December 22, 2024, 6:30 am
মো.হাসমত উল্লাহ,লালমনিরহাট।।।
লালমনিরহাটে কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে ঢেঁকি । ‘ও বউ ধান ভানে রে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া-ঢেঁকির পাড়ে পল্লীবধূদের এমন গান বাংলার গ্রামীণ জনপদে সবার মুখে মুখে শোনা যেত। ধান থেকে চাল- তা থেকে গুড়া। এক সময়ে চাল আর গুড়া তৈরির একমাত্র মাধ্যম ছিল ঢেঁকি। নবান্ন এলেই ঢেঁকির পাড়ে ধুম পড়ত নতুন ধানের চাল ও গুড়া তৈরির। আর শীতের পিঠা তৈরি চলত গ্রামের প্রায় সব বাড়িতে। তবে কালের বিবর্তনে প্রায় হারিয়ে গেছে ঢেঁকি । আর নতুন প্রজন্মের কাছে ঢেঁকি শব্দটি অতীতের গল্প মাত্র। বাস্তবে এর দেখা মেলা ভার। লালমনিরহাটে দু-এক জায়গায় থাকলেও ব্যবহার তেমন একটা নেই। আশির দশক থেকে ক্রমে বিলুপ্তির পথে ঢেঁকি।
সভ্যতার প্রয়োজনে ঢেঁকির আবির্ভাব ঘটেছিল। আবার গতিময় সভ্যতার যাত্রায় প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে ঢেঁকি বিলুপ্ত হচ্ছে। লালমনিরহাটের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরলে একটি ঢেঁকিরও দেখা মেলে না। আধুনিকতা ছোঁয়ায় সেই ঢেঁকির জায়গা দখল করে নিয়েছে বিদুৎচালিত মেশিন। গ্রামগঞ্জে গড়ে উঠেছে মিনি রাইস মিল। ফলে ঢেঁকির অস্তিত্ব আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। ঢেঁকি ছাটা চাল ও চিড়া আজ আর নেই। এখন আর আগের মতো ঢেঁকিতে ধান ভানার দৃশ্য চোখে পড়ে না। ভোরের স্তব্ধতা ভেঙে শোনা যায় না ঢেঁকির ঢেঁকুর ঢেঁকুর শব্দ। চোখে পড়ে না বিয়ে-শাদি উৎসবে ঢেঁকিছাটা চালের ক্ষীর, পায়েস
রান্না। অথচ আগে ঢেঁকি ছাড়া গ্রাম কল্পনা করা কঠিন ছিল। এক সময় গ্রামের প্রায় সব সভ্রান্ত পরিবারেই ঢেঁকি ছিল। ধান ভাঙা কল আমদানির পর গ্রামাঞ্চল থেকে ঢেঁকির বিলীন হওয়া শুরু হয়। ফলে গ্রামের মানুষ ভুলে গেছেন ঢেঁকিছাটা চালের স্বাদ। যান্ত্রিক সভ্যতা গ্রাস করেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঢেঁকি শিল্পকে।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মাহমুদা খাতুন বলেন, ঢেঁকি আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির এক অপূর্ব নিদর্শন। যখন যন্ত্রচালিত ধান ডানা কল ছিল না তখন ঢেঁকির কদর বেশ ছিল। আর তখনকার সময়ের মানুষের জন্য এই ঢেঁকি আবিষ্কার ছিল যথেষ্ট। এখন এ ধরনের ঢেঁকি আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে হাস্যকর বা অজানা থেকে যেতে পারে। কারণ বর্তমানে ভিনদেশি চাকচিক্য সংস্কৃতি সমাজে প্রবেশ করে আমাদের পুরনো নিজস্ব ঐতিহ্যকে হারিয়ে ফেলচ্ছে। তাই এই হারিয়ে ফেলাকে পাশ কাটিয়ে আমাদের সংস্কৃতিকে লালন করতে হবে। না হয় নতুন প্রজন্ম এই ঐতিহ্য থেকে একবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। সরকারি বা বেসরকারিভাবে আমাদের হারানো ঐতিহ্যগুলো নিয়ে বিশেষ মেলার আয়োজন করলে বর্তমান প্রজন্ম এই হারানো ঐতিহ্যগুলো চিনতে পারবে এবং রক্ষায় এগিয়ে আসবে।
হামমত উল্লাহ ।