December 28, 2024, 7:12 am
আলিফ হোসেন,তানোরঃ
রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের বিশাল এলাকা জুড়ে ভূ-গর্ভের পানির স্তর তলানিতে ঠেকেছে।পানির স্তর এতটাই নিচে নেমেছে যে এখন বরেন্দ্রভূমির রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আট উপজেলার ২৬টি ইউনিয়ন (ইউপি) এলাকায় ১৭০ ফুট খনন করেও পানি উঠছে না গভীর নলকূপে। এসব এলাকার হাজারও হস্তচালিত নলকূপ এক দশক আগেই অচল হয়েছে। অব্যাহত পানি সংকট মোকাবিলা ও ভূ-গর্ভের পানির স্তর রক্ষায় নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)।এদিকে ভু-গর্ভের পানির স্তর ধরে রাখতে, সেচ নির্ভর বোরো চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত ও কম সেচ লাগে এমন ফসলের চাষাবাদ করাতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। অথচ তানোরে পল্লী বিদ্যুতের একশ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজশে আবাসিক ও অবৈধ মটর থেকে নির্বিচারে সেচ বাণিজ্যে করে ভু-গর্ভ স্তরের পানি অপচয় করা হচ্ছে। এতে বিএমডিএর নেয়া ভূ-গর্ভস্থ পানি ধরে রাখার উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে,এর দায় নিবে কে ?
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) চলতি সেচ নির্ভর বোরো মৌসুমে একটা গভীর নলকূপ ৯৮০ ঘণ্টার বেশি চালাবে না। বছরে একটা গভীর নলকূপ চলবে এক হাজার ৯৬০ ঘণ্টা। কৃষকেরা বলছেন, বিএমডিএর নতুন এ সিদ্ধান্তের কারণে বরেন্দ্রভূমির রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার পানি সংকট সম্পন্ন এলাকাগুলোতে বোরো চাষ অর্ধেকে নেমে আসবে। একটা গভীর নলকূপ এলাকার সেচ স্কিমের অর্ধেক জমিতে এবার বোরো চাষ করা যাবে। বাকি অর্ধেক জমিতে চাষ করতে হবে বোরো ছাড়া সেচ সুবিধাবিহীন প্রচলিত অন্য ফসল।
জানা গেছে, কর্তৃপক্ষের নতুন নীতিমালা
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার যে জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে আগামী বছর সেই জমিতে কম সেচনির্ভর অন্য ফসল চাষ করতে হবে। এ নীতিমালা শুধু বোরো চাষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে বিএমডিএর সিদ্ধান্তে জানা গেছে। অক্টোবরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ নতুন সেচ নীতিমালার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও কৃষকেরা জানতে পেরেছেন ডিসেম্বরের প্রথমে প্রচারপত্র হাতে পেয়ে। কৃষকেরা জানান ১ ডিসেম্বর নতুন সেচ নীতিমালার বিষয়ে অবহিত ও সচেতন করতে বিএমডিএর পক্ষ থেকে মাঠে মাঠে লিফলেট ও প্রচারপত্র বিতরণ শুরু করা হয়েছে। প্রচারপত্র হাতে পেয়ে কৃষকদের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে। মাঠে মাঠে এখন সেচ কর্তন জমি চিহ্নিত ও শনাক্তের কাজ করছে বিএমডিএর মাঠ কর্মকর্তারা। বিএমডিএর প্রচারপত্রে বলা হয়েছে নতুন সেচ নীতিমালা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত থাকবে। এই সময়ের বাইরে বোরোর নির্ধারিত জমিতেও আর সেচ দেওয়া হবে না। সেচ সংকোচনে কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কৃষকদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের প্রয়োজন ছিল বলে অনেক কৃষক জানিয়েছেন। আর কদিন পরেই তারা বোরোর জমি তৈরির কাজ শুরু করবেন। এমন সময়ে বিএমডিএ এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে কৃষকদের হতাশ করেছে। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার ১৩৫টি উপজেলায় বিএমডিএর গভীর নলকূপের সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৬৫টি।
তানোরে বিএমডিএর ৫৩৬টি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৬টি গভীর নলকুপ রয়েছে।
অন্যদিকে বিএমডিএর অধিভুক্ত এলাকায় ব্যক্তি মালিকানার প্রায় ৫৬ হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ ভূগর্ভের পানি উত্তোলন করছে। যার সিংহভাগ অবৈধ যেচযন্ত্র।
অভিজ্ঞ মহল বলছে,ব্যক্তি মালিকানা অবৈধ গভীর-অভীর ও আবাসিক
নলকূপগুলো থেকে সেচ পানি উত্তোলন বন্ধ করতে পারলেই ভূ-গর্ভস্থ পানি স্তরের সংকট আর থাকবে না। কর্তৃপক্ষ সেটা না করে কৃষকদের ওপর খাঁড়ার ঘা মেরে দিচ্ছেন। কারণ ব্যক্তি মালিকানার অধিকাংশ গভীর-অভীর ও আবাসিক নলকূপ অবৈধ। বিএমডিএর নতুন সেচ নীতিমালার কারণে এবার অর্ধেক জমিতে বোরো আবাদ করতে পারবেন কৃষকেরা। যেসব কৃষক বিএমডিএর সেচ স্কিমের বাইরে বোরো আবাদ করবেন তারা সেচ সুবিধা পাবেন না। তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউপির কৃষক আতাউর রহমান, সিরাজুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম বলেন, নতুন নিয়মের কারণে তাদের স্কিমের জমি দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক ভাগে এবার বোরো ধান হবে; অন্য ভাগে পরের বার হবে। এর ফলে কৃষকদের বিপুল পরিমাণ জমি পতিত থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।এবিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, আমরাও বিষয়টি শুনেছি। আমরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বিএমডিএকে বলেছি। নতুন সেচ নীতিমালার কারণে হাজার হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা থাকছে।#