January 15, 2025, 10:59 am
মো.আনোয়ার হোসেন , স্বরূপকাঠি প্রতিনিধি//
স্বরূপকাঠিতে মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস নির্মানে চরম অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কার্যাদেশ পাওয়ার পর আড়াই বছরেও শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। অধিকাংশ ঠিকাদার প্রশাসনের দেওয়া নির্দেশকেও মানছেন না। মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া প্রথম পর্যায়ে ১২ টি ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪৭ টি উপজেলায় মোট ৫৯ টি বীর নিবাস নির্মানের কাজ চলমান। এর মধ্যে একটি নিবাসের কাজও সমাপ্ত হয়নি। প্রশাসনকে বার বার জানালেও কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না বলে জানালেন ভুক্তভোগীরা। কেউ নিজের জীর্ন কুটিরটি ভেঙে ছাপড়া ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন যা ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অনেকে ভাড়া করা বাড়ীতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্ষা মৌসুম প্রায় সমাগত। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ গুলো শেষ না হলে ৫৯ টি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বিপদের সম্মুখীন হওয়ার আশংকা করছেন।
স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ) উপজেলার ওই প্রকল্পের সদস্য সচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মানস ঘোষ জানান, প্রথম পর্যায়ে ১২ টি কাজের জন্য লুনা এন্টাপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী শেষ করার কথা ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর। এবং দ্বিতীয় পর্বের ৪৭ টি বীর নিবাস নির্মানের জন্য গুচ্ছ প্রকল্পের মাধ্যমে ৭ টি প্যাকেজ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। যা ২০২২ সালের ৩১ জুলাই এর মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিলের মধ্যে একটি বাড়ীর কাজও শেষ করা হয়নি।
সরেজমিনে গেলে সুটিয়াকাঠি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকরুল আমীন(কালু)‘র স্ত্রী আসমা বেগম বলেন, পুরানো ঘরখানা ভেঙে বাড়ীর এক কোনে ছাপড়া ঘর করে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে আড়াই বছর ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রথম থেকেই ঠিকাদার নিম্ন মানের ইট খোয়া বালু এনে কাজ শুরু করলে উপজেলা প্রশাসনকে জানালে তৎকালীন ইউএনও মো. মোশারেফ হোসেন তা সরিয়ে ভাল মালামাল আনার নির্দেশ দেন। ঠিকারদার ওই ইট খোয়া সরিয়ে কিছুটা ভাল ইট মিশিয়ে পুনরায় ওই মালামাল এনে কাজ শুরু করেন।
ছাদ বাঁকা ও উচু নিচু, পানি জমে থাকে। জমাট হয়ে যাওয়া সিমেন্ট গুড়া করে ছাদ ঢালাইয়ে ব্যবহার করেছে। দেওয়ালে করা প্লাষ্টার সামান্য ঘসা দিলে ঝরে পড়ে। বিষয়টি বর্তমান ইউএনও মো. মাহাবুব উল্লাহ মজুমদারকে জানালে তিনি সরেজমিনে গিয়ে ওইসব মালামাল অপসারন করার নির্দেশ দেন। ঠিকাদারের লোকজন শুধু কাঠের দরজা গুলে নিয়ে গেছে। তাও দুই মাস গত হলেও আজাবদি তারা আর কাজের স্থলে আসেননি।
স্বরূপকাঠি ইউনিয়নের সুলতানপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালেক জানান নিম্ন মানের মালামাল দিয়ে কাজ করায় বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। দরজার কাঠ অত্যন্ত নিম্ন মানের। বীর মুক্তিযোদ্ধা ইছাহাক আলীর ছেলে বাদশা মিয়া বলেন. ঠিকাদার পরিবহন সহ বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। অপারগতা প্রকাশ করলে নিজকে জেলার সরকার দলীয় নেতা বলে হুমকি দিয়ে দীর্ঘদিন কাজ ফেলে রাখেন।
ফলে সব গাথুনিতে শেওলা ধরে যায় যা আমরা ঘসে পরিস্কার করেছি। দেওয়ালে পানি দিয়েছি। ওই ভবনে বিভিন্ন স্থানে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। দুই পর্বে ৫৯ টি প্রকল্পের সবগুলোর অবস্থাই এক। শুরু থেকেই নিম্ন মানের মালামাল নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। অত্যান্ত মন্তর গতিতে কেউ সামান্য দেওয়াল গেথে আবার কেউ ছাদ ঢালাই দিয়ে কাজ ফেলে রেখেছেন।
পূর্ব অলংকারকাঠী এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ছোহরাব হোসেন বলেন, প্রথম থেকেই ঠিকাদার অত্যন্ত নিম্ন মানের ইট-খোয়া এনে কাজ শুরু করেন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডাদের জানালে তারা বার বার চেষ্টা করেও ঠিকাদারকে দিয়ে সঠিক কাজ করাতে পারেন নি। সাবেক ইউএনও ও বর্তমান ইউএনও কয়েকবার সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। মালামালের নমুনা আমি মন্ত্রনালয়েও পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, সরকার বীর নিবাস দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের ভাল ভাবে বসবাসের জন্য। কিন্তু তা এখন অনেকটা মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে।
ঘর বরাদ্ধ পাওয়া সুটিয়াকাঠির বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ, গুয়ারেখার বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুর রবের ছেলে রাহাত, কামারকাঠির বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সত্তার, বলেন সবগুলো কাজের মান খুবই খারাপ, কোথাও কোথাও ঠিকাদার কেরিং করার টাকা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে নিয়েছেন।
জগন্নাথকাঠী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর জানান, ঠিকাদার মালামাল এনে বাড়ী থেকে দুরবর্তি স্থানে খালের পাড়ে ফেলে বলে এগুলো কাজের স্থানে নিয়ে দিতে হবে। সকলের একই কথা ঠিকাদারগন নামকা ওয়াস্তে কাজ করে বিল তুলে নিতে চান। শোনাযায় কিছু কাজ করেই তারা চলতি বিল নেওয়ার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন।
তারা বলেন, সরকার যদি ভ্যাট আয়কর কেটে প্রশাসনের নজরদারীতে উপকারভোগীদের দ্বারা কাজ করাতেন তাহলে আর কিছু না হোক সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় হত না। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধারা শংকামুক্ত নিরাপদে বসবাসের সুযোগ পেত।
অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্পের সদস্য সচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মানস ঘোষ বলেন, অনেক প্রকল্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। অনেকটা সংশোধন করিয়েছি। প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ না করা হলে কোন অবস্থাতেই বিল দেওয়া হবেনা।
এবিষয়ে ইউএনও মো. মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার বলেন, আমি নতুন এসেছি। অভিযোগ পেয়ে ইতোমধ্যে অনেকগুলো প্রকল্পই পরিদর্শন করে সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছি। সবগুলো প্রকল্পই সরেজমিনে পরিদর্শন করে সঠিক কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।###