথাও।
আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে হাল চাষের পরিবর্তনে এখন ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করার প্রচলন এসেছে। উপজেলার ৫নং বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কালদাস পাড়া গ্রামের আব্দুল জব্বার, সমে আলী জানান, ১৫ বছর আগে আমরা গরু দিয়ে হালচাষ করতাম। হাল চাষ করেই মৌসুমের আবাদ করতাম। কিন্তু ধীরে ধীরে ট্রার্ক্ট বা পাওয়ার ট্রিলারের প্রচলন হওয়ায় গরু দিয়ে হাল চাষের প্রচলন আর নেই বললেই চলে।
সরেজমিনে উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া গ্রামের গরু দিয়ে হালচাষ কারী তমিজুল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আগের মত আর কেউ গরু দিয়ে হালচাষ করে না। এখন মাঝে মধ্যে কেউ চাষ করে নিতে আসলে চাষ করে দেই। কি করবো বাপ দাদার পেশা এক বারে ছাড়তেও পারিনা তাই অন্য কাজের ফাঁকে এই হাল চাষের কাজ করি। জানা যায়, তিনি দিনে ৫শতাংশ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ জমি গরু দিয়ে হাল চাষ করতে পারেন। এতে তিনি জমির মালিকদের কাছ থেকে কাঠা প্রতি (২.৫শতাংশ) ৫০টাকা নেয়।
এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হকের সঙ্গে তিনি বলেন, অল্প সময়ে বেশি জমি চাষ করতে সক্ষম হওয়ায় জমির মালিকরা এখন ট্রাক্টর বা পাওয়ার ট্রিলার দিয়ে জমি চাষ করে নিচ্ছেন। কিন্ত্র এক সময় এই গরুর হাল ছিল একমাত্র মাধ্যাম। আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়াসের ফলে কৃষি ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য এসেছে। এছাড়া গোখাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি, গোচারন ভূমির সল্পতার কারনে গরু পালন ছেড়ে দিয়েছে অনেকে। এভাবেই নানা কারণে বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরুর হাল।
মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম।।