December 29, 2024, 2:17 pm

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
রংপুর ও নীলফামারী জেলায় বিএসটিআই’র সার্ভিল্যান্স অভিযান পরিচালনা কুড়িগ্রাম জেলায় বিএসটিআই’র মোবাইল কোর্ট অভিযানে ১টি প্রতিষ্ঠান সীলগালা পাইকগাছায় ঘরের চালে চালে শোভা পাচ্ছে চাল কুমড়া বাঙ্গালপাড়ায় তাফসিরুল কোরআন মাহফিল অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনী পরিচালিত যৌথ অভিযানে খুলনায়  দেশীয় অস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী আটক সাদুল্লাপুরের ইদিলপুর ইউনিয়নের কৃষক দলের আহবায়ক কমিটি গঠন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আখতারুজ্জামান (সিআইপি) এর পক্ষ থেকে জীবননগরে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ উজিরপুরে গভীর রাতে শীতার্থদের মাঝে ইউএনওর কম্বল বিতরন সুজানগরে খাজা স্মৃতি সংঘের উদ্যোগে ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছিল – শেখ ফরিদুল ইসলাম
ধুঁকে চলা সরকারি শিশু হাসপাতাল ও একজন ডাক্তার জামিলের গল্প

ধুঁকে চলা সরকারি শিশু হাসপাতাল ও একজন ডাক্তার জামিলের গল্প

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
.শহর থেকে একটু দূরে একটা হাসপাতাল। হাসপাতাল চত্বরে নানান বয়সী উদ্বিগ্ন মানুষের ভিড়। বেশির ভাগ মানুষের চেহারায় দারিদ্র্যের চিহ্ন স্পষ্ট থাকলেও তাঁরা আশাহত নয়। ভিড় করা মানুষেরা তাঁদের শিশু সন্তানদের নিয়ে এসেছেন এখানে। মাত্র তিনজন চিকিৎসক মানুষের এই আশার কারণ। আর এই তিনজনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একেবারে সামনে থেকে যেই মানুষটি সে এলাকায় ডাক্তার জামিল নামেই পরিচিত। ভালো নাম ডাক্তার আলী হাসান ফরিদ। যতোটা আশা নিয়ে মানুষ এখানে আসে আর যতোটা খুশী নিয়ে তাঁরা ফেরত যায়, এই হাসপাতালের সামর্থ্য মোটেও তেমন নয়। শুরু থেকেই নানা সমস্যার মধ্যেও শিশুদের সেবা দিয়ে চলেছে ঝিনাইদহ জেলা শহরের ২৫ শয্যা সরকারি শিশু হাসপাতালটি।বড়ো অদ্ভুত ভাবে চলে এই সরকারি হাসপাতালটি। অর্থের অভাবে হাসপাতাল চত্বরে আবাদ করা হয় কলা। আর সেই কলা বিক্রির টাকা ও কিছু মানুষের অনুদানে চলে এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। সরকারী উল্লেখযোগ্য কোন বরাদ্দ না থাকায় চিকিৎসা সেবায় প্রয়োজনীয় যে কোন জিনিস কিনতে হয় মানুষের অনুদানের টাকায়।
হাসপাতালটির নিজের স্বাস্থ্য ভালো নাহলেও প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো রুগী চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকে আর আন্তঃবিভাগে ৬০ জনের বেশি শিশু চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকে। লোকবলের বড্ড অভাব এখানে। চিকিৎসকের পদ আছে ৫ টি। চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন ৩ জন। ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি), প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও স্টোরকিপারের পদ কাগজে থাকলেও সেখানে কোন লোক নেই। ২১ নার্স পদের বিপরীতে আছেন ১৭ জন নার্স কিন্তু এমএলএসএস, ওয়ার্ড বয়, আয়া, মালি, নিরাপত্তাপ্রহরী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কোন পদই নেই।

এই অবস্থা থেকে বের আসার জন্য এলাকার কিছু ব্যবসায়ী, কয়েকজন চিকিৎসক এবং ডাঃ আলী হাসান ফরিদ জামিলের একাধিক বন্ধুর সহায়তা করছেন। সেই সহায়তায় চলে শয্যা, যন্ত্রপাতি ও জনবল। ঝিনাইদহ পৌরসভা এবং জাহেদি ফাউন্ডেশন নিয়মিত সহায়তা করছেন এখানে। এ ছাড়া ১৫ জন হৃদয়বান ব্যক্তিও কিছু সহায়তা দেন। কিন্তু এসব দিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অক্সিজেন ও ওষুধের যে চাহিদা তার অর্ধেকও পুরণ হয় না।
মজার ব্যাপার হলো এই হাসপাতালটি ২০০৫ সালের ৭ই মে তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু হলেও ২০২১ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে হাসপাতালটি তার সেবা কার্যক্রম শুরু করে। উদ্বোধনের পর হাসপাতালে কোন সরঞ্জাম না থাকাই কনসালট্যান্ট আলী হাসান ফরিদ জামিল তাঁর বাসা থেকে ব্যক্তিগত কম্পিউটারে নিয়ে আসে। ওই কম্পিউটার হাসপাতালের কাজে ব্যবহার করে শুরু হয় শিশুদের চিকিৎসা ও মায়েদের পরামর্শ দেয়। জামিল ও টিমের আন্তরিক চেষ্টায় হাসপাতালটি এখন আশপাশের এলাকার মানুষের কাছে সুনাম অর্জন করা শুরু করে। কিন্তু ঢাল তলোয়ারের অভাব বারবার ই পিছিয়ে দিচ্ছে হাসপাতালটিকে।

আপনি হাসপাতালে গেলে প্রথমেই দেখবেন বড় একটি প্রবেশ গেট। ভিতরে প্রবেশ করলে চারিপাশে নানা ধরণের ফুলের বাগান। এর সামনে লাল ইটের দোতলা ভবন। হাসপাতাল চত্বরটি খুবই পরিপাটি করে সাজানো। ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে শয্যা পাতা আছে। শয্যাগুলোর গায়ে লেখা, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সেগুলো দান করেছেন। কিন্তু এভাবে চালানো ডাক্তার জামিল ও তাঁর টিমের জন্য দিনে দিনে কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে। এই হাসপাতালের খরচ চলে অনুদান ও হাসপাতালের পড়ে থাকা তিন বিঘার মতো জমিতে কলা চাষ করা টাকায়। এই কলা বিক্রি করে গত বছর আশি হাজার টাকার অক্সিজেন কেনা হয়েছে। এ বছরও তাই করতে হবে। এছাড়া হাসপাতালে রাতের নিরাপত্তার জন্য লাইট ও অন্যান্য জিনিসপত্র কলা বিক্রির টাকা দিয়েই কিনতে হয়। এছাড়া ওষুধ, অক্সিজেন এ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিতে হয় অনুদানের টাকায়। জনবল ও অন্যান্য সহযোগিতার জন্য সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখায় অনেকবার আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি।প্রতিবছরই ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে আবেদন যায় কিন্তু সমাধান সেই অনুদান ও কলা বিক্রির টাকার উপরেই নির্ভর করতে হয়। অথচ এখানে পার্শ্ববর্তী মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোর, চুয়াডাঙ্গা থেকে রুগী আসে চিকিৎসা নিতে।

এ যেন নুন আনতে পান্তা ফুরানো এক স্বপ্নের গল্প। এই মুহুর্তে এই হাসপাতালের জন্য প্রায় তিনলক্ষ টাকা দরকার শুধু অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার জন্য। কিভাবে আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু এতো অনিশ্চয়তার পরও ডাক্তার জামিল ও তাঁর টিম এই যুদ্ধে হারতে চাইনা। ওঁরা বিশ্বাস করে কেউ না কেউ একদিন ঠিকই এগিয়ে আসবে আর তাঁর ছোঁয়া পেয়ে তরতরিয়ে চলবে চিকিৎসাসেবা।

আতিকুর রহমান
ঝিনাইদহ।।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD