October 9, 2024, 7:20 pm
মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, তেতুলিয়া প্রতিনিধিঃ শ্রীমঙ্গলের পর দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া ১১টায় প গড় সরকারি অডিটোরিয়াম চত্বরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে নিলাম কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প গড় সরকারি অডিটোরিয়ামে চা নিলাম কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে প গড় জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলামে সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম সুজন, প গড়-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোজাহারুল হক প্রধান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান।
এছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, প গড় পুলিশ সুপার এস.এম সিরাজুল হুদা পিপিএম, প গড় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও প গড় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আ. হান্নান শেখ, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও প গড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাট, স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যান্ড টি ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. আমিরুল হক খোকন প্রমূখ।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যান্ড টি ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. আমিরুল হক খোকন।
বর্তমানে চায়ের নিলাম কেন্দ্র ঘিরে চা শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে। এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ব্রোকার ও ওয়্যার হাউজ। ইতোমধ্যে ১০টি ব্রোকার হাউজের মধ্যে ৫টিকে এবং আটটি ওয়্যার হাউজের মধ্যে ২টিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনলাইন অ্যাপস তৈরিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, প গড়ে ২০০০ সালে সমতল ভূমিতে ক্ষুদ্র পরিসরে চা চাষ শুরু হয়েছিল। এখনকার সমতলের আবহাওয়া এবং মাটি দার্জিলিং জেলার পাশাপাশি হওয়ায় গত ২৩ বছরে আবাদ বেড়েছে কয়েকগুণ। এক সময়ের পতিত গোচারণ ভূমি এখন ভরে উঠছে সবুজ চায়ের বাগানে। তবে দীর্ঘদিনেও চা নিলাম কেন্দ্র চালু না হওয়ায় পাতার ন্যায্য দাম না পাওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন ক্ষুদ্র চাষিরা। এ ছাড়া এখানকার কারখানায় উৎপাদিত চা বিক্রির জন্য নিতে হতো চট্টগ্রাম আর সিলেটের শ্রীমঙ্গলের নিলাম কেন্দ্রে। এতে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ হতো। অবশেষে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি মিলছে।
চা সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের এই তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্রর চালুর মধ্য দিয়ে উত্তরা লের চা শিল্পের আরও উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনীতি সমৃদ্ধি ঘটবে। দীর্ঘদিন ধরে সমতলের চা চাষিদের মধ্যে তাদের উৎপাদিত চা পাতার দাম না পাওয়ায় যে হতাশা তৈরি হয়েছে তা নিরসন ঘটবে। পাশাপাশি চায়ের পরিবহন খরচ কমে যাবে। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান। ক্ষুদ্র চা চাষিরা নিলাম কেন্দ্রে চায়ের উন্মুক্ত কেনাবেচায় চায়ের কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্যও পাবেন। এতে গোটা উত্তরা লের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন তারা।
উল্লেখ্য, প গড়ে এখন ১০ হাজার ২৪০ একর জমিতে চায়ের আবাদ হচ্ছে। আটটি নিবন্ধিত ও ২০টি অনিবন্ধিত চা বাগানের পাশাপাশি ৭ হাজার ৩৩৮টি ক্ষুদ্রায়তন এবং ১ হাজার ৩৬৮টি ক্ষুদ্র চা বাগান গড়ে উঠেছে। প গড়ের পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলাতেও চা চাষ শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে উত্তরা লের ১২ হাজার ৭৯ দশমিক ৬ একর জমিতে ৩০টি বড় চা বাগান এবং আট হাজারের বেশি ক্ষুদ্র বাগান গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া উৎপাদনে চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অ লে পরিণত হয়েছে। ২০২২ মৌসুমে জেলার ২৫টি কারখানায় ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮১ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, যা দেশের মোট উৎপাদনের ১৯ শতাংশ। এ শিল্পে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম।