November 24, 2024, 8:10 pm
স্বরূপকাঠি উপজেলা প্রতিনিধি //
সোনালী আঁশ পাট বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পরিচিতি ঘটালেও প্লাষ্টিক সামগ্রির কারনে তার ঐতিহ্য কিছুটা মৃয়মান হয়ে যায়। সম্প্রতি সোনালী আঁশের কদর পূনরায় বৃদ্ধিপেতে শুরু করেছে। অতি সম্প্রতি পাটের সাথে যুক্ত হয়েছে আর একটি আশ যা তৈরী হয় কলাগাছের উচ্ছিষ্ট অংশ খেকে। বাগান থেকে কলা কেটে নেওয়ায় পরে গাছটিকে এতদিন হেলাফালা করে ডোবা নালা বা খাল-নদীতে বাসিয়ে দেওয়া হত। এতে বিপর্যয় ঘটত পরিবেশের। সেই পরিবেশ বিনষ্ট কারী কলাগাছ এখন একাট অর্থকরি সাম্রগীতে পরিনত হয়েছে। কলাগাছ থেকে এখন তৈরী হচ্ছে সুতা, ফাইবার কারু শিল্পের কাচামাল। রপ্তানি হয় বিদেশে। আর এর বিপ্লব ঘটিয়েছে স্বরূপকাঠী উপজেলার অশ্বথকাঠী গ্রামের জনার্দ্ধন দেবনাথের নেতৃত্বে দুই শতাধিক নারী-পুরূষ।
স্বরূপকাঠী উপজেলার দক্ষিন পূর্ব সিমান্তর একটি গ্রামের নাম অশ্বত্থকাঠী। এলাকাটি কৃষি প্রধান হলেও শিক্ষদীক্ষা ও উদ্ভাবনী দিক থেকে অনেক এগিয়ে। ওই এলাকায় ধান থেকে শুরু করে হেন চাষাবাদ নেই যা তারা করেন না। এতদিন তারা একটি কলাবাগান থেকে কেবলা মাত্র কলা ছাড়া কিছুই পেতেন না। এক বছর পূর্বে কলাগাছের উচ্ছিষ্টংশ থেকে অর্থ আয় করাযায় তা শিখিয়েছেন উপজেলার রাহুতকাঠী গ্রামের বাসিন্দা দেশের সনামধন্য ইংরেজি অধ্যাপক মো.নজরুল ইসলামের ছেলে মামুন নেছার্স। যিনি এক জন কারু উদ্দোক্তা। ‘কারু বরিশাল’ নামে তার একটি সংস্থা রয়েছে। তিনি অশ্বথকাঠী গ্রামের জনার্দ্ধন দেবনাথকে প্রথমিক অবস্থায় কলাগাছের ফেলে দেওয়া অংশ থেকে অর্থকারি সামগ্রী উপাদন করা সম্ভব এ মন্ত্রে দীক্ষিত করেন ।
গত পৌষ মাসে এলাকার ৫০ জন নারী পুরুষকে জনার্দ্ধন দেবনাথের বাড়ীতে একত্রিত করে মামুন ও তার বন্ধুরা প্রশিক্ষন দেন কিভাবে কলাগাছ থেকে আয় করা সম্ভব। এর পরে ওই এলাকার প্রশিক্ষন প্রাপ্ত নারী পুরুষ ফেলে দেওয়া কলাগাছ সংগ্রহ করে কারু সামগ্রী তৈরীর কাঁচামাল প্রস্তুত শুরু করেন। বর্তমানে এ সংখ্যা দুইশতাধিক অতিক্রম করেছে। ওই কাঁচা মাল তৈরী করে অনেকে নিজের পরিবারকে সাজিয়ে তুলেছেন। আয় করেছেন কেউ কেউ এক-দেড় লাক্ষ টাকা পর্ষন্ত। এমন সব তথ্য পাওয়ায় অশ্বথকাঠী গ্রামের বাড়ী বাড়ী ঘুরে।
জনার্দ্ধন দেবনাথ জানান, মামুন আমার পূব পরিচিত তিনি এক বছর পূবে এ কাজে আত্বনিয়োগে পরামর্শ দেন। এখানে একটি গুদাম ঘর ভাড়া করে উৎপাদিত মালামাল খরিদ করে মজুদ করার ব্যবস্থা করে দেন। গ্রামের উদ্যোগতারা ওই কাঁচামাল তৈরী করে শুকিয়ে ওইখানে নিয়ে আসলে তা মেপে প্রতি কেজি ৭০ টাকা হিসাবে মূল্য দেওয়া হয়। এই মাল পাঠাবার মত মজুত হলে ট্রাকভাড়া করে রংপুরে পাঠিয়ে দেই। ইতি মধ্যে ৬ ট্রাক মাল পাঠানো হয়েছে।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে দেখা যায় গোটা এলাকা জুড়ে সাড়িসাড়ি কলাগাছ। রাস্তারওপর ব্রিজ সাঁকোর ধরনীতে ছেড়া কলাগাছের বাকল(খোসা) শোভা পাচ্ছে। প্রতিটি কলাগাছের দুই দিকের অংশ কেটে ওপর থেকে সবুজ খোলগুলো ফেলে সাদা বাকল(ছাল) ছাড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন বাড়ীতে নারী-পুরুষ অনেকেই কলাগাছের ছেড়া বাকল শুকাতে ব্যাস্ত। শশীদ বাজারের নারী দোকানী মনিকা বলেন,জনার্দ্ধন দেবনাথের মাধ্যমে জানতে পেরে এ কাজ করছি। শুনেছি এ সুতা দিয়ে কলাবতী শাড়ী উৎপন্ন হয়। আমার দোকানের কাজের ফাঁকে এ কাজ করে ১৫ হাজার টাকা আয় করেছি। যা আমার সংসারের জন্য একটি বারতি আয়।
সীমা বেগম বলেন, আমরা ভাল করে শুকিয়ে জনার্দ্ধন কাকার আড়তে নিয়ে গেলে সাথে সাথে মেপে ৭০ টাকা কেজি হিসেবে টাকা দিয়ে দেন। মো. ছায়েম, প্রান মন্ডল, মদন দেবনাথ বলেন, এ কাজ করে অনেকে সংসারের জন্য ফ্রিজ, ওভেনসহ নানা সামগ্রি কিনতে পেরেছে। কেউকেউ এক-দেড় লাখ টাকাও আয় করেছেন।
মূল উদ্যোক্তা মো.মামুন নেসার্স মুঠো ফোনে বলেন, কলণাগাছ দিয়ে সুতা হয় যা দিয়ে ছেয়া, ব্যাগ এক কথায় পাট দারা যেসব কারুপন্য হয় তার সব কিছুই কলাগাছের বাকল দিয়ে হয়। আমি কারু শিল্পের সাথে জড়িত। আমার “কারু বরিশাল” নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। সে সুবাদে আমার এক বড়ভাইয়ের সহায়তায় পাটের পাশাপাশি কলাগাছের সুতা দিয়ে অনেক কারু পন্য তৈরি করছি। কাঁচামাল সংগ্রহে অশ্বত্থকাঠি এলাকা থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছি। ৬ ট্রাক মাল ইতোমধ্যে নিয়েছি। এখনো আমার ভাড়া করা গুদামে দুই ট্রাক মাল রয়েছে। জানুয়ারী মাসের দিকে এগুলো নেওয়া হবে। আমরা বিদেশী বায়ারদের সাথে চুক্তির চেষ্টা করছি। ইনশাল্লাহ জানুয়ারী ফেব্রæয়ারী মাস থেকে এর কার্যক্রম আরো বেগবান হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে আমি সরেজমিনে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। স্বরূপকাঠি উপজেলার মানুষ নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরিতে উৎসাহী। এখানের মানুষ কাঠ, নার্সারী, ক্রিকেট ব্যাট, ঝুড়–, পাপোষ, রশি, ম্যাড তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কলাগাছের ফেলে দেওয়া অংশ দিয়ে অর্থ উপার্জনের যে উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখ। এর মূল উদ্যোক্তাকেও ধন্যবাদ জানাই। এ কাজের বিকাশে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বপ্রকার সহযোগীতা করা হবে।###