December 26, 2024, 10:49 pm
রাজশাহী মোঃ হায়দার আলী : বিএনপি জামায়াতবিহীন রাজশাহী – ১ আসনে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন আওয়ামীলীগ নেতা কর্মী সমর্থকগন। এখানে নৌকার প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগ। এ আসনটি গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলা নিয়ে। ব্যারিস্টার আমিনুল হক বিএনপির মনোনয়নে এই আসনে তিনবার সংসদ সদস্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, আইন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। দলের একক প্রার্থীও ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর পর এই আসনটিতে আর একক কেউ নেই। বিএনপি জামায়াত কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন বর্জন করছেন। তাই নেই কোন নির্বাচনী উত্তাপ। জন সাধারণের মাঝে নেই নির্বাচনী ভাবনা, হিসেব নিকাশ। তবে এখনও নির্বাচনের অনেক সময় রয়েছে। ১১ জন প্রার্থী হয়েছে। সে সাথে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি রয়েছে। যুব সমাজ তাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। তাকে ভোট দেয়ার বিষয়টি নিয়ে এখন ভাবছেন না। দেখার পর সিদ্ধান্ত নিবেন।
২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টানা সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি এলাকায় ব্যপকহারে উন্নয়ন করেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবন, ব্রিজ, কালভাট, পদ্মানদীর ধারে বাঁধ নির্মান, রাস্তাঘাটসহ ব্যাপক উন্নয়ন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। কিন্তু দলীয় কিছু অসৎ নেতা, জনপ্রতিনিধির অবৈধ কর্মকান্ড, অনিয়ম, দুর্নীতির কারনে বেশ কিছু ত্যাগি নেতা কর্মী সমর্থক নৌকা বিমুখ হয়ে আছেন। তবে তাদেরকে নির্বাচনী মাঠে না রাখলে ভাল হবে বলে সচেতন মহল মনে করেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকাকে বিজয়ী করার বিকল্প ভাবছেনা এলাকার মানুষ বলে আওয়ামীলীগ নেতার বলছেন। তবে এ আসনে ওমর ফারুক চৌধুরী শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকায় লড়াই হবে বাঘে মহিষে। ওমর ফারুক চৌধুরী একমাত্র প্রার্থী তিনি তিন বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। একবার ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে এমপি হয়েছেন। বাকী সব প্রার্থী নতুন হওয়ায় তাদের এমপি নির্বাচনের কোন অভিজ্ঞা নেই। এটাই এমপি ওমর ফারুক চৌধুর প্লাসপয়েন্ট। রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর সাথে এবার লড়বেন তিন নারীসহ ১০ প্রার্থী। তারা সবাই নতুন মুখ। এদের মধ্যে চারজন স্বতন্ত্র ও বাকিরা দলীয় প্রার্থী। চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থীই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে ভোটের মাঠে নামছেন।
জেলার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত রাজশাহীর ভিআইপি আসন নামে পরিচিত এখানে ভোটে লড়তে চান তিনবারের এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান আখতার, গোলাম রাব্বানী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সহধর্মীনি শাহনেওয়াজ আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়া, চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়া, বিএনএফ দলের প্রার্থী আল-সাআদ, তৃণমূল বিএনপি থেকে জামাল খান দুদু, এনপিপির প্রার্থী নুরুন্নেসা, বাংলাদেশ সাংস্কৃতি মুক্তিজোট প্রার্থী বশির আহমেদ, জাতীয় পার্টি থেকে শামসুদ্দীন মন্ডল ও বিএনএম’র প্রার্থী শামসুজ্জোহা বাবু।
এদের মধ্যে আখতারুজ্জামান আখতার, গোলাম রাব্বানী, শাহনেওয়াজ আয়েশা আখতার জাহান ও চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তারা চারজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ও গুরুত্বপুর্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজশাহী-১ ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিতি আছে। এখান থেকে যিনি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি মন্ত্রী পরিষদে স্থান পেয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত থেকে হেভিওয়েট প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর আগে বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও টানা তিনবারের মন্ত্রী প্রায়াত ব্যারিষ্টার আমিনুল হক আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
এছাড়াও ব্যারিষ্টার আমিনুল হক সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক থাকায় তার বড় ভাই পুলিশের সাবেক আইজিপি ড. এনামুল হক নির্বাচনে অংশ নিয়ে ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। ব্যারিষ্টার আমিনুল হক মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই বিএনপি সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব:) শরিফ উদ্দীন এবার নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে সরব ছিলো।
এছাড়ও জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে থাকেন। তিনি ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জমান আখতার। তিনি গেলো রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ভোট করলে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তিনি দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
গোলাম রাব্বানী তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র। তিনি বর্তমানে জেলা কমিটির সদস্য। এলাকায় রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে বাপ-দাদার বংশ পরম্বরায় বেশ জনপ্রিয়তা আছে এই আওয়ামী লীগ নেতার।
রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তৃণমুলের নেতাকর্মীদের নিখাদ ভালবাসায় গোলাম রাব্বানীকে ঘিরে একটা শক্ত বলয় গড়ে উঠেছে। রাব্বানী ব্যতিত এ বলয় অন্যদিকে ঘুরানো যাবে না। তৃণমুলের নিখাদ ভালবাসার থেকে কোনো বড় শক্তি নাই, এই বলয় সেটাই প্রমাণ করেছে বার বার । দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনায়ন জমা দিয়েছন। পৌর নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয় জেনেও মুন্ডুমালা পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হননি। রাব্বানীর ঘনিষ্ঠ সুত্র জানায়, তিনি নৌকা পেতে তৎপর ছিলেন দীর্ঘদিন থেকে কিন্তু নৌকা না পেয়ে নেতা কর্মী সমর্থকদের চাপে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
তবে তার কাছের লোকজনের কথা প্রতীক নয় আমজনতার ভালবাসার থেকে বড় শক্তি নাই। কারণ কোনো এমপি-মন্ত্রী, উপজেলা-ইউপি চেয়ারম্যান বা মেয়র নয় আওয়ামী লীগের প্রাণ তৃণমুলের পাঁফাটা নেতা ও কর্মী-সমর্থকগণ।
জানা গেছে,স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এক সময়ের অবিসংবাদিত নেতা, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, পাঁচন্দর ইউপির দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান, মুন্ডুমালা পৌরসভার দু’বারের সাবেক মেয়র তারকা খ্যাতি সম্পন্ন বর্ষিয়ান রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও জননেতা গোলাম রাব্বানি রাজনীতিতে তাঁর হারানো গৌরব ফেরাতে এমপি প্রার্থী হয়েছেন।
তৃণমূলে রাব্বানীর যে জনসমর্থন তাতে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েই বিজয়ী হবার ক্ষমতা রাখেন বলে মনে করছে তৃণমূল। ২০১৮ ইং সালের নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন।
আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সহধর্মীনি শাহনেওয়াজ আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়াও এবার নতুন মুখ। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এবার লড়বেন ওমর ফারুক চৌধুরীর সাথে। প্রায় ১০ বছর ধরে এলাকায় নানা ধরণের সামাজিক কর্মকান্ড চালিয় নিজের অবস্থান তৈরী করেছেন। বিশেষ করে গরীব, দু:স্থদের ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মাঝে তার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।
অপরদিকে, দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়ার বাসা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার সদরে। তবে তার নানার বাড়ী তানোরের মুন্ডমালায়। নানার বাড়িতেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। ছোট বেলা থেকে বিভিন্ন সংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ নেয়ার কারণে এলাকায় তিনি আগে থেকেই পরিচিত। তাই তিনি এ এলাকাকেই বেছে নিয়েছেন ভোটে লড়তে। ফলে রাজশাহী-১ আসন থেকে এবার প্রথমবারের মত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে লড়বেন হেভিওয়েট প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে।
কাগজে কলমে নাম শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়া হলেও তিনি পরিচিত চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি নামে। তিনি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের রাজশাহী বিভাগের আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্বে আছেন। এ আসনে নির্বচনী উত্তাপ কেমন ছাড়ায়, ভোটারদেরকে নির্বাচনমূখি করতে প্রার্থীরা কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করেন সেটার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
মোঃ হায়দার আলী,
রাজশাহী।