মুন্সীগঞ্জে নামের কারণে উন্নয়ন বঞ্চিত শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়

লিটন মাহমুদ,
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার রিকাবী বাজার এলাকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি নামের কারণেই আওয়ামীলীগ সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে কোন রকম উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে । বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ হওয়ায় বিদ্যালয়টি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে বলে মনে করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ। দীর্ঘ বছর উন্নয়ন ও বরাদ্দ বঞ্চিত হওয়ায় বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
বিদ্যালয়ের ৭০-৮০ শতাংশ খেলার মাঠ দখল করে নিয়েছে আওয়ামীলীগ। ১৫০ শতাংশ খেলার মাঠের জমি থেকে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করার নামে আওয়ামীলীগ স্কুলের ওই জমি দখল করে নেয়। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও মিরকাদিম পৌর বিএনপির সভাপতি জসিমউদদীন জানান, তারা আদালতে মামলা করেছিলেন, আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপরও শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করার সময় তাদের স্কুলের ৭০-৮০ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয়।
এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যালয়ের নানা সমস্যা ও উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত দিলেও কোন কাজ হয়নি। টিআর প্রকল্পসহ একটি টাকাও বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দ হয়নি। দিনেদিনে বিদ্যালয়টি ধ্বংসস্ত্তপে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯৪। প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ে পাসের হার ভালোই। এসএসসিতে পাসের গড় হার ৯২%। ২০২২ সালে ৯৭.৬৭%, ২০২৩ সালে ৮০% এবং ২০২৪ সালে ৮৯.০৪%।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বছরের পর বছর সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেও বিদ্যালয়ের অনুকূলে একটি টাকাও বরাদ্দ দেয়নি সরকার। বর্তমানে বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতায় ২৮ বছর আগে বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন সংস্কার ও মেরামত না হওয়ায় আস্তর খুলে পড়ছে, রং নষ্ট হয়ে শেওলা ধরেছে। ফ্লোর সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে ফেটে গর্ত হয়ে গেছে। দরজা ও জ্বালানা স্থাপন এবং সিঁড়ির রেলিং স্থাপন জরুরি। বিদ্যালয়টির পুরাতন ভবন সংস্কার, মেরামত ও চুনকামের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং মুন্সীগঞ্জ জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে বার বার আবেদন করেও কোন প্রতিকার হয়নি।
বিদ্যালয়ে প্রবেশের রাস্তাটি খানা-খন্দকে পরিণত হয়েছে। খানা-খন্দগুলো বালু দিয়ে ভরাট করা জরুরি। এই স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র ঘরের। শিক্ষার্থীরা নামমাত্র সেশন ফি, ভর্তি ফিতে ভর্তি হয়ে বিনাবেতনে অধ্যয়ণ করে। এতে বিদ্যালয় ফান্ডে কোন অর্থ নেই। জাইকার অর্থায়নে বিদ্যালয়ে একটি ওয়াশ ব্লক নির্মাণ দরকার। আধুনিক ও বাস্তব সম্মত শিক্ষার ছোঁয়া লাগানোর জন্য কম্পিউটার ও ল্যাব দরকার। বিদ্যালয়ে কোন শহীদ মিনার নেই। প্রতিবছর মহান শহীদ দিবসে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্য বিদ্যালয়ে গিয়ে শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করে। বিদ্যালয়টিতে কোন গেইট নেই। বিদ্যালয়ের গেইট ও প্রাচীর নির্মাণের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোন প্রতিকার বা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। বর্তমানে পুরাতন জরাজীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম চলছে। এই বিদ্যালয়ে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন উন্নয়ন প্রকল্পে অত্র বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করা জরুরি বলে মনে করছেন তাদের অভিভাবকরা। এই বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং মুন্সীগঞ্জ জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জালাল উদ্দিন জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে স্কুলের নামে একটি টাকাও বরাদ্দ হয়নি। একেরপর এক আবেদন করেছি। শুধু বিদ্যালয়টি নামের কারণে আওয়ামী লীগ সরকার টিআর প্রকল্পসহ উন্নয়নে কোন বরাদ্দ দেয়নি৷ স্কুলের সংস্কার, মেরামত, নতুন ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য সমস্যাগুলো উল্লেখ করে নতুন করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করছেন বলে তিনি জানান।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *