December 22, 2024, 6:31 am
মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম
উপজেলা নির্বাহী অফিসার
সদর ময়মনসিংহ :-
শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া, যা দোলনা থেকে শুরু হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত চলে। এই প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দু হলো শিক্ষার্থী যাদেরকে ঘিরে সমগ্র শিক্ষাপ্রক্রিয়া আবর্তিত হয়ে থাকে আর বৃত্তের মতো চারপাশ জুড়ে থাকেন একজন মা। প্রকৃত অর্থে, বাড়িই হচ্ছে একটি শিশুর প্রথম স্কুল যেখানে মায়ের মাধ্যমে শিখনরাজ্যে প্রবেশ ঘটে একটি শিশুর। তারপর যাত্রা শুরু নিকটস্থ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মায়ের কাছ থেকে আদর ও শাসনের মিশেলে পাওয়া শিক্ষাই প্রকৃত অর্জন। একথা অনস্বীকার্য যে, সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনে মায়ের ভূমিকাই প্রধান। তাই সন্তানের নৈতিক চরিত্র গঠন ও আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় অভিভাবক হিসেবে মায়ের গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষার ভিত তৈরি হলে তা আরো বাস্তবমুখী ও গুণগত মানের হয়ে উঠে। মায়ের রূপে স্কুলশিক্ষক হিসেবে নারী শিক্ষককে অগ্রাধিকার দিতে দেশের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় ৬০ ভাগ নারী শিক্ষক নিয়োগ বিধান রাখা হয়েছে।
একটি শিশু দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যালয়ে অবস্থান করে, সেক্ষেত্রে সহপাঠী ও শিক্ষকদের সাথে তৈরি হয় মিথস্ক্রিয়ার অবারিত সুযোগ। একজন শিশুর প্রকাশভঙ্গি, আচরণ, শেখার ধরন অন্যশিশুদের থেকে ভিন্ন। আর এই বিষয়গুলো খুব সুন্দরভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ হয় একজন শিক্ষকের। মা ও শিক্ষকের সঠিক পর্যবেক্ষণ এবং সে অনুযায়ী সন্তানকে গড়ে তোলার পদ্ধতি অনুসরণ করলে একটি শিশু ভবিষ্যতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে এতে কোন সন্দেহ নেই। আদর্শ শিক্ষকের প্রভাব, প্রতিপত্তি ও সুনাম শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় বিদ্যমান থাকে এমনটি নয়। আদর্শ শিক্ষক, আদর্শ মানব সৃষ্টির শৈল্পিক কারিগর। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, নির্দেশনা এবং আদর্শ, স্থান, কাল, পাত্র, জাতি, ধর্ম ও বর্ণভেদের উর্ধ্বে উঠে মানবতার কল্যাণে ব্যাপৃত হয়। তাই বলা হয় ব্যক্তি মানব এখানে অর্থহীন কিন্তু ব্যক্তি শিক্ষক সকলের শ্রদ্ধার ও সম্মানের পাত্র। শিক্ষকের শিক্ষাদর্শন সার্বজনীন কল্যাণকর। একে নির্ধারিত ফ্রেমে আবদ্ধ করা যায় না। একজন শিক্ষক তখনই সফল হন যখন তিনি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করতে পারেন। আর শিক্ষার্থীরা তখনই সফল হয় যখন শিক্ষকের নির্দেশিত শিক্ষাকে আত্মস্থ করতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন ছাত্র শিক্ষক সুসম্পর্ক। তাই এই সম্পর্ক উন্নয়নে যা করতে হবে তা হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে অবশ্যই পরস্পরের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলোকে যথাযথভাবে পালন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রতি সর্বদা সন্তুষ্ট থাকবেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সম্পর্ক নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সময়ে সময়ে মা সমাবেশের আয়োজন প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে। একজন মা যেমন তার সন্তানকে সবচেয়ে ভালো জানেন, তেমনি একজন বন্ধুসুলভ শিক্ষক জানেন ছাত্রের পছন্দ-অপন্দের দিক, তাদের ভালো লাগার বিষয়গুলি। শিক্ষকের ভালোবাসা, স্নেহের সংস্পর্শে খারাপ বা কম মনোযোগী শিক্ষার্থীও ভালো হয়ে যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা যখন একজন শিক্ষককে তাদের মায়ের ভূমিকায় দেখে তখন তাকে সম্মান ও আগ্রহভরে ভক্তি করে মনেপ্রাণে স্থান দিয়ে থাকে। মা সমাবেশের মাধ্যমে মায়েরা তাদের সন্তানদের শিখন পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হওয়ার পাশাপাশি সন্তানের ভাল-মন্দ দিকগুলি নির্ধারণ করতে পারেন। আর তাতে সহজতর হয় সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। একজন মা শিক্ষকের যত কাছাকাছি আসবেন তত জানতে পারবেন তার সন্তানকে। তাই মা সমাবেশের নিয়মিত আয়োজন সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানকে করবে পরিপূর্ণ, করবে আরো পরিশীলিত।