January 8, 2025, 4:02 pm
বেতাগী বরগুনা প্রতিনিধি
বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে ভরা উপজেলা শহরের দেয়ালগুলোর দাগ পড়া চিহ্ন যেন বলে দেয় এই শহরের মানুষদের মানবতা বোধেও কতটা কালি পড়ে গেছে। তার পরও কিছু মানুষ সে দেয়ালে সাদা রং মেখে দিয়ে সাদা মনের চিহ্ন রেখে প্রমাণ করেন, মানবতা আছে, থাকবে। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ দেশের সূর্য সন্তানরাই বারবার তৈরি করবে উদারতার প্রীতি । শীতার্ত মানুষদের জন্য গরম কাপড় সংগ্রহ করতে এমনই এক উদারতার প্রীতি তৈরি করেছে বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্রিন পিস ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি’র তরুণ তরুণীরা।
এলাকার মানুষ এবং অন্য শিক্ষার্থীরা বলছে, একটি ভালো উদ্যোগ বদলে দিতে পারে অনেকের জীবন। উদারতার প্রীতি তৈরি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে প্রশংসার জোয়ার। বিষয়টি প্রথম কে শুরু করেছে সেটা জানা না গেলেও একটি দেয়ালে মানবতার দেয়াল নামে দেখার পরে সেটাতে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা তৈরি করেছে উদারতার প্রীতি।
আজ সরজমিন বেতাগী সরকারি পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পশ্চিম পাসে গিয়ে দেখা যায়, শহরে বড় ব্রিজের ঢাল দিয়ে নামার সময় হাতের ডান দিকে হাইস্কুল রোডে যাবার সময় পাশের দেয়ালের মাঝে ব্যানের লেখা ‘আপনার যা অপ্রয়োজন দিয়ে যান’ আর অন্য পাশে লেখা ‘আপনার যা প্রয়োজন নিয়ে যান’ “দিতে গর্ববোধ করবেন না ” নিতে লজ্জাবোধ করবেন না”।
মাঝ বরাবর দেয়ালে লেখা আছে উদারতার প্রীতি। দেয়ালের গায়ে লাগানো হ্যাঙ্গারে ঝুলছে শার্ট, শীতের কাপড়, গেঞ্জিসহ বিভিন্ন পুরনো পোশাক। যেখান থেকে রিকশাচালক থেকে শুরু করে অনেকেই নিয়ে যাচ্ছেন শীত থেকে রক্ষা পেতে নিজের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক। এমন মানব দেয়াল তৈরি করেছেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্রিন পিস ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি প্রতিষ্ঠাতা ও কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ খাইরুল ইসলাম মুন্নার নেতৃত্বে সংগঠন এর সদস্য মোঃ আরিফুল ইসলাম মান্না, মোঃ আরিফ হাসান, তৌহিদ হোসেন, মাহি বুরহান সিয়াল, মোঃ ইমন, হাসান মাহমুদ পিয়াল, ইশরাত মোহেজাবিন বিন্তি,ইশরাত জাহান লিমা,সৌরভ জোমাদ্দার প্রমুখ।
দেখা যায়, বেতাগী সরকারি পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে লাগানো হ্যাঙ্গারগুলোতে এলাকার মানুষ ও সংগঠনপর সদস্যরা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজেদের পুরনো পোশাক এনে রাখছেন।
তেমনই একজন স্কুল ছাত্রী বিন্তি তিনি বলেন, ‘আসলে এই সময়টায় অনেকেই শীতের পোশাক সংগ্রহ করে এবং শীতার্তদের মধ্যে দিতে চায়; কিন্তু সঠিক জায়গা থেকে সংগ্রহ করা এবং সঠিক জায়গায় পৌঁছানো যায় না। এখানে আমরা রেখে যাচ্ছি, যার প্রয়োজন সে নিয়ে যাচ্ছে। দেখা গেল, কেউ কেউ আবার নতুন পোশাকও দিচ্ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বেতাগী উপজেলা সভাপতি মোঃ সাইদুল ইসলাম মন্টু বলেন, ‘আসলে আমরা ছেঁড়া টাকাটা ফকিরকে আর মসজিদে দেওয়ার জন্য রেখে দিই। সেটা খুবই দুঃখজনক। ছেঁড়া জামা-কাপড় দিলে সেই কাপড় পরার মতো অবস্থা থাকে না। তাই যাদের যা সামর্থ্য আছে সে অনুযায়ী নতুন কাপড়ও দেওয়া জরুরি। তরুণ তরুণীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই, এমন উদ্যোগ বদলে দিবে এই সমাজ।
তবে এভাবে রেখে গেলে কেউ আবার একসঙ্গে সব নিয়ে যায় কি না? সেটা নজর রাখা হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্রিন পিস ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি প্রতিষ্ঠাতা ও কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ খাইরুল ইসলাম মুন্না, ‘সেটা করার সুযোগ নেই। আমাদের সংগঠনের সদস্যরা এবং পাশের ফুটপাতের দোকানিরাও নজর রাখেন। প্রযুক্তির যুগে যখন মানুষ সারাক্ষণ অনলাইনে নিজের চিন্তাভাবনা, আবেগ, অনুভূতি বিলাতে ব্যস্ত! তখন কোন চিন্তা থেকে এমন উদ্যোগ নিলেন এই কয়েকজন? এমন প্রশ্নের উওর খুজতে গেলে একজনকে পাওয়া গেলেও নাম প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নন। তিনি বলেন, ‘‘আসলে মানুষ মানবতা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। সবাই নিজেদের মধ্যে শত্রুতা বাড়াতে ব্যস্ত।’ ‘ভয় কিসের আমি তো আছি’ এই কথা বলার মতো কেউ নেই। আমরা কয়েকজন চিন্তা করেছি, এমন কিছু করি, যাতে করে আমরা না থাকলেও মানুষের উপকার হবে। সে জন্যই এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া।”
রিকশাচালক করোম আলী খান নিজের জন্য শীতের কাপড় নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ভাই, গরিব মানুষ, তাই কিনতে পারি না। আবার মাইনষের কাছ থেইক্যা হাত পাইত্তা নিতেও শরম লাগে। এই জায়গা ঝুলাইন্না আছে দেইখা ভাবছি কেউ দেখব না; কিন্তু আপনি দেইক্কা ফেলছেন। তয় যারা এই কাম (ব্যবস্থা) করছে, তারা খুব ভালা মানুষ। আল্লাহ হেগো ভালা করুক।’