January 15, 2025, 11:13 am
হেলাল শেখঃ ঢাকার আশুলিয়ার কাঠগড়ায় পরকীয়ার কারণে ডিস ব্যবসায়ী ইলিম হত্যা মামলার ৩নং আসামী নিহতের স্ত্রী আদালত থেকে জামিনে এসে বাহিরে সুন্দও ভাবে জীবনযাপন করছেন। বহুল আলোচিত ইলিম সরকার হত্যা মামলার আসামী কেমিলির হুমকিতে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে আশুলিয়া থানায় জিডি করেছেন। জনমনে প্রশ্ন নিহতের মা বাবা সঠিক বিচার পাবেতো?।
শনিবার (১২ আগস্ট ২০২৩ইং) আশুলিয়া থানার মামলা সূত্রে জানা গেছে, আশুলিয়া থানাধীন কাঠগড়া সরকার পাড়ার নিহত ইলিম সরকারের পিতা হাজী মোঃ ফজল সরকার (৭০) নিহতের স্ত্রী কেমেলী ও তার বাবা কালু’র বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ও মামলা করেছেন। অন্যদিকে সুলতানা আক্তার কেমেলি কিছুদিন পূর্বে কারাগার থেকে জেল খেটে আদালতের মাধ্যমে জামিনে এসে নিজের অপরাধ আড়াল করতে নিহতের বাবা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন।
জানা গেছে, গত ২৭/০৩/২০২১ইং তারিখ দিবাগত রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে প্রতিদিনের ন্যায় রাতের খাবার খাওয়া শেষে ইলিম সরকার (৩৬), তাহার স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমেলিসহ তাদের পূর্ব ভিটার ঘরের দক্ষিনের বেড-রুমে শুইয়া থাকেন, উত্তরের রুমে তাহাদের পুত্র মোঃ কাইফ সরকার (১০), ও মেয়ে মোছাঃ কাসফিয়া সরকার (০৬) শুইয়া ঘুমাইয়া থাকে। এরপর সুলতানা আক্তার কেমেলি ২৮/০৩/ ২০২১ইং তারিখ সকাল ৮টার দিকে ঘুম থেকে জেগে জরুরী প্রয়োজনে বাহিরে আসেন। এসময় ইলিম সরকারসহ তাহার ছেলে মেয়েরা ঘুমিয়ে ছিলো। পরিবারের সদস্যদের দাবি- অদ্য ২৮ মার্চ ২০২১ইং তারিখ সকাল ১০টার দিকে তাহাদের বাড়িতে ফিরিয়া ইলিম সরকারের রক্তাক্ত দেহ দেখতে পায় তার স্ত্রী, বিষয়টি রহস্যজনক। নিহতের গলার নিচে ১টি, পেটে ১১টি ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কাটা গুরুতর রক্তাক্ত জখম হইয়া মৃত্যু বরণ করিয়াছে মর্মে দেখিতে পাইয়া তখন ডাক চিৎকার করিয়া কান্নাকাটি করিতে থাকায় লোকজন ইলিম সরকারের বাড়িতে গিয়া খাটের উপরে তাহার মৃতদেহ দেখতে পায়। এরপর আশুলিয়া থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়ে দেন।
নিহত ইলিম সরকারের বাবা ফজল সরকার জানান, আমার ছেলে ইলিম সরকারের হত্যার বিচার চেয়ে আমি বাদি হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছি। মামলা নং ৬৮/ ধারা ৩০২/৩৮০/৩৪। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ মামলার আসামী কেমেলি জামিনে এসে ইলিমের ব্যবসা, বাড়ি ঘরসহ সবকিছু দখল করে নিয়েছে এবং আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হত্যার হুমকি দিচ্ছে, তার ভাইদেরকে দিয়ে আমাদের হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়ে আসছে। এখনও তারা বিভিন্ন ভাবে আমাদের পরিবারের লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে। আমার পরিবারের ছোট বড় সবাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আমার ছেলে ইলিম সরকার হত্যার আসামীদের ফাঁসি চাই।
নিহতের স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমেলি বলেন যে, আমার স্বামী হত্যার সাথে আমি জড়িত না, তবুও আমি কারাগারে বন্দী থেকে জেল খাটছি, আমার স্বামী অনেক দিন ধরে অসুস্থ্য ছিলেন, আমার বিয়ের পর থেকে কোনো সুখ শান্তি পাইনি তবুও কোনো অভিযোগ করিনি। তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীর বাড়ি ঘর ব্যবসা বাণিজ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করে এই হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে যারা তাদের কঠিনতম শাস্তি চাই, আমার স্বামী মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া দুই সন্তানকে নিয়ে আমি অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছি। আমার স্বামীর বাড়িতে আমি থাকতে পারিনি, ভয় লাগে আমার। আমাদের দোকানপাট ব্যবসা সব আমার স্বামী ইলিম সরকারের ভাই সেলিম সরকার দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
নিহতের একমাত্র বড় ভাই সেলিম সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই ইলিম সরকারের সাথে আমার কোনো বিবাদ ছিলো না। সে কোথাও গেলে তার ব্যবসা দেখতাম আমি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাইয়ের স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমেলি আমার ভাইকে হত্যা করে এই মামলায় আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলো। তিনি আরও বলেন, আমার ভাইয়ের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তার স্ত্রী পরকীয়া করে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। আমার ভাইয়ের স্ত্রী কেমেলি’র বাবা কালু’র বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা থাকলেও তার কিছুই হচ্ছে না, কারণ, তিনি একজন মামলাবাজ বটে। তার পরিবারের লোকজন মোটেই ভালো না বলে সেলিম দাবী করেন।
এলাকাবাসী জানায়, ইলিম হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে এখনও বিবাদ চলমান, নিহতের স্ত্রী আগে বাড়ি থেকে গিড়ে উত্তরা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন, এখন সাভারের কোথায় থাকে জানিনা। উক্ত নিহত ইলিম সরকার একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন কিন্তু তিনি মাদকের সাথে জড়িত ছিলো বলে সূত্র জানায়, এ ঘটনার দিন সকাল ৮টা থেকে ১০টা, মাত্র দুই ঘন্টা সময়ের মধ্যে ইলিম হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে এবং ওই বাড়িতে সিসি টিভি ক্যামেরা ছিলো, ৬ মাসের বেশি সময় লেগেছে আসামীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে। এরপর স্বামী হত্যা মামলায় জড়িত থাকায় পিবিআই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটে জামিনে এসে আরও শক্তিশালী ভুমিকায় রয়েছে নিহতের স্ত্রী কেমেলি। পুরো বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করছেন এলাকাবাসী ও সচেতন মহল।
শনিবার (১২ আগস্ট ২০২৩ইং) নিহতের শশুর কালু সাহেবের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার মেয়ে কেমেলি’র সাথে অনেকদিন হচ্ছে যোগাযোগ নাই। ইলিম হত্যা মামলার ১নং আসামী পিন্টু ও ২নং আসামী সাইফুল এবং কেমেলি ৩নং আসামী আমার মেয়ে কেমেলি, আমি আদালত থেকে কেমেলিকে জামিন করেছি তার দুইটি বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে, এখন আমার সাথে যোগাযোগ নাই, আমি মরে গেলেও সে যেন আমার দেখতে না আসে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন নিহতের শশুর কালু। উক্ত বিষয়ে ধারাবাহিক ভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে, আশুলিয়ায় কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাস, পরকীয়া, নেট ও ডিস ব্যবসা নিয়ে অনেক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।