October 12, 2024, 3:22 am
মোঃ হায়দার আলীঃ গত ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ছিল ২৯ তম বিশ্ব শিক্ষক দিবস কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার জন্য শিক্ষক: শিক্ষক স্বল্পতা পূরণে বৈশ্বিক অপরিহার্যতা’ -এই বাস্তবাতাকে সামনে রেখে বিশ্বের সকল শিক্ষকের প্রতি সম্মান জানাতে প্রতি বছরের মতো এবারও পালিত হয়েছে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনায় প্রধান অতিথির ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শিক্ষক দিবসে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন সরকারের পাশাপাশি শিক্ষক, অভিভাবক ও সুধীজনদেরকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মানোন্নয়নে এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় শহর ও গ্রামের বৈষম্য নিরসনে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার ও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে সবাইকে কোচিং ব্যবসা পরিহারের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্বমানের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার ও তাগিদ দেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এক শ্রেণীর অসাধুচক্র ও কতিপয় বিপথগামী শিক্ষক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোচিং সেন্টারের নামে রমরমা ব্যবসা করছেন। শিক্ষার মান উন্নয়নে এ কোচিং ব্যবসাকে পরিহার করতে হবে।’
‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের জ্বালিয়াতি থেকেও উত্তরণ ঘটাতে সরকার, মন্ত্রণালয়, শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমরা চাই দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী সুশিক্ষিত ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখুক। ছেলে-মেয়েদের প্রতিভা বিকাশের পথ দেখাতে সকল শিক্ষক ও অভিভাবকদেরকে সচেষ্টা হওয়ারও পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি। তিনি ছেলেমেয়েদের জিপিও-৫ পাইয়ে দেয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং জিপিএ ৫ পেয়েও মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নূন্যতম যোগ্যতা অর্জন করতে না পারার বিষয়েও কঠোর সমালোচনা করেন। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘দেশের সমাজ ব্যবস্থায় এখনও শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা অন্য যে কোনো পেশার তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু এই সামাজিক অবক্ষয়ের যুগে কিছুসংখ্যক বিপথগামী শিক্ষকের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজের সম্মান ও মর্যাদা ক্ষুন্ন হতে পারে না।’ রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক বিদেশে গিয়ে কতটুকু প্রশিক্ষণ নেন এবং দেশে ফিরে ক্লাসরুমে তার প্রশিক্ষণের কতটুকু প্রয়োগ করেন সেই বিষয়টিও মনিটরিং করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেন। শিক্ষকদের বেতন-স্কেল, আনুষঙ্গিক ভাতা, পদোন্নতিসহ যেকোনো অসঙ্গতি থাকলে তা দূর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টসকলের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান।
বিশ্ব শিক্ষক দিবসে বেসরকারী শিক্ষক, কর্মচারীদের অনেক দাবী, আশা আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যশা কিন্তু তার প্রতিফলন ঘটেনি। তারা হতাশ হয়েছে। ক্ষোভ করে ফেসবুকে নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন। কেননা এমপিওভুক্তিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা যে অর্থ পান, তা দিয়ে লাগামহীম দ্রব্যমূল্যের বাজারে তাদের পরিবার চালাতে কষ্ট হয়। এটি যেন দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিদের নজরে আসেনি। হিসাব-নিকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে শিক্ষক নেতার মিডিয়ায় মন্তব্য করেছেন। প্রধান মন্ত্রী এব্যপারে দুটি করার নির্দেশ দিলেও রহস্যজনক কারনে এখনও আলোর মুখ দেখেনি। সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম (এন আই) খান বলেন, ‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নানা ভাগে বিভক্ত হয়েছে। সেটি একীভূত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক দলনেতার ভূমিকা পালন করলেও তাদের জন্য কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই। অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হচ্ছে। শিক্ষকদের উন্নয়নে প্রশিক্ষণের প্রতি জোর দিতে হবে।’
শিক্ষায় গতি আনয়নের ক্ষেত্রে জাতীয়করণের বিকল্প নেই। জাতিয়করণ হলেই শিক্ষায় গতি আসবে শতভাগ। বর্তমান শিক্ষা বাজেটের যে অতিরিক্ত বরাদ্দ তার অর্ধেক খরচ করেই জাতীয়করণ সম্ভব। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সরকারি বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের হাহাকার ঘোচাবার সুযোগ আছে। প্রয়োজন শুধু আন্তরিকতার। এবার এ বিপুল বাজেটের আংশিক খরচের মাধ্যমে জাতীয়করণ করা সম্ভব। মানসম্মত শিক্ষা ও মেধাবী জাতি গঠনে জাতীয়করণের বিকল্প নেই।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে আমাদের অবস্থান তলানীতে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা হাস্যরসের খোরাক হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সর্বোচ্চ পর্যায়ে শিক্ষাখাতকে প্রাধান্য দেয়া, মাধ্যমিক শিক্ষাকে গতিশীল করা, মাধ্যমিক পর্যায়ে মেধাবিকাশে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা চালুকরণ জাতীয়করণ ছাড়া সম্ভব নয়।
বর্তমানে শিক্ষকতার পেশাটাকে মুখে মুখে সম্মানজনক পেশা বলা হলেও গ্রেড অনুপাতে বেতন, কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর বোর্ডের আচরণ, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা আর সিকি উৎসবভাতা কিন্তু অন্যটা প্রমাণ করে। আমরা যে শতভাগ অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার তা কিন্তু এই বেতন ও সামান্য সুবিধা প্রমাণ করে।
এই পেশার এই অবমূল্যায়ন আর সিঁকি সুবিধা প্রত্যক্ষ করে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চায় না। অন্যান্য চাকরি বঞ্চিত হলে একান্ত বাধ্য হয়ে তারা এ পেশায় এলেও বেতন, ভাতা ও মূর্খ পরিচালনা কমিটি দেখে পড়ানোর মানসিকতা পরিবর্তন করে তারা এটাকে চাকরি হিসেবে বেছে নেয় সেবা হিসেবে নয়। এটা জাতির জন্য অশনিসংকেত। অভাবগ্রস্ত শিক্ষকরা মানসিক ভাবেও বিপদগ্রস্ত। অভাব যখন চারদিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে তখন নিদারুণ কষ্টের ভান্ডার থেকে সৃজনশীল কিছু পাওয়ার চিন্তাই বৃথা। তাই অতিশীঘ্র জাতীয়করণ না হলে এ শিক্ষা ব্যবস্থায় অরাজকতা বৃদ্ধি পাবে, শিক্ষায় প্রতিযোগিতা আরও কমবে এবং এসব সেক্টরে প্রচন্ড অসন্তুষ্টি দেখা দেবে। আমাদের দেশের চেয়েও অনুন্নত বেশ কয়েকটি এশিয়ান রাষ্ট্রে শিক্ষা খাতে সর্বনিম্ন জিডিপি ৩.৫০ বা ৪ শতাংশ সেখানে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হয়েও আমাদের জিডিপি ২.০৯ শতাংশ। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা, উচ্চ শিক্ষা ও মাদ্রাসাসহ সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাণবন্ত করতে, আশানুরূপ ফলাফল পেতে জাতীয়করণ একান্ত প্রয়োজন। বিশাল বাজেটের আংশিক এবং প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের আয় জমা নিয়ে জাতীয়করণ করলে শিক্ষক/শিক্ষার্থী যেমন উপকৃত হবে তেমনি আমাদের শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মান ও কৌশল অবলম্বন করে বাস্তবিক প্রয়োগ সম্ভব হবে। বেসরকারি শিক্ষকদের হাহাকার নিরসনে এবারই জাতীয়করণের মোক্ষম সুযোগ। করোনা মহামারীর কারণে বাজেট ব্যয় সম্পূর্ণ হওয়ার সুযোগ নেই। তাই ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থে জাতীয়করণ সম্ভব। মেধাবীদের শিক্ষকতায় আনতে, শিক্ষায় প্রাণ ফিরাতে জাতীয়করণের বিকল্প নেই।
১৯৪৮ সালে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে শিক্ষার অগ্রগতি, মানবজাতির ক্রমোন্নতি এবং আধুনিক সমাজের বিকাশ সাধনে শিক্ষক সমাজের অপরিহার্য ভূমিকা ও অবদানের কথা জোরের সাথে ঘোষণা করে শিক্ষকগণ যাতে এসব ভূমিকা পালনের জন্য উপযুক্ত সম্মান ও মর্যাদা ভোগ করতে পারেন তা সুনিশ্চিত করার অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়েছে।
১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ইউনেস্কোর উদ্যোগে শিক্ষকদের মর্যাদা সম্পর্কে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক বিশেষ আন্তঃসরকার সম্মেলন বিশ্বব্যাপী শিক্ষকদের অধিকার, কর্তব্য ও মর্যাদা বিষয়ক আন্তর্জাতিক দলিল ‘ইউনেস্কো/আইএলও সনদ’ স্বাক্ষরিত হয়। ওই দিবসটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। শিক্ষকেরা মানুষ গড়ার কারিগর, জাঁতি গঠনে তাদের ভূমিকা বেশী। দেশের ৯০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেসরকারী শিক্ষকগন শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়ন, পাসের হার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছেন কিন্তু সত্য তারা বেতন বৈষম্য, মেডিকেল, ২৫ ভাগ ঈদ বোনাস, বাড়ীভাড়াসহ নানামূখি সমস্যায় মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। তাদের নুন আন্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা। বেসরকারী শিক্ষকদের প্রাণের দাবী, শিক্ষক দিবসে বেসরকারী শিক্ষকদের শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা হউক, এ কাজ টি করতে পারেন প্রধান মন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর সুযৌগ্য কন্যা শেখ হাসিনা।
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড হলে শিক্ষকরা শিক্ষার মেরুদন্ড। কিন্তু আজ শিক্ষক সমাজ অবহেলিত ও বিভিন্নভাবে হয়রানি-নির্যাতনের শিকার। শিক্ষকদের চাকরির নিরাপত্তা, আর্থিক স্বচ্ছলতা, সামাজিক মর্যাদা নেই বলে মেধাবীরা এই পেশায় আসতে চান না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষকরা রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়ে চাকরি হারিয়ে পথে পথে ঘুরছেন। শিক্ষকদের চাকরির নিরাপত্তা নেই বলেই আজ শিক্ষার বেহাল অবস্থা।
শিক্ষাক্ষেত্রে আজ পর্বতসম বৈষম্য বিদ্যমান। সরকারি বেসরকারি স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষক-কর্মচারীদের সমযোগ্যতা ও সমঅভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও সরকারি স্কুল ও বেসকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেলে পার্থক্য রয়েছে। সরকারি স্কুল-কলেজের ছাত্রদের যে সিলেবাস বেসরকারি স্কুল-কলেজের ছাত্রদের ও একই সিলেবাসে পড়ানো হয়। কিন্তু তাদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা ও বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয়। আমাদের বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন স্কেলের ২৫% ও কর্মচারীদের ৫০% উৎসব ভাতা দেওয়া হয়। বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের সাথে ইহা বিমাতাসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের ১/১/১৯৮০ থেকে জাতীয় বেতনর স্কেলের অন্তুর্ভূক্ত করেন এবং ৫০% বেতন স্কেল প্রদান করেন। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ ১০%+১০% = ২০% প্রদান করেন। ১৯৯৪ সালের শিক্ষক আন্দোলনে তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১০%, ২০০০ সনে আন্দোলনে তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০% এবং সর্বশেষ ২০০৬ সনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১০% বেতন প্রদান করে ১০০% এ উন্নীত করেন। এখন চাকুরী জাতীয়করণের কোন বিকল্প নেই। চাকুরী জাতীয়করণের জন্য সরকারের অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন নেই।
বর্তমানে শিক্ষক কর্মচারীরা সরকার থেকে ১০০% বেতন পান। এজন্য সরকারকে প্রদান করতে হয় প্রতি মাসে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা মাত্র। ১২ মাসে সরকারকে দিতে হয় ১২০০০ কোটি টাকা মাত্র।
প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হলে সরকারকে প্রদান করতে হবে মোট প্রায় ১৭৮২০ কোটি টাকা প্রায়। বর্তমান সরকার বেতন বাবদ প্রদান করছে ১২০০০ কোটি টাকা। অতিরিক্ত প্রদান করতে হবে প্রায় ৫৮২০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারের আয় হবে প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
শিক্ষকগণ হচ্ছেন জাতির বিবেক ও মূল্যবোধ সংরক্ষণের ধারক ও বাহক। শিক্ষার সংস্কার, সম্প্রসারণ ও মান উন্নয়নে সরকার বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিবেন বলে শিক্ষক সমাজ প্রত্যাশা করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দিনে শিক্ষক দিবস পালন করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশ পৃথক পৃথক তারিখে এই দিবসটি পালিত হয়। পাঠকদের জন্য কিছু দেশের শিক্ষক দিবস সম্পকে তুলে ধরা হলো
ভারতে ৫ সেপ্টেম্বর ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের জন্মজয়ন্তীর দিনে শিক্ষক দিবস পালিত হলেও, বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয় ৫ অক্টোবর। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশ পৃথক পৃথক তারিখে এই দিবসটি পালিত হয়। এখানে জানুন এমন কয়েকটি দেশের ব্যাপারে। কলম্বিয়া- ১৫ মে তারিখে স্যান জুয়ান বাওতিস্তা ডি লা সাল্লেকে শিক্ষকদের অভিভাবক-রক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তিনিই মুক্ত ও সর্বজনীন শিক্ষানীতির রূপরেখা তৈরি করেন। পরে সে বছরই দেশের রাষ্ট্রপতি ওই দিনটিকে শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।
১৯৯৭ সালে দেশের সার্বভৌমত্ব হস্তান্তরের আগে ২৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হত। পিপালস রিপাবলিক অফ চাইনাকে দেশের সার্বভৌমত্ব হস্তান্তরের পর ১০ সেপ্টেম্বর পালিত হতে শুরু করে শিক্ষক দিবস।
ইন্দোনেশিয়া- ইন্দোনেশিয়ান টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠার দিনটি হল ২৫ নভেম্বর। সে দিনটিকেই জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
ইরান- মোরতেজা মোতাহারির স্মৃতিতে ২ মে তারিখে শিক্ষক দিবস পালিত হয়।
ইরাক- ১ মার্চ শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয় ইরাকে। মালয়েশিয়া- ১৬ মে তারিখটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। মালয়েশিয়ায় দিনটিকে ‘হরি গুরু’ নামে ডাকা হয়। নেপাল- আশাদ পূর্ণিমার দিনে নেপালে শিক্ষক দিবস পালিত হয়। জুলাই মাসের মাঝামাঝি আসাদ শুক্ল পূর্ণিমা পড়ে। নেপালে এই দিনটিকে বলা হয় গুরু পূর্ণিমা।
নিউ জিল্যান্ড- ২৯ অক্টোবর শিক্ষক দিবস পালিত হয় এই দেশে। সিঙ্গাপুর- সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম শুক্রবার পালিত হয় শিক্ষক দিবস।
তবে ২০১১ সালের আগে পর্যন্ত পয়লা সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হত সিঙ্গাপুরে। দক্ষিণ কোরিয়া- ১৫ মে তারিখটি শিক্ষকদের উৎসর্গ করেছে এই দেশটি। রেড ক্রস যুব দলের সদস্যরা হাসপাতালে তাঁদের অসুস্থ শিক্ষকদের দেখতে যান। সেই তারিখটি ছিল ২৬ মে। তবে ১৯৬৫ সাল থেকে তারিখটি বদলে ১৫ মে করা হয়। স্পেন- ২৭ নভেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয় এই দেশে। থাইল্যান্ড- প্রতিবছর ১৬ জানুয়ারি শিক্ষক দিবস পালিত হয় এখানে। ১৯৫৬ সালের ২১ নভেম্বর সরকারের তরফে একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে এই দিনটিকে শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- ১৯৪৪ সালে আমেরিকার মৈটে ওয়ায়েটে উডব্রিজ সর্বপ্রথম শিক্ষক দিবসের পক্ষে সওয়াল করেন। পরে ১৯৫৩ সালে মার্কিন কংগ্রেস তাতে সায় দেয়। ১৯৮০ সাল থেকে ৭ মার্চ শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হতে শুরু করে। কিন্তু পরে মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার এটি পালিত হতে থাকে। সেখানে এক সপ্তাহ ধরে এইদিনটি পালিত হয়।
আর্জেন্টিনা- রাষ্ট্রপতি ডোমিঙ্গো এফ. সার্মিয়েন্টোর স্মৃতির উদ্দেশে ১১ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয় সেখানে। সাংবাদিক, স্যান জুয়ানের রাজ্যপাল, কূটনীতিজ্ঞ, সেনেটর ও রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি। তিনিই দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে অত্যাবশ্যক করেন। পাশাপাশি স্থাপন করেন ৮০০টি শিক্ষা ও মিলিটারি প্রতিষ্ঠান-সহ শিক্ষক স্কুলের। গড়ে তোলেন জনসাধারণের জন্য লাইব্রেরি। আমেরিকান মডেলের শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে তিনি ৩২ জন আমেরিকান শিক্ষককে দেশে আমন্ত্রণ জানান। ১৯৪৩ সালে শিক্ষার ওপর পানামায় আয়োজিত ইন্টারআমেরিকান কনফারেন্সে ১১ সেপ্টেম্বরকে প্যানআমেরিকান টিচার্স ডে হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অস্ট্রেলিয়া- এখানে অক্টোবর মাসের শেষ শুক্রবার শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। শেষ শুক্রবার যদি ৩১ অক্টোবর হয়, তা হলে ৭ নভেম্বর শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয় অস্ট্রেলিয়ায়।
ভুটান- ২ মে এখানে পালিত হয় এই দিনটি। ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দোরজি ওয়াঙচুকের জন্মজয়ন্তীর দিনে শিক্ষক দিবস পালিত হয় ভুটানে। তিনিই দেশে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন।
ব্রাজিল- ১৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবস পালিত হয় ব্রাজিলে।
দেশের ডিক্রি পরিচালিত কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এই দিনটি পালন করা শুরু করে। ধীরে ধীরে দেশব্যাপী এই দিনটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর ১৯৬৩ সালে এই দিনটিকে আধিকারিক ভাবে শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১০ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয় চিনে। ১৯৩১ সালে ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি এই দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৩২ সালে চিনের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে গৃহীত হয়। আবার ১৯৩৯ সালে এর তারিখ বদলে ২৭ অগস্ট করা হয়, কনফুসিয়াসের জন্মজয়ন্তীকে শিক্ষক দিবস হিসেবে উৎসর্গীকৃত করা হয়।
কিন্তু পরে ১৯৫১ সালে পিপলস রিপাবলিক অফ চাইনার সরকার এই দিনটিকে বাতিল ঘোষণা করে। ১৯৮৫ সালে শিক্ষক দিবস পুনরায় পালিত হতে শুরু করে। সে সময় ১০ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়।
১৯. ভিয়েতনাম- ২০ নভেম্বর পালিত হয় শিক্ষক দিবস। ১৯৫৭ সালে শিক্ষাবীদদের সঙ্গে একটি বৈঠকে এই দিনটির প্রসঙ্গ উঠে আসে। পরে ১৯৫৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল মেনিফেস্ট অফ এডুকেটর্স-এর দিন হিসেবে এটি পালিত হত। ১৯৮২ সালে এর নতুন নামকরণ করা হয়। সেটি হল ভিয়েতনামিস এডুকেটর্স ডে। এ ছাড়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বাংলাদেশ, বুলগেরিয়া, ক্যামারুন, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, এস্টোনিয়া, জর্জিয়া, জার্মানি, কুয়েত, লিথুয়ানিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, মোলডোভা, মঙ্গোলিয়া, মায়ানমার, নেদারল্যান্ড, নাইজেরিয়া, নর্থ ম্যাসিডোনিয়া, পাকিস্তান, পাপুয়া-নিউ গিনি, ফিলিপিন্স, পোর্তুগাল, কাতার, রোমানিয়া, রাশিয়া, সাউদি আরব, সার্বিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, ইউকে এই দেশগুলিতে ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবস পালিত হয়। বেসকারী শিক্ষকদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে শিক্ষক দিবসে, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বেসরকারী শিক্ষক সমাজের প্রাণের দাবী
একটায় সেটা হলো বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে জাতীয়করণ করা। এ ঘোষনার অপেক্ষায় শিক্ষক সমাজ তীর্থের কাকের ন্যয় চেয়ে কিন্ত সে হলো না। সরকারীদের মত বাড়ী ভাড়া, পর্নাঙ্গ ঈদ বোনাস, চিকিৎসাভানর ঘোষনা হলেও শিক্ষকগণ খুশি হতেন।