December 30, 2024, 11:00 am
ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলা বাংলাদেশের সবথেকে প্রচীন একটি উপজেলা। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন লাগোয়া এই উপজেলা হওয়া সত্বেও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেনি এই উপজেলার বাসিন্দাদের। উপজেলা শহর থেকে তালতলা মোল্লারহাট সড়কটি হলো মূল সড়ক।
এক সময় এই সড়ক দিয়ে মোল্লারহাট টু বরিশাল পর্যন্ত চলতো বাস। তখন রাস্তা ছিলো ইটের হেরিংবোন কিন্ত পিচ হবার পরে কিছুদিনের মধ্যে সেটা বন্ধ হয়ে যায়।এ বিষয়ে তালতলা বাজারের দীর্ঘদিন যাবৎ বাস কাউন্টার পরিচালনা করে আসা আঃ মোতালেবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন। এখানে গাড়ি চলাচল করলে বিভিন্ন লোকজন ডিস্টার্ব করে। চাঁদা দিতে হবে তাদের কাউন্টার দখল নেবার জন্য গ্রুপ তৈরি হয়। লোকাল যানবাহন চালকরা বাস শ্রমিকদের সাথে খারাপ আচরন করে। যেসব কারনে এরুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে উপজেলার পৌরশহরের দূরত্ব দিনদিন বেড়েই চলছে দক্ষিন ও উত্তরের বাসিন্দাদের।
এর কারন হিসেবে জানা যায় উপজলা শহর থেকে তালতলা, মোল্লারহাট,মানপাশা,নাচনমহল সহ দক্ষিনের ৬ টি ইউনিয়নের মানুষ একমাত্র কাগজপত্রের কাজ ছাড়া কেউই নলছিটি উপজেলা শহরে আসেন না। কারন দিনের বেলা যাতায়াত ব্যবস্থা যেমন তেমন কিন্ত রাত হলেই যানবাহন সংকটের ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।
দিনের বেলা সারিসারি অটোরিকশা,মাহেন্দ্র, কিংবা মোটরসাইকেল থাকলেও রাত ৮ টার পরে পাওয়া কঠিন। যদিও পাওয়া যায় তাতে গুনতে দ্বিগুণ তিনগুন বাড়তি ভাড়া। এসব রুটে বড় যানবহন না থাকায় স্থানীয় এসব যানবাহন চালকদের স্বেচ্ছাচারিতার স্বীকার হয় এসব অঞ্চলের সাধারন যাত্রীরা। সুবিদপুরের বাসিন্দা সোহেল হাওলাদার জানান। কোন জরুরি কিছু কিনতে যাওয়া বা জরুরি চিকিৎসার জন্য নলছিটি শহরে যাওয়া যতটা সহজ কিন্ত নলছিটি থেকে রাতে ফেরাটা কঠিন। কারন আমাদের মতো সাধারন মানুষের পক্ষে অটো রিজার্ভ নিয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে আসা অসম্ভব। তার থেকে বরিশাল যাতায়াত করি যেকোনো সময় গাড়ি পাওয়া যায় হয়রানির স্বীকার হতে হয়না।
একাদিক সাধারন যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়। অটোচালক,মাহেন্দ্র, মোটরসাইকেল এদের নির্দিষ্ট কোন ভাড়ার চার্ট নেই। তাই যে যার খুশিমতো ভাড়া নেয়। একটি অটোরিকশায় যাত্রী পরিবহন করার কথা ৫-৬ জন কিন্ত জোড়জবরদস্তি করে যাত্রী নেয় ৮ জন। একসময় টমটম,বডবডি কিংবা নসিমন চরলতো তখন ২০ মিনিট পরপর ছেড়ে দিতো। কিন্ত এখন আর কোন টাইম নেই ৮ জন যখন হবে তখন ছাড়বে।
যার ফলে করে স্কুল কলেজগামী ছাত্র ছাত্রীরা সঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারেনা। অফিসগামী লোকজন সঠিক সময় অফিস করতে ও সমস্যা হয় বলে জানা যায়। একজন শিক্ষার্থী জানান বাস চললে তো আমরা হাফভাড়া দিতে পারতাম। কিন্ত এসব যানবাহনে সাধারন যাত্রীদের মতো আমাদের থেকে ফুল ভাড়া নেয়। হাফ ভাড়া দিতে চাইলে করে করে গালাগালি। তাতে আমরা শিক্ষার্থী হিসেবে সরকারের দেওয়া হাফভাড়া সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানাই যাতে আমাদের হাফ ভাড়ার সুযোগ পেতে পারি সেই ব্যবস্থা করা হয়।
এসব ড্রাইভারদের কোন নিয়মনীতি না থাকায় মহিলা পুরুষ উভয়ের সাথে প্রায় সময় খারাপ আচরন করে। অনেক সময় সেটি হাতাহাতিতে পর্যন্ত গড়ায় যেটা কখনোই কাম্য না। রাতের বেলা কখনো কখনো নলছিটি থেকে তালতলা মোল্লারহাট মানপাশা যাবার মাঝ পথে তাদের গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে যায়। তারপর যাত্রীদের রাতের বেলা এখান সেখানে নামিয়ে দেয় ভাড়াও বাড়তি নিয়ে যায়। কেউ কেউ রাতে গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেটেও গন্তব্যে পৌছাতে হয়।
এসব কারনে উপজেলা শহরের প্রতি বিমুখ হচ্ছে সাধারন মানুষ। যার কারনে উপজেলার ব্যবসীয়িদের ও দিনদিন লোকসানের মুখে পরতে হচ্ছে। রানাপাশা ইউনিয়নের লোকজনের বিশেষ কেনাকাটা করতে যেতে হয় রাজাপুর কারন নলছিটির থেকে তাদের রাজাপুরে যাতায়াত সহজ হয়। মগড়,আমিরাবাদ,ভৈরবপাশার মানুষ তো সবসময়ই ঝালকাঠী মুখি। কারন তাদের নলছিটি আসতে নদী পার হতে হয়। ফেরির সময় মতো ফেরি চলাচল করে দীর্ঘ সময় পরপর। উপজেলা শহরের অনেক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায় দিনদিন নলছিটি উপজেলাগামী মানুষের সমাগম কমছে। আমাদের ব্যবসা বানিজ্য দিন দিন অবনতি হচ্ছে।
যেসময়ে পদ্মাসেতুর কারনে দক্ষিন অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পন্য সরবাহ সহজ হয়েছে। সেসময়ে নলছিটি উপজেলার মানুষ তার সুফল ভোগ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যোগাযোগ ও যানবাহন ব্যবস্থায় নিয়মশৃঙ্খলা না থাকার কারনে। নলছিটির ৬ টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের দাবী আগের মতো মোল্লারহাট টু বরিশাল বাস চলাচলের ব্যবস্থা করা। স্থানীয় যেসব যানবাহন চলাচল করে সেসব যানবাহন কে একটি নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা। যাতে করে নির্দিষ্ট সময় পরপর একটি অটো,মাহেন্দ্র ছেড়ে যায়। স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের দাবী তারা বাংলাদেশ সরকারের দেয়া হাফ ভাড়া সেটি যেন কার্যকর করা হয়। এজন্য ঝালকাঠি ২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু (এমপি) মহোদয় ও নলছিটি উপজেলা চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান সেলিম, নির্বাহী অফিসার জনাব মোঃ নজরুল ইসলাম সহ সকল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি চায় উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের সাধারন মানষ।