July 30, 2025, 5:33 pm
আরিফ রববানী ময়মনসিংহ।।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার চার বছরে নান্দনিক ময়মনসিংহ গড়তে অক্লান্ত মুখ মসিক মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু। ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর স্থাপিত ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন, দেশের সর্বকনিষ্ঠ সিটি কর্পোরেশন। ২০১৯ সালের মে মাসের নির্বাচনে সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত পরিষদ ২৭ মে শপথ গ্রহণ করে এবং এ পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ২০ শে জুন। সে হিসাব অনুযায়ী নির্বাচিত পরিষদ তার যাত্রার ৪ বছর পূর্ণ করেছে।
৪ বছরের যাত্রায় বিলুপ্ত পৌরসভার জনবল, দূর্বল অবকাঠামো আর নানা সীমাবদ্ধতা নিয়েই উন্নয়ন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে নির্বাচিত পরিষদ। বর্তমানে দেশের নবীনতম এ সিটি কর্পোরেশনের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের মূল সড়ক, অলি-গলিতে চলছে সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণকাজ। যা সম্পন্ন হলে সড়কে দূর হবে ভোগান্তি, হবেনা কোন জলাবদ্ধতা।
মসিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের সড়ক-ড্রেনেজ অবকাঠামো নির্মাণ ও নাগিরক সেবা উন্নতকরণে ১৫৭৫ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার কাজ চলমান আছে। এতে তৈরি হচ্ছে ৯০ কি:মি: বিসি রোড, ১৬১ কি:মি: আরসিসি রোড, ১.৬১ কি:মি: সিসি রোড, ১৭৯ কি:মি: ড্রেন, ৯.৬৬ কি:মি: পাইপ ড্রেন, ১০ কি:মি: ফুটপাত। এছাড়াও তৈরি করা হচ্ছে কালভার্টসহ অন্যান্য অবকাঠামো। পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য প্রকল্প থেকে ৯২ কি:মি: নতুন রাস্তা এবং ৪৫ কি:মি: ড্রেনের কাজ অনেক আগেই সম্পন্ন করেছে।
সড়ক ও ড্রেনেজ উন্নয়নঃ
ব্যাপক এই উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে পরিবর্তনটা ইতিমধ্যে চোখে পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত ২২ থেকে ৩৩ নং ওয়ার্ড যেগুলো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হয়েছে সেগুলোতে প্রশস্ত রাস্তা ও ড্রেন দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রত্যন্ত অনেক ওয়ার্ডে যেখানে যাওয়ায় ছিল কষ্টসাধ্য তা এখন উন্নয়নের যাদুকাঠির ছোঁয়ায় বদলে গেছে। আর এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। শহরের অন্যতম সমস্যা জলবদ্ধতা নিরসনে মিন্টু কলেজ থেকে বিপিন পার্ক-স্টেশন রোড থেকে থানাঘাট পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ ড্রেন নির্মাণ, কাশবন আবাসিক এলাকার ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নির্মাণ, নাটকঘরলেন থেকে ডিবি রোড হয়ে সেহড়া খাল পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপড্রেন ইত্যাদি নির্মাণের ফলে মূলশহরের অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেকটাই নিরসন হয়েছে। বর্তমানে চলমান শহরের ভেতরে নতুন বাজার রেল ক্রসিং থেকে ব্যাটবল চত্বর পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ ড্রেনের কাজ একটি ভালো উদ্যোগ বলে মনে করছে নগরবাসী। এতে করে শহরের খালগুলো থেকে পানি বের হওয়াটা আরও সহজতর হবে, যা সমগ্রিক জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাবে।
আলোকিত নগরীঃ
শহর আলোকিতকরণেও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখাতে সক্ষম হয়েছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন। নগরবাসী যেন রাত্রিকালে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সেই জন্য “ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন সড়কে সড়কবাতি স্থাপন প্রকল্পের আওতায়” ৩৩ টি ওয়ার্ডে প্রায় ১৭১ কিলোমিটার সড়কে পোলসহ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এনার্জি, আধুনিক এলইডি ও নৌকাকৃতির সড়কবাতি স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে অন্ধকার ভেদ করে আলো প্রজ্জ্বলিত হয়েছে পুরো নগরী জুড়ে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ
পৌরসভা থেকে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে উত্তোরণের পর যে বিষয়টি সকলের নজর কেড়েছে তা হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বিলুপ্ত পৌরসভার জনবল নিয়েও প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মেট্রিকটন বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন। চলছে রাত্রীকালীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংগ্রহ-অপসারণ। এছাড়া, বাসা-বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহে ক্লিনসিটি নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে বর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রিজম ফাউন্ডেশন লিমিটেডের সহযোগিতায় নির্মাণ করা হচ্ছে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট।
এছাড়াও, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রকল্পটিও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সফলতার চার বছর নিয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু স্বাধীনমতকে জানান, নগর উন্নয়নে আরও অধিক অগ্রগতি সম্ভব ছিল, কিন্তু করোনার অভিঘাত এবং রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি না হলে নগর উন্নয়নে আরও কাজ করা সম্ভব হত। তবে, করোনা পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট সকলেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে করোনা মোকাবেলায় মানুষকে নিরাপদে রাখা এবং মানুষের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে যে কাজ করেছেন তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। সরকারী ও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ১৩২৭ টন চাল ও ৬৫ লক্ষ টাকার খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে লক্ষাধিক খাদ্য সমাগ্রী প্যাকেট অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করেছি। করোনা টিকা প্রদান, কোভিড টিকার রেজিস্ট্রেশন সহায়তা, এলাকা ও গ্রুপ ভিত্তিক টিকা ক্যাম্পেইন ইত্যাদি কারণে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষকে ২ ডোজ টিকা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ২০২২ সালে স্থাপন করা হয়েছে একটি নগর মাতৃসদন এবং তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। এসব কেন্দ্র থেকে মা, শিশুসহ সাধারণ জনগণ স্বল্প খরচে বা বিনামূ্ল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। মশক নিধনে হটস্পট চিহ্নিতকরণ এবং নিয়মিত ক্রাশ প্রোগ্রামের ফলে সিটিতে এখনও স্থানীয়ভাবে এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ভিটামিন- এ প্ল্যাস ক্যাম্পেইন, ইপিআই কার্যক্রম, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদিতেও মসিকের রয়েছে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সফলতা।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নঃ
প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে মসিকের প্রচেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মত। ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১৯২ জনকে বিউটি পার্লার, কম্পিউটার, ড্রাইভিং, মোবাইল সার্ভিসিং ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ, ২৫৭৬ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বৃত্তি, ১৪৭৬ জনকে পুষ্টি সহায়তা, ৩১২ জন কিশোরীকে স্বাস্থ্য-পুষ্টি পরামর্শ ও পুষ্টি উপকরণ প্রদান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য নলকূপ, রোড লাইট, ড্রেন, টয়লেট, সেপ্টিট্যাংক ইত্যাদি নির্মাণের মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান করেছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন।
স্থাপত্যশৈলীঃ
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু শম্ভুগঞ্জ ব্রিজের কাছে স্থাপন করেছেন জয়বাংলা চত্বর। চত্বরটি মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্মরণে এক অনন্য স্থাপত্যে পরিণত হয়েছে। এছাড়া, টাউনহলে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু গ্যালারি। যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ছবি, ডকুমেন্টারি, বানী ইত্যাদি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।
ডিজিটালসেবাঃ
সিটি কর্পোরেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নাগরিকসেবার মানোন্নয়নে মসিকের প্রচেষ্টাও ছিল বেশ লক্ষণীয়। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইতোমধ্যে বেশকিছু সেবাকে অনলাইনে নেওয়া হয়েছে, সিটি কর্পোরেশনকে তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত করে জন্মনিবন্ধন, মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কাজগুলোর বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। এতে নাগরিকদের সময় ও শ্রম সাশ্রয় হচ্ছে। উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নিয়ে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু আরো জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্নে ময়মনসিংহবাসীকে সিটি কর্পোরেশন উপহার দিয়েছেন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করছি।
করোনা মহামরি ও বৈশ্বিক সংকট আমাদের গতিকে কিছুটা ধীর করে দিলেও আমরা আমাদের সর্বস্ব দিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। একটি আধুনিক ও টেকসই নগরী করতে একটি বাস ও ট্রাক স্ট্যান্ড, শিশু পার্ক, নগর ভবন, গোরস্থান, শশ্মানঘাট, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণে কাজ করছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন। এসব সকল উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে যেমন বদলে যাবে নগরবাসীর জীবনমান, ঠিক তেমনি নগরবাসীর প্রত্যাশার অনেকাংশই পূরণ হবে বলে আশা করছি।