January 6, 2025, 7:00 pm
আলিফ হোসেন,তানোরঃ
রাজশাহীর তানোরে বিভিন্ন মাঠে
আলুখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছে কৃষকগণ। আলু একটি শীতকালীন ফসল। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আলুখেতের গাছের পাতা বেড়ে উঠে মাঠজুড়ে সবুজ রঙ ধারণ করছে।মাঠে মাঠে সবুজের সমারাহ। কৃষকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে ফসলের মাঠ। উপজেলা জুড়ে ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, এ্যালুয়েট, ষাটে এই চার থেকে পাঁচ জাতের আলু চাষ হয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রোপণকৃত আলুখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও শ্রমিকরা। এর মধ্যে কেউ জমিতে থাকা আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ, সেচ, ছত্রাক ও রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে ফসল বাঁচাতে বালাইনাশক স্প্রে করছেন। এভাবে প্রতিদিন ভালো ফলনের আশায় উপজেলার মাঠে মাঠে চলছে আলুখেত পরিচর্যার কাজ। বাজারে আলুর চড়া দামের কারণে এবার আল চাষের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। তবে আলু আবাদে খরচ বেশি হওয়ার কারণে উৎপাদিত আলুর সঠিক বাজার মূল্য না পেলে লোকশানের মুখে পড়বে তাঁরা। তারপরেও আবহাওয়া ও বাজারদর ভালো থাকলে লাভের আশা করছেন কৃষকরা।
উপজেলার আলু চাষিরা জানান, এবার লোকশানের ঝুঁকি নিয়েই তারা আলু চাষ করেছেন।তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং রোগ বালাইয়ের তেমন কোনো প্রাদুর্ভাব না হলে আলু চাষে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা। স্বল্প মেয়াদী ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে এ আলু উত্তোলন করা যায়। আগাম জাতের আলুর আবাদ করেছেন। গাছ ভালো হওয়ার ফলে আলুর ফলন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে আলুচাষের জন্য জমি টেন্ডার, শ্রমিক মুজুরী, সেচ, সার ও বালাইনাশকের খরচ বেশি হওয়ার কারণে উৎপাদিত আলুর বাজার নিয়েও চিন্তিত তাঁরা। কোনো ধরনের দুর্যোগ ও রোগবালাই যদি না থাকে তাহলে আশানুরূপ ফলন পাবেন আশা করছেন কৃষকেরা।
সরেজমিন দেখা যায়, আলু গাছের সারিতে মাটি তুলে দেওয়া ও সরিয়ে দেওয়া, জমিতে সেচ (পানি) দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার এবং বালাইনাশক প্রয়োগ সব মিলিয়ে আলু গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এ অঞ্চলের অর্থকারি অন্যতম ফসলের মধ্যে একটি আলুর আবাদ। আলুর উৎপাদন ও মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে আলু চাষীদের সঙ্গে আলোচনাসহ অন্যান্য ফসলের নানান ধরনের রোগবালাই দমনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়ার কথা থাকলেও, মাঠ পর্যায়ে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে থেকে তেমন পরামর্শ পাচ্ছেন না। তার পরেও আলু আবাদ নিয়ে প্রান্তিক কৃষকরা দেখছেন রঙ্গীণ স্বপ্ন। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাঠে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন কৃষক-কৃষাণীরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ১১৫ হেক্টর। এসব জমি রোপণের জন্য
বীজের প্রয়োজন ২৯ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন এবং ফলন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন। উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে (ইউপি) বিসিআইসির অনুমোদিত ৯ জন ও বিএডিসির ২২ জন ডিলার রয়েছেন। উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) মইফুল ইসলাম ও রাব্বানী বলেন,তারা এবার লাল ও সাদা আলু চাষ করেছেন।
এখন পর্যন্ত আলুর গাছ খুব ভালো। আশা করছেন ফলনও ভালো হবে। আলু গাছের সারিতে মাটি তুলে দেওয়া ও সরিয়ে দেওয়া এবং আলুখেতের আগাছা পরিষ্কার করছেন। আলুতে এখন পর্যন্ত কোন রোগবালাই নেই। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। সবকিছুর দাম বাড়তি হয়েছে। প্রতি বিঘা জমির টেন্ডার বাবদ ২৫-৩০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে আলু রোপণ করতে চাষ, বীজ, সার, বালাইনাশক, সেচ ও শ্রমিক মুজুরী বৃদ্ধি পেয়েছে।ফলে এক বিঘা আলু চাষে এবার ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা খরচ হবে। কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি ১০ বিঘা জমি টেন্ডার নিয়ে কার্ডিনাল ও ডায়মন্ড (সাদা) জাতের আলুচাষ করেছেন। এক বিঘা জমির টেন্ডার ২৫ হাজার টাকা তবে অনেক জায়গাতে জমির টেন্ডার বেশি আছে। প্রতি বিঘা জমি চাষ করতে খরচ চার হাজার টাকা, আলু লাগানো খরচ সাড়ে তিন হাজার টাকা আবার কোথাও বেশিও লাগে। এক বিঘা জমিতে আলু রোপন থেকে উঠানো পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা খরচ হবে। গতবার ৬০ থেকে ৬৫ হাজার খরচ হয়েছিল। এবার সব কিছুর দাম বেশি হওয়ায় আলুর চাষের খরচ বেশি হচ্ছে। এক বিঘা আলু আবাদে দুই বস্ত পটাশ, এক বস্তা টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও এক বস্তা ডিএপি দানাদার সারের প্রয়োজন। এতে আলুর ভালো ফলনের আশা থাকে। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন, আলু অত্র অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থকারি ফসল। এ অঞ্চলের মাটি আলু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় প্রান্তিক চাষিরা আলুর চাষাবাদ করছেন। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে আলু চাষিদের যথাযথ পরামর্শ, পরিচর্যার বিষয়ে প্রত্যক্ষ কারিগরি সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা অব্যাহত আছে। আলুচাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বালাইনাশক প্রয়োগ ও সুষম সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তাঁরা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় এখন পর্যন্ত আলুখেতে রোগ-বালাইয়ের প্রকোপ অনেকটা কম। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো ক্ষতি না হলে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারে ভালো দাম পেলে কৃষকরা লাভবান হতে পারবে।