October 4, 2023, 12:58 am
স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : এবরের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের অধীনে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার লখন্ডা জিরাতলি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১২জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে কোন শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। ফলে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অমনোযোগী ও অভিভাবকদের উদাসিনতার কারনে এমনিটি হয়েছে বলে অভিযোগ স্কুল কর্তপক্ষ ও এলাকাবাসীর। আর শিক্ষার্থীদের অভিযোগ নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া ও শিক্ষকদের গাফিলতির কারনে এমন ফলাফল এসেছে। তবে জেলা প্রশাসন বলছে তদন্ত করে স্কুলটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জানাগেছে, ১৯৭৩ সালে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার লখন্ডা জীরাতলি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এ স্কুলটিতে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক। স্কুলটিতে রয়েছে ৮ জন শিক্ষক। গত বছর প্রথমবারের মতো উচ্চ মাধ্যমিক পাঠদানের অনুমতি দিলে পার্শ্ববর্তী অন্য একটি স্কুল থেকে রেজিষ্ট্রেশন করে ১৪ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরিক্ষায় অংশগ্রহন করে ৯ জন পাস করে।
তবে এ বছর প্রথমবারের মতো নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ১২ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে। তবে ২৮ জুলাই (শুক্রবার) ফল প্রকাশের পর দেখা যায় স্কুলটি থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী ১২ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে স্কুলটিতে নিয়মিত পাঠদান হয় না। নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল ছুটি দিয়ে শিক্ষকেরা বাড়িতে চলে যায়। তবে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অমনযোগী, মোবাইলে আসক্ত এবং অভিভাবকদের উদাসীনার কারনে এমন ফলাফল হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসী ও স্কুল কর্তৃপক্ষের।
তবে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা। টিনের বেড়ার দুইটটি দরজা রয়েছে। স্কুলটির গেট বন্ধ, গেটে ঝুলানো রয়েছে তালা। ফলে স্কুলে কোন শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনের কারনে কোন শিক্ষক বা অফিস সহকারীদের পাওয়া যায়নি। তবে কিছু সময় পর ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক তন্ময় মন্ডলকে উত্তর পাশের বাড়ি থেকে লোকের মাধ্যমে খবর দিয়ে আনলে কিছু সময় পর সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর সে সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়।
ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ১০টায় থাকলেও শিক্ষকরা আসেন সাড়ে ১১ টায়। আবার আড়াইটা বাজলেই ছুটি দিয়ে দেন তিনটার মধ্যে তারা বিদ্যালয় বন্ধ করে চলে যান। এলাকার লোক এ বিষয় নিয়ে কোন কথা বলে না কারণ এলাকা ও স্কুলটির বদনাম হবে তাই। কোন শিক্ষকই ২০ থেকে ২৫ মিনিট এর বেশি ক্লাস নেন না।
দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অথরা মন্ডল বলেন, ঢাকায় আন্দোলন হচ্ছিল এ জন্য বিদ্যালয় কোন স্যার আসেননি। বিদ্যালয়ের ছুটি দিয়েছেন। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১২ জন অংশগ্রহণ করে সকলেই অকৃতকার্য হয়েছে এ বিষয়ে কোন স্যার আমাদের কিছুই বলেননি।
ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য তারাপদ মন্ডল বলেন, বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ার কয়েকটি কারন রয়েছে। এর মধ্যে একটি অন্যতম কারন হলো আমাদের গ্রামের পাশের তিনটি গ্রামের তিনটি ভালো মেধা সম্পন্ন বিদ্যালয় রয়েছে শিক্ষার্থীগুলো সেখানেই চলে যায়। কম মেধাবী শিক্ষার্থী গুলো এখানেই ভর্তি হয়। তাছাড়া আমাদের এখানকার শিক্ষার্থী অভিভাবকদের অবহেলা রয়েছে। তারা জানেনা তার শিক্ষার্থী কখন কোথায় যাচ্ছে ঠিকমতো লেখাপড়া করছে কিনা কোন খোঁজ খবর রাখে না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমেন্দ্রনাথ টিকাদার বলেন, ১২জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে একজনও পাশ পারেনি এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি কারো সামনেই কথা বলতে পারছি না। আসলে আমাদের কোথায় দুর্বলতা এ বিষয়গুলো আমি খুঁজে পাচ্ছি না এজন্য আজ বিদ্যালয়ে সভা আহ্বান করা হয়েছিল কিন্তু সেখানে কেউই উপস্থিত হয়নি দুই একজন বাদে।
ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হরিপদ রায় বলেন, বিদ্যালয় থেকে এ বছর ১২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল একজনও পাস করতে পারল না এটা খুবই দুঃখজনক। তবে শিক্ষকদের থেকে শিক্ষার্থীদেরই দোষ বেশি। নির্বাচনী পরীক্ষায় কোন অনিয়ম হয়েছে কি না সেটা আমার জানা নেই। এটাই আমাদের বিদ্যালয় থেকে প্রথম পরীক্ষা, তাই হয়তো একটু সমস্যা হয়েছে আগামীতে এই সমস্যাগুলো থাকবে না।
এ বিষয়ে মুকসুদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: শাহাদাত আলী মোল্লা বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। খুবই দুঃখজনক একটা বিষয়। স্কুলটিতে শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করলো। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে শোকজ করা হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) গোলাম কবীর বলেন, তবে স্কুলটির এমন ফলাফলের কারণ তদন্ত করা হবে। এখানে শিক্ষক না কি শিক্ষার্থীদের গাফলতি রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।