October 9, 2024, 1:55 pm
স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : এবার সৌদি নয় বাংলাদেশে বিয়ে উপভোগ করলেন মরুভূমির দেশ সৌদি ব্যবসায়ী বন্দর এনাজি আশসাই। কর্মচারীর দাওয়াতে বিয়েতে অংশ নিতে নিতে হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আসেন বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে। আর এমন বিয়েতে অংশ নিতে পারায় খুশি তিনি।
জানাগেছে, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া গ্রামের লালন শেখ (৪৫) সৌদি আরবের নাদিম শহরে ব্যবসায়ী বন্দর এনাজি আশসাই-এর অধিনে চাকুরী করে। লালন শেখের ভাতিজা রাশেদুল শেখও চাকুরী করেন একই স্থানে। লালন শেখ তার মালিক বন্দর এনাজি আশসাইকে তার ভাতিজার বিয়ের দাওয়াত দিলে তিনি বুধবার (২৭ অক্টোবর) সৌদি আরব থেকে ঢাকা হয়ে হেলিকপ্টারে করে গোপালগঞ্জের কাজুলিয়া আসেন।
বৃহস্পতিবার (০৫ অক্টোবর) কর্মচারী রাশেদুলের বিয়েতে বরযাত্রী হয়ে বিয়েতে অংশ নেন। ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বরযাত্রী হয়ে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া পৌরসভার রতাইল এলাকায় অবস্থিত কনের বাড়িতে যান সৌদি নাগরিক বন্দর এনাজি আশসাই। কর্মীর বিয়েতে সৌদি মালিক অংশ নেওয়ায় বর ও কনের বাড়িতে ছিল আলাদা আমেজ। সৌদি নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে বরযাত্রী কনের বাড়িতে পৌঁছানোর পর শুরু হয় উৎসবের পরিবেশ।
ভিনদেশীদের এমন ব্যতিক্রম বিয়ের আয়োজন দেখে কিছুটা অবাক সৌদি নাগরিক বন্দর এনাজি আশসাই। বিয়ে বাড়িতে পোলাও, রোস্ট, কয়েক প্রকার মাছ, আস্ত খাশি, গরুর মাংস, পায়েসসহ বেশ কয়েক প্রকার খাবার খান তিনি। খাবার শেষে সৌদির নিয়ম অনুযায়ী কোলাকুলি করে নিজ কর্মীকে অভিনন্দন ও তার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানান।
আজ শুক্রবার রাশেদুলের বৌভাতের অনুষ্ঠানেও অংশ নেন আবু বন্দর। সৌদি নাগরিককে দেখতে ভীড় করেন বিয়ে বাড়ির সকল অতিথিরা।
কর্মচারীর বিয়েতে এসে কেমন লাগলো এমন প্রশ্নে সৌদি ব্যবসায়ী বন্দর এনাজি আশসাই বলেন, আমার খুবই ভালো লেগেছে। রাশেদুলের বিয়েতে আসতে পেরে আমি সব চেয়ে খুশি। আমাদের দেশে বিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু রাতে এশার নামাজের পর। শেষ করতে হয় ফজরের আগে। ৫-৬ ঘন্টায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বিয়ের চিত্র ভিন্ন। এখানে দুই তিন দিন ধরে বিয়ের অনুষ্ঠান চলে। এরা বিয়েতে অনেক আনন্দ করার সুযোগ পায়, নাচ গান করে। কিন্তু ধর্মীয় বিষয়টির (কাবিন ও মোনাজাত) সাথে অনেকটা মিল আছে। আর খাবারের সাথে কিছুটা মিল রয়েছে।
বাংলাদেশী বিয়ের খাবার খেতে কেমন লেগেছে এবং সৌদিতে কি কি খাবার পরিবেশন করা হয় জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আমার কাছে বিয়ের খাবার খেতে খুবই ভালো লেগেছে। আমি খুব তৃপ্তি করে খেয়েছি। আমাদের দেশের চাইতে খাবারে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। আমাদের দেশে বিয়ের খাবারের ম্যানুতে কখনো মাছ থাকে না।এদেশে দেখছি মাছ আছে। এছাড়া বেশিরভাগ বিয়েতে আমাদের ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানি রাখা হয়।
বর রাশেদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি সৌদি নাগরিক আমার মালিক বন্দর এনাজি আশসাই-এর প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। কিছুদিন আগে দেশে আসার পর পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে ঠিক হয়। আমি নিজেই মালিককে দাওয়াত পাঠাই। তিনি দাওয়াত নাকচ না করে দাওয়াত গ্রহন করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসে আমার বিয়েতে অংশ নিয়েছেন। আমার কফিল (মালিক) আমার বিয়েতে সৌদি থেকে এসেছে এজন্য আমি ধন্য।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে সৌদি আরব থেকে বিমানে করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরন করেন সৌদি ব্যবসায়ী বন্দর এনাজি আশসাই। পরে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে গোপালগঞ্জের কাজুলিয়া গ্রামের পল্লী মঙ্গল ইউনাইটেড একাডেমি এন্ড কলেজে মাঠে এসে নামেন। সেখানে সৌদি ব্যবসায়ী বন্দর এনাজি আশসাইকে দেখতে ভীড় করেন উৎসুক জনতা। ফুলের মালা দিয়ে অভিনন্দন জানান গ্রামবাসী। এ কয়দিনে আবু বন্দর ঘুরেছেন সুন্দরবন, কুয়াকাটা সহ দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। #