September 9, 2024, 5:38 pm
হেলাল শেখঃ ঢাকার আশুলিয়ায় দুইদিনে ২জনকে হত্যা। ইয়ারপুর ইউনিয়ন ও ধামসোনা ইউনিয়নের ভাদাইল পাবনারটেক রূপায়ন আবাসন-১ এর মাঠের ভেতর থেকে এক গাড়ি চালকের লাশ উদ্ধার ও আশুলিয়া ইউনিয়নের কাঠগড়া একটি বাড়ি থেকে এক পোশাক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেছেন আশুলিয়া থানা পুলিশ।
বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে (২৩-০৩-২০২৩) ঢাকার আশুলিয়ার কাঠগড়া নয়াপাড়া মফিজুল মোল্লা (৩০) নামের এক পোশাক শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। তিনি ৪-৫জন সহকর্মী নিয়ে একটি একতলা ফাঁকা বাড়িতে ভাড়া থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। এ ঘটনা গভীর রাতে পাশের বাড়ির মালিক কামরুল হাসান শাকিল (৩৮) চিৎকার দিয়ে বলেন, তার বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। এ সময় মফিজুল একা তার রুম থেকে বাহিরে আসলে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা, এরপর আহত মফিজুল মোল্লার সাথে থাকা সহকর্মীরা পাশের রুমের লোকজন তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। বিভিন্ন লোকজন বলছেন যে, ডাকাতির ঘটনা নাটকীয়, আশুলিয়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখাতে ডাকাতির নাটক সাজানো হতে পারে। অনেকেই বলেন, মফিজুল কন্যা রাশির পুরুষ, সে একাধিক বিয়ে করেছে, তার সাথে কোনো নারীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক থাকায় ওই নারীর স্বামী বা ভাই বন্ধুরা এই হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটাতে পারে।
নিহত মফিজুল মোল্লার ভাড়া বাড়ির মালিক মোঃ মোফাজ্জল হোসেন মাদবর বলেন, মফিজুল খুব ভালো ছেলে তার ব্যবহার খুব সুন্দর। মফিজুল মোল্লার একটি মটরসাইকেল আমার বাড়িতে রাখতেন, ঘটনার সময় তার পাশের রুমের লোকজনকে ওই মটরসাইকেল দিয়ে ভিকটিমকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি দাবী করছেন। এরকম ঘটনায় বাড়ির মালিক তিনি কেন তার ভাড়াটিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে যায়নি। দুই বছর হলো একই বাড়িতে ভাড়া ছিলেন মফিজুল মোল্লা।
এ বিষয়ে পাশের বাড়ির মালিক স্থানীয় হাজী আব্দুল করিম মুন্সীর ছেলে কামরুল হাসান শাকিল বলেন, আমার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় মফিজুল মোল্লা নামের পোশাক শ্রমিক ডাকাতদের গুলিতে নিহত হয়েছেন এটা দুঃখজনক। এটি ডাকাতির ঘটনা হলে তার আলামত থাকার কথা কিন্তু শুধু একজনকে গুলি করে পালিয়ে গেছে ডাকাত দল এটা রহস্যজনক বলে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। অন্যদিকে এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের কাছে জানতে চাইলে তারা বলছেন অন্য কথা, মফিজুল একাধিক বিয়ে করেছেন, তাকে সবাই পছন্দ করতো, সে কন্যা রাশির পুরুষ মানুষ ছিলেন। অনেকেই ধারণা করছেন, ওই বাড়ির আশপাশে কোনো নারীর সাথে পরকীয়া প্রেম সম্পর্ক থাকায় হয়তো তাকে হত্যা করেছে, ডাকাতির ঘটনা নাটকীয়।
গতকাল বুধবার (২২ মার্চ ২০২৩ইং) সকাল ৭টার দিকে ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়া রূপায়ন আবাসন-১এর উত্তর পাশে মাঠের আব্দুর রহমানের ছেলে মোঃ আতিকুর রহমান আতিক (৫২) এর লাশ উদ্ধার করেছেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ভজন চন্দ্র রায় এর সঙ্গিয় ফোর্স। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, খুব সকালে প্রতিদিনের মতো লোকজন রূপায়ন মাঠে হাটতে আসেন, লোকজন সেখানে এসে একটি লাশ দেখতে পেয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশকে জানায়, এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই লাশ উদ্ধার করেন। জানা গেছে, নিহতের গ্রামের বাড়ি রংপুর থেকে অনেক বছর আগে আশুলিয়ার ভাদাইলের পাবনারটেক এসে জমি কিনে বাড়ি করে বসবাস করতেন।
নিহতের স্ত্রী মোছাঃ দুলালী বেগম পোশাক শ্রমিকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে একজন ব্যক্তি মোবাইল ফোনে কল করে ডেকে নিয়ে যায়, তারপর আর আতিক বাসায় ফেরেনি। সকালে লোকজন বাড়িতে খবর দেয় তার স্বামীর লাশ পড়ে আছে রূপায়ন মাঠের ভেতরে। কে বা কারা তার স্বামীকে হত্যা করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কেই তা জানিনা, তবে নিহতের ছেলে ও মেয়ে বলছিলেন যে, বাড়ির পাশে চায়ের দোকানে আড্ডা দিতো আতিক, সেখানে লোকজনের সাথে মাঝে মধ্যে কথা কাটাকাটি ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
এলাকাবাসী জানায়, উক্ত আশুলিয়ার রূপায়ন আবাসন-১এর মাঠের ভেতরে এবং আশপাশের এলাকা পাবনারটেক, জামগড়া, মনির মার্কেট ও ভাদাইল ক্রাইম জোন এলাকা, এই এলাকায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংঘটিত চলমান রয়েছে। গত ৪-৫দিন আগে ভাদাইলে একটি ট্রাক থেকে ১৩ টন রড ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে, ছিনতাই হওয়া ১৩ টন রডের মধ্যে ১২ টন রড উদ্ধার হলেও এ ঘটনায় ছিনতাইকারী চক্রের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ভজন চন্দ্র রায় গণমাধ্যমকে বলেন, আশুলিয়ার ভাদাইলে ১৩ টন রড ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে, ১২টন রড উদ্ধার করা হয়েছে, এই ছিনতাইয়ের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। সেই সাথে রূপায়ন আবাসন-১ এর মাঠে গাড়ি চালক আতিক এর হত্যাকান্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে কিভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে, তদন্ত চলছে।
উক্ত ব্যাপারে আশুলিয়া থানা পুলিশ ও র্যাব জানায়, আশুলিয়ার জামগড়া রূপায়ন আবাসন-১ এর মাঠ থেকে যে একজন গাড়ি চালকের লাশ উদ্ধার ও আশুলিয়ার কাঠগড়া নয়াপাড়া গুলি করে পোশাক কারখানার যে শ্রমিককে হত্যা করেছে, দুইটি পৃথক হত্যাকা-ের বিষয়ে তদন্ত চলছে, কি কারণে এই পৃথক দুইজনকে হত্যা করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ ও র্যাব জানায়, অপরাধী সে যেই হোক না কেন তাদেরকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।