October 9, 2024, 7:25 pm
এস. এম সাইফুল ইসলাম কবির . বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌরসভার পাবলিক টয়লেট সংকট পথচারীদের চরম ভোগান্তি স্বাস্থ্যঝুঁকি চরমে। টয়লেটগুলো রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত নয় এবং কাঙ্ক্ষিত স্থানেও নয়। যে কারণে অধিকাংশ মানুষ এসব পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করে না। এছাড়াও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও স্বতন্ত্র প্রবেশপথ না থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীরা এসব পাবলিক টয়লেট এড়িয়ে চলেন।
গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পাবলিক টয়লেট না থাকায় পথযাত্রীরা যত্রতত্র প্রস্রাব করে পরিবেশ নষ্ট করছেন। অনেক এলাকার পথচারীদের নাকে-মুখে রুমাল দিয়ে পথ চলাচল করতে হচ্ছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দ্রুত নারী ও প্রতিবন্ধীবান্ধব, আধুনিক, মানসম্মত ও পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের দাবি জানিয়েছে পথচারী ও পরিবেশবাদীরা। সরেজমিনে দেখা গেছে,মোরেলগঞ্জ পৌরবাসীর মানুষের স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এখানে রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপজেলা খাদ্য গুদাম। পৌরবাসীর শিক্ষা ব্যবস্থা প্রদানের জন্য রয়েছে ০৮টি সরকারী প্রথামিক বিদ্যালয়,০৩টি কিন্টার গার্ডেন,০৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ,০৩টি বালিকা বিদ্যালয়,১টি সরকারী বালিকা বিদ্যালয়,০৩টি কলেজ,২টি মাদ্রাসা, ০১টি মহিলা কলেজ এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী সিরাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজ, মোরেলগঞ্জ লতিফিয়া ফাযিল ডিগ্রী মাদ্রাসাএবং এসিলাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় । ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে পীর কালাচাদ আউলিয়ার মাজার ,কুঠিবাড়ী নীলকুঠি ভবন এবং যার নামের জন্য এই উপজেলার নাম সেই ব্যক্তি রবার্ট মোড়লের স্মৃতিত্মম্ভ ইত্যাদি। মোরেলগঞ্জ ছিল এক সময়ের এ অঞ্চলের ব্যবসা বানিজ্যের প্রাণকেন্দ্র ।হলদে হয়ে যাওয়া কমোড, ভাঙা বেসিন, মেঝেতে জমা পানি ও কাদা, ভাঙা দরজা, অপর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও সংস্কারের অভাবে উৎকট গন্ধ পুরনো পাবলিক টয়লেটগুলোতে। এ ছাড়া নতুনভাবে যে কয়টি পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে, সেগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব বলা হলেও নেই স্যান্ডেল, পানি সরবরাহ, টয়লেট টিস্যু ও হ্যান্ডওয়াশ। মেরামতের অভাবে বিকল হয়ে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহকৃত পানির কলগুলোও।যেসব পাবলিক টয়লেট রয়েছে সেগুলোতে দুর্গন্ধ, ভাঙা দরজা, ছিটকিনি না থাকা, ছাদের পানি চুয়ে পড়া, এমনকি নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। ফলে পুরুষরা কোনোমতো প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পারলেও নারীদের পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। প্রতিবন্ধীদের কথা তো বিবেচনাতেই নেওয়া হয়নি এক্ষেত্রে। বাসা থেকে কাজে বের হয়ে আবার ফিরে না আসা পর্যন্ত প্রস্রাব-পায়খানা চেপে রাখতে হয় নারী-প্রতিবন্ধীদের।
গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পাবলিক টয়লেট না থাকায় পুরুষরা লাজলজ্জার মাথা খেয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই রাস্তাঘাটের পাশে আশ্রয় নেয়। আবার অনেকে দীর্ঘ সময় প্রস্রাব-পায়খানা আটকে রাখেন। চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘ সময় প্রস্রাব চেপে রাখার ফলে মূত্রনালির সংক্রমণসহ নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই। প্রস্রাবে ইউরিয়া এবং অ্যামিনো অ্যাসিডের মতো টক্সিন জাতীয় পদার্থ থাকার কারণে বেশিক্ষণ চেপে রাখার ফলে বিষাক্ত পদার্থ কিডনিতে পৌঁছে কিডনিতে স্টোন বা পাথর তৈরি করতে পারে। এছাড়া প্রস্রাব চেপে রাখার কারণে ব্লাডার ফুলে যেতে পারে। পথচারীরা পর্যাপ্ত টয়লেট বা ব্যবহারের উপযোগী টয়লেট না পাওয়ায় টয়লেট ব্যবহার না করে মল-মূত্র আটকে রাখে। যেখানে-সেখানে মল-মূত্র ত্যাগ করা পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি মল-মূত্র আটকে রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মল-মূত্র আটকে রাখলে এটি মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায় এবং এর ফলে মূত্রাশয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। সংক্রমিত হয় মূত্রথলি, কিডনি ও অন্যান্য অঙ্গ। আশা করি, মোরেলগঞ্জে পাবলিক টয়লেট সংকট দূর হবে। সামছুন নাহার জুথি নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, মোরেলগঞ্জে যে কয়টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে তার বেশিরভাগ ব্যবহারের অনুপযোগী। একটি মেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে জরুরি প্রয়োজনে টয়লেট ব্যবহার করতে হলেও তাকে বাধ্য হয়ে এক থেকে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে বাসায় ফিরতে হয় যা চরমভাবে মেয়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। আর কোনো কারণে মার্কেটের কোনো টয়লেট ব্যবহার করতে হলে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়।