November 12, 2024, 6:50 am
খাইরুল ইসলাম মুন্না বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
বরগুনার বেতাগীতে রাতের আঁধারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রেসক্লাবের ভবন। লুটে নেওয়া হয়েছে ইট,সুরকি ও রড। অভিযোগের তীর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) বিপূল সিকদারের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন ও বরগুনা জেলা প্রশাসক এবং ইউএনও‘র কাছে এর প্রতিকার চাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত শনিবার রাতের আঁধারে শারদীয় দুর্গোউৎসবের জাতীয় বন্ধের সময় বেতাগী পৌর শহরস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন বেতাগী প্রেসক্লাবের ভবন গুড়িয়ে তার ইট,সুরকি ও রড লুটে নেওয়া হয়। এতে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অপূরণীয় এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠার নয়।
এর প্রতিবাদে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ঝড় উঠে। এ ঘটনার পরে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) বিপূল সিকদারের বোধদয় না হওয়ায় এবং তার সাথে একাধিকবার মুঠেফোন সহ নানাভাবে যোগাযোগের চেস্টা করেও তাকে না পাওয়ায় অপেক্ষার প্রহরগুনে অবশেষে স্থানীয় সাংবাদিকরাও সোচ্চার হয়। সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলমের সাথে বেতাগী প্রেসক্লাবের একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে এর প্রতিকার দাবি করেন, এ সময় তিনি এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সোমবার সকাল থেকে এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত উপজেলা সহকারি কমিশনারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাক্ষাত মেলেনি। অবশ্য নাম না প্রকাশের শর্তে উপজেলা ভ’মি অফিসের এক কর্মচারি জানান, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) বিপূল সিকদারের পদোন্নতি হওয়ায় তিনি শনিবার জাতীয় বন্ধের দিনেও রাত অবধি এ উপজেলায় শেষ কর্মদিবস করে ৬ মাসের প্রশিক্ষনে ঢাকায় চলে যান।
এর আগে রোববার দুপুরে বেতাগী প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয় সভা ডেকে এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন প্রেসক্লাবের ভঙ্গুর জায়গায় গণমাধ্যম কর্মির্প্রাতিবাদ কর্মসূচি পালন করে এবং পরবর্তীতে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় গিয়ে প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা এ অভিযোগ তুলে ধরেন।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশনেন,সাপ্তাহিক বিষখালী পত্রিকার সম্পাদক আব্দুস সালাম সিদ্দিকী, বেতাগী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুল ইসলাম মন্টু,প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লায়ন শামীম সিকদার,সহ-সভাপতি সহকারি অধ্যাপক আবুল বাসার খান, বেতাগী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: মহসিন খান, দপ্তর সম্পাদক অলি আহমদ, দৈনিক গণকন্ঠের প্রতিনিধি প্রভাষক শাহাদাত হোসেন, দি কান্ট্রি টুডের প্রতিনিধি আরিফ সুজন, দৈনিক আমাদের সময় প্রতিনিধি সজল মাহামুদ, দৈনিক আজকের দর্পনের প্রতিনিধি খাইরুল ইসলাম মুন্না, বিশ্বমিডিয়ার প্রতিনিধি ইমরান হোসেন সহ অন্যান্যরা।
তাছাড়াও এ ঘটনায় বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোস্তফা কাদের, সাধারণ সম্পাদক জাফর হাওলাদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সালে, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর মৃধা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ করেন।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান,বাজার থেকে স্বাভাবিকভাবে লোকজন চলে যাওয়ার পর ঐদিন রাতে উপজেলা ভ’মি অফিসের জনৈক কর্মচারি পাহারায় থেকে দাঁড়িয়ে লোক লাগিয়ে ভারী ভেকু মেশিন দিয়ে প্রেসক্লাবের ভবনভেঙে তছনছ করে ফেলে। এসময় অন্য কোন মানুষ ছিলোনা বলে তিনি এর প্রতিবাদ করেননি। ্
স্থানীয় সাংবাদিকরা জনান, ১৯৮৫ সালে বেতাগী প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীণ সময়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক, থানা নির্বাহী অফিসার,খাদ্য উপমন্ত্রী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দেও সহযোগিতায় বেতাগী খাসকাচারি মাঠের পূর্বপাশে জায়গা বাছাই করে। সেখানে প্রাথসিক পর্যায়একটি কাঠের ঘর উত্তোলন করে। সেখান থেকেই স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকান্ড সহায়তা প্রদান বিশেষ করে মহান ভাষা দিবসে সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে সকল কর্মসূচি পালন করতো।
এক পর্যায়ে দুই তলা বিশিষ্ট প্রেসক্লাবের পাকা ভবন নির্মাণ কাজে হাত দেওয়া হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনকালে তৎকালীণ স্থানীয় সংসদ সদস্য, বরগুনা জেলা প্রশাসক, থানা নির্বাহী অফিসার, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বেতাগী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম সিদ্দিকী বলেন, ভবনের পাকা করার পরেও তখনকার সময় প্রশাসনের পক্ষথেকে নোটিশ কিংবা কোন ধরনের বাঁধা দেওয়া হয়নি। এটা কি প্রশাসনের বৈধতা প্রদান ও সস্মতির অংশ নয়? তার পরেও যদি প্রশাসনের সরকারি কাজে জমির প্রয়োজন হয়। তা সাংবাদিকদের ডেকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে রাতের আঁধারে না করে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে যেভাবে ভবনের কাজ শুরু করা হয়েছে। সে ভাবেই করা যেতো । তা হলে আজ মানুষের মনে কোন প্রশ্নের তৈরি হতোনা। এতে করে সাংবাদিক সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। আমরা কোন প্রতিহিংসার শিকার কিনা এ জন্য ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক মালামাল উদ্ধারের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ ও প্রতিকার দাবি করছি।
বেতাগী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: মহসিন খান অভিযোগ করেন, সেই থেকে ভবনের নির্মাণ কাজে দীর্ঘসময়ের প্রয়োজন ও সম্পন্ন না হওয়ায় বেতাগী পৌরসভার পক্ষথেকে কাজ সম্পন্ন করণে একটি টেন্ডারও দেওয়া হয়। যা এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্ত পরিতাপের বিষয় গত ১২ অক্টোবর দিবাগত রাতের আঁধারে প্রেসক্লাবের ভবনটিতে সহকারি কমিশনার (ভুমি) বিপূল সিকদার নির্মমভাবে কুঠারাগাত করেন। ভবন ভাঙার আগে কোান না কোন সংবাদ কর্মিকে জানানোটা তাদের অধিকারের মধ্যে ছিলো। এর ফলে অধিকার হরণ ও সংবাদকর্মিদের ভাবর্মর্তি বিনষ্ট করা হয়েছে। সরকারি একজন শীর্ষ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসাবে তার বোধোদয় হওয়া উচিত ছিল।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আহমদ এ ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করে বলেন, তিনি যতটুকু জেনেছেন রাতের আঁধারে নয়, বিকেল থেকেই ভবনটি ভাঙা শুরু হয়ে তা অপসারণে রাত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এর পরিত্যাক্ত মালামাল গুলো উদ্বার করে তা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আর যা যা করা দরকার এবিষয়ে তিনি সব কিছুই করবেন।